সোমবার, ৩১ মার্চ, ২০২৫

পরনিন্দা না করি

জামিল আহমদ

প্রকাশিত: মার্চ ৭, ২০২৫, ১০:৪৪ এএম

পরনিন্দা না করি

ছবি: সংগৃহীত

সমাজে যেসব পাপের প্রচলন সবচেয়ে বেশি, তার মধ্যে গিবত বা পরনিন্দা শীর্ষস্থানীয়। এই পাপ এমন এক নীরব ঘাতক, যা বান্দার অজান্তেই তার নেকির ভান্ডার নিঃশেষ করে দেয় এবং তাকে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করে ছাড়ে। পরনিন্দা মানুষের ভেতরকার শান্তি বিনষ্টকারী এক ঘৃণ্য অপরাধ। পবিত্র কোরআনুল কারিমে এটাকে নিজের মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার মতো অরুচিকর ঘৃণিত কাজের সঙ্গে তুলনা করেছে। আর হাদিসে ব্যভিচারের চেয়ে মারাত্মক অপরাধ বলা হয়েছে। ইসলামী শরিয়তে হারাম ও কবিরা গুনাহ। হাদিসের ভাষ্যমতে, ‘যারা অগ্র-পশ্চাতে অন্যের দোষ বলে বেড়ায়, তাদের জন্য রয়েছে ধ্বংসের দুঃসংবাদ।’ (সহিহ মুসলিম)।

আমাদের সমাজের প্রায় মানুষ গিবতকে খুবই সাধারণ বিষয় ভেবে নিচ্ছি। একে অপরের দোষচর্চাকে কোনোভাবেই দোষনীয় মনেই করছি না। ফলে বর্জনের কোনো প্রচেষ্টাও নেই। করার মতো এটা শোনাও গুনাহের কাজ। তাই গিবতের ভয়াবহতা থেকে বাঁচতে গিবতকারীর গিবতে অংশগ্রহণ না করা। পারলে সরাসরি বলে দেওয়া, আপনি করছেন দুঃখিত এই গিবত আমি শুনতে পারব না।

পরনিন্দা মুমিনের অসৎ গুণ। সামাজিক শান্তি, শ্রদ্ধাবোধকে নষ্ট করে। এ ব্যাপারে কোরআন নির্দেশ করছে, আর তোমরা একে অন্যের গোপনীয় বিষয় সন্ধান করো না এবং একে অপরের পশ্চাতে নিন্দা করো না। তোমাদের মধ্যে কি কেউ তার মৃত ভায়ের গোশত খেতে চাইবে? বস্তুত তোমরা তো একে ঘৃণাই করো। তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। আল্লাহ তাওবা গ্রহণকারী, পরম দয়ালু। (হুজরাত, আয়াত : ১২)

গিবত কেবল নিন্দুকের ক্ষতি আর অকল্যাণকেই ডেকে আনে। গিবতকারীর নেক আমল আল্লাহর কাছে পৌঁছে না। তার নেক আমল মুছে যায় ও আমলনামায় পাপাচার বাড়তে থাকে। কিয়ামতের দিন তার হিসাবকে কঠিন করে দিবে এই গিবত এবং ভাইয়ের গোশত খেতে বাধ্য করবে। গীবতের ক্ষতি হলো, এর দ্বারা বিবাদ ও বিভেদ হয়। পরস্পর বিবাদের কারণে ঝগড়া-লড়াই, মামলা-মোকদ্দমা সবকিছু হতে থাকে। গিবত করার সঙ্গে সঙ্গে অন্তরে এমন অন্ধকার সৃষ্টি হয়, যার দ্বারা মানসিক কষ্ট হয়। যার গিবত করা হয়েছে, সে যদি এটা শোনে, তা হলে গিবত কারীকে অপমান ও লাঞ্ছিত করে। যদি ক্ষমতা থাকে, তা হলে খারাপভাবে তার থেকে প্রতিশোধ নিয়ে ছাড়ে।

গিবত কারীকে আল্লাহ তায়ালা মাফ করবেন না, যতক্ষণ না যার গিবত করা হয়েছে সে মাফ না করবে। যার গিবত করা হয়েছে আগে তার থেকে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে। যার গিবত  করা হয়েছে, সে যদি আখেরাতে গিবতকারীর সওয়াব নিয়ে ক্ষমা করতে চায়, তা হলে তাকে দিয়ে দিতে হবে। আজকাল গিবত  জোরেসোরে চলছে। অথচ এটা এমন বদঅভ্যাস, যার দ্বারা উভয় জগতে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়। গিবতকারী ভীতু হয়ে থাকে। যে কারণে পিছে মন্দ বলে বেড়ায়। গিবতের দ্বারা চেহারার নূর চলে যায়। এ ধরনের লোককে মানুষ অসম্মানের দৃষ্টিতে দেখে।

ইমাম গাজালি (রহ.) বলেছেন, গিবতের পাপ থেকে দুই উপায়ে মুক্তি লাভ সম্ভব। এক. আন্তরিক তাওবাহ। দুই. নিন্দুক তার নিজের শঠতা ও নীচতা প্রকাশ করে নিন্দিত মানুষের কাছে ক্ষমা চাওয়া।

গীবতের মতো মারাত্মক গুনাহকে সচেতনভাবেই আমাদের এড়িয়ে চলা উচিত। এর উপকারিতাও নানাবিধ। আত্মার প্রশান্তির পাশাপাশি সবচেয়ে বড় হলো কবীরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা যায়। আল্লাহ আমাদের পরিচ্ছন্ন জীবন দান করুন। নিন্দার পথ পরিহার করাকে সহজ করুন।

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী
 

আরবি/এসআর

Link copied!