পবিত্র রমজান মাসের মূল উদ্দেশ্য হলো তাকওয়া অর্জন। কুরআনে বলা হয়েছে— "তোমাদের ওপর সিয়াম ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যাতে তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করতে পারো।" (সুরা আল-বাকারা: ১৮৩)।
রমজান মাসে সাধারণ মুসলমানরা তাকওয়া অর্জনের একটি বিশেষ সুযোগ পান। কারণ, এই মাসে আল্লাহ শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে দেন যাতে মানুষ ইবাদতের মাধ্যমে তাঁর নৈকট্য অর্জন করতে পারে এবং দুনিয়া ও আখিরাতে সফলতা লাভ করতে পারে।
আল্লাহ যেহেতু এই মাসকে তাকওয়া অর্জনের জন্য নির্ধারণ করেছেন, তাই রোজাদারকে সঠিক পদ্ধতিতে রোজা রেখে পূর্ণাঙ্গ তাকওয়া অর্জনের চেষ্টা করতে হবে। রোজার প্রকৃত হক আদায় করতে হলে কিছু বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। বিশেষত, রোজা পালনের জন্য চারটি শর্ত অবশ্যই মানতে হবে:
# পানাহার ত্যাগ করা।
# পান করা থেকে বিরত থাকা।
# যৌন সম্ভোগ ও অনুরূপ নিষিদ্ধ কাজ থেকে দূরে থাকা।
# নিয়তসহ এসব থেকে বিরত থাকা।
এই শর্তগুলো পূরণ না করলে রোজা সম্পূর্ণ হবে না। যদি কেউ সারাদিন না খেয়ে থাকে কিন্তু নিয়ত না করে তাহলে সেটি রোজা হিসেবে গণ্য হবে না। একইভাবে কেউ যদি শুধু পানাহার ত্যাগ করে কিন্তু অন্যান্য শর্ত মানে না তাহলেও তার রোজা সহিহ হবে না।
বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ রোজার বিধি-বিধান সম্পর্কে সম্পূর্ণ সচেতন নয়। অনেকেই মনে করেন, শুধুমাত্র উপবাস থাকলেই রোজা পূর্ণ হয়ে যায়। ফলে তারা রোজা রাখলেও হারাম ও গুনাহের কাজ থেকে বিরত থাকেন না।
রোজা রেখে অনেকে মিথ্যা কথা বলেন, অশ্লীল কথা বলেন, অযথা বাক্যালাপ করেন, চোখের গুনাহে লিপ্ত হন, গান-সিনেমা দেখেন, গিবত-পরনিন্দা করেন, চোগলখুরি করেন এবং অন্যের হক নষ্ট করেন।
এ ছাড়াও অনেকে রোজা রাখলেও নামাজ আদায়ের ব্যাপারে গাফিলতি করেন। যারা সারাদিন উপবাস থাকলেও ফরজ নামাজগুলো ঠিকমতো আদায় করেন না তাদের রোজাও সহিহ হবে না।
অপরদিকে রোজার সঙ্গে নামাজও ফরজ। যা পরিপূর্ণভাবে আদায় করা না হলে সিয়ামের উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়ে যাবে। এ প্রসঙ্গে হাদিস শরিফে উল্লেখ রয়েছে— সাহাবি আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, নবী করিম (সা.) বলেছেনঃ "যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা, অন্যায় কাজ, ক্রোধ ও অজ্ঞতাসুলভ আচরণ পরিত্যাগ করতে পারে না তার পানাহার ত্যাগ করাতে আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।" (বুখারি)
রাসুল (সা.) আরও বলেছেনঃ "যে ব্যক্তি রমজান মাস পেল, কিন্তু এই মাসে তাকে ক্ষমা করা হলো না সে আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত ও বিতাড়িত।" (ইবনে হিব্বান)
তাই আসুন আমরা রহমত, মাগফেরাত ও নাজাতের এই মাসে রোজার শর্তগুলো পরিপূর্ণভাবে পালন করি। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রোজার সঙ্গে সব গুনাহ থেকে বিরত থেকে যথাযথ ইবাদত করে আমাদের পূর্ববর্তী পাপসমূহের ক্ষমা লাভ করি।
আপনার মতামত লিখুন :