ঢাকা রবিবার, ০২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি’মাল ওয়াকিল: বিস্তারিত আলোচনা ও ফজিলত

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২, ২০২৫, ০৬:২৫ পিএম

হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি’মাল ওয়াকিল: বিস্তারিত আলোচনা ও ফজিলত

আল্লাহ তাআলা আমাদের জন্য যথেষ্ট, তিনিই হলেন উত্তম কর্মবিধায়ক; আল্লাহ তাআলাই হচ্ছে উত্তম অভিভাবক এবং উত্তম সাহায্যকারী। – এই দোয়াটি ইসলামিক প্রেক্ষাপটে বিপদের সময় আল্লাহর সাহায্য ও রহমত প্রার্থনা করার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং শক্তিশালী দোয়া। 

এটি কুরআনের আয়াত এবং সহিহ হাদিসে এসেছে। বিপদ, দুশ্চিন্তা, অত্যাচার বা অন্যায়-অবিচারের শিকার হলে মুসলমানদের জন্য এটি এক গুরুত্বপূর্ণ আমল হিসেবে বিবেচিত।

হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি’মাল ওয়াকিল - কুরআনি আয়াত
এই দোয়ার ভিত্তি দুটি আয়াত থেকে নেয়া:

আলে ইমরান (৩:১৭৩):
"যারা তাদের ওপর বিপদ আসলে বলে, আমরা তো আল্লাহরই। আর নিশ্চয় আমরা তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী।"

সূরা আনফাল (৮:৪০):
"তাদের জন্য আল্লাহ যথেষ্ট, তিনিই উত্তম কর্মবিধায়ক; তিনি নিঃসন্দেহে উত্তম সাহায্যকারী।"

এছাড়া, সূরা হজ (২২:৭৮)-এও এর কাছাকাছি বিষয় আলোচনা করা হয়েছে।

এই দোয়াটি কোথায় এবং কিভাবে এসেছে?
ইসলামি ঐতিহ্যে এই দোয়াটি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কর্তৃক সাহাবাদের বিপদে পাঠানো হয়েছে এবং কুরআনে আল্লাহর উপর ভরসা ও সাহায্য চাওয়ার বার্তা দিয়েছে।
বিশেষত ইবরাহিম (আ.) যখন আগুনে নিক্ষিপ্ত হয়েছিলেন, তখন তিনি এই দোয়া পড়েছিলেন। একইভাবে, রাসূলুল্লাহ (সা.) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করার সময় এই দোয়া পড়েছিলেন যখন মুশরিকরা তাদের পিছনে হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল।

এমনকি, আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে আছে যে, কিয়ামতের ভয়াবহতার সময় সাহাবারা ভীত হলে রাসূল (সা.) তাদের এই দোয়া পড়তে বলেছেন (তিরমিজি, হাদিস: ২৪৩১)।

এই দোয়াটি যখন পড়বেন:
এটি যেকোনো দুঃখ, কষ্ট, বিপদ, দুশ্চিন্তা বা অত্যাচারে পড়তে পারেন। বিশেষত:

কারাবন্দি বা অন্যায় শিকার:
যদি কেউ অন্যায়ভাবে কারাবন্দি হয়ে থাকেন বা কোন অত্যাচারের শিকার হন, এই দোয়া পড়লে আল্লাহ তাআলা তাকে মুক্তি দিবেন।

বিপদ, দুর্ভাগ্য বা দুশ্চিন্তা:
কোনো বিপদে বা কঠিন পরিস্থিতিতে থাকা অবস্থায় এই দোয়া পাঠ করা উত্তম। এটি আপনাকে আল্লাহর সাহায্য এবং সমাধান পেতে সহায়তা করবে।

প্রতিটি মুসলমানের জন্য আমল:
আপনি যখনই মনে করবেন যে আপনি কোনো বিপদে আছেন বা মনের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে, তখন এই দোয়া পাঠ করলে আল্লাহর সাহায্য পাবেন।

ফজিলত ও সওয়াব 

১. বিপদ থেকে মুক্তি:
এই দোয়া পড়ে বিপদ থেকে মুক্তি লাভ করা যায়। বিশেষভাবে, যদি কোনো মুসিবতে বা বিপদে পড়েন, তাহলে এই দোয়া পাঠ করুন। এটি বিশেষভাবে মুশরিকদের হামলার মুখে রাসূল (সা.) দ্বারা প্রদর্শিত একটি দোয়া।

২. আল্লাহর প্রতি পূর্ণ ভরসা:
এই দোয়াতে আল্লাহর ওপর ভরসা স্থাপন করা হয়। যে ব্যক্তি একনিষ্ঠভাবে এই দোয়া পড়বে, তার বিপদ দূর হবে এবং আল্লাহর সাহায্য আসবে।

৩. প্রশংসা ও সাহায্য:
এই দোয়াটি আল্লাহর প্রশংসা করার একটি মাধ্যম এবং সাহায্য চাওয়ার একটি উপায় হিসেবে কাজ করে। "নি’মাল ওয়াকিল" অর্থাৎ আল্লাহ তাআলাই সেরা সাহায্যকারী। এটি মুসলমানদের জন্য আল্লাহর সাহায্য প্রাপ্তির উপায় হিসেবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

৪. ধৈর্য ও তাওয়াক্কুল:
যেকোনো সমস্যায় বা দুর্দিনে এই দোয়া পাঠ করলে তাওয়াক্কুল বা আল্লাহর উপর ভরসার মধ্যে ধৈর্য বৃদ্ধি পায়। এটা হৃদয়ে শক্তি এবং প্রশান্তি এনে দেয়।

এটা কিভাবে পাঠ করবেন:
এই দোয়া যেকোনো সময়, যেকোনো পরিস্থিতিতে পড়তে পারেন। আপনি বিপদগ্রস্ত হলে, নিজের বা অন্যদের জন্য এই দোয়া পড়তে পারেন। বিশেষত:

সকালে বা রাতে নিয়মিত পড়া:
ধর্মীয় জীবনে এই দোয়াটিকে নিয়মিত পাঠ করা হলে, আপনার জীবনে আল্লাহর রহমত এবং সাহায্য অব্যাহত থাকবে।

মুসলিমদের পারিবারিক বা সামাজিক অবস্থায় পড়া:
বিভিন্ন সামাজিক অবস্থা যেমন, ক্ষতি বা দুঃখের সময় এটি পড়া উচিত, যাতে সমাধান এবং ভালো ফল পাওয়া যায়।

হাদিসে ফজিলত:
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: "যে ব্যক্তি বিপদ বা কোনো মুসিবতে পড়বে এবং আল্লাহর বিধি অনুযায়ী ‍‍`হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি’মাল ওয়াকিল‍‍` পড়বে, আল্লাহ তাকে সঠিক সমাধান দেবেন।" (বুখারি, হাদিস: ৪৫৬৩)

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!