শাবান ও রমজান উভয়টিই গুরুত্ববহ ও ফজিলতপূর্ণ মাস। শাবান মাসকেও নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গুরুত্ব দিতেন। গুরুত্বের সাথে রোজা রাখতেন এবং অন্যান্য আমল করতেন। শাবান মাস আল্লাহর দরবারে বান্দাদের আমলনামা পেশ হওয়ার মাস।
শাবান মাসের গুরুত্ব
শাবান মাস আল্লাহর দরবারে বান্দাদের আমলনামা পেশ হওয়ার মাস। হযরত আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজান ছাড়া শাবান মাসে সর্বাধিক রোজা রাখতেন। আয়েশা রা. বলেন,
فَمَا رَأَيْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اسْتَكْمَلَ صِيَامَ شَهْرٍ إِلَّا رَمَضَانَ، وَمَا رَأَيْتُه أَكْثَرَ صِيَامًا مِنْهُ فِي شَعْبَانَ.
আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে রমজান ছাড়া অন্য কোনো মাসে পূর্ণ মাস রোজা রাখতে দেখিনি। আর আমি তাকে (রমজান ছাড়া) শাবান মাস অপেক্ষা অধিক রোজা রাখতে আর কোনো মাসে দেখিনি। (সহিহ বুখারি ১৯৬৯)
হযরত আয়েশা রা. থেকেই বর্ণিত অপর এক হাদিসে আছে- كَانَ أَحَبُّ الشُّهُورِ إِلَى رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَنْ يَصُومَه شَعْبَانَ. রোজা রাখার জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে সর্বাধিক প্রিয় মাস ছিল শাবান মাস। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস ২৫৫৪৮; সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ২৪৩১)
এ হাদিসদ্বয় বলছে, রোজা রাখার জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে শাবান মাস সর্বাধিক প্রিয় ছিল, তাই তিনি রমজান মাস ব্যতীত এ মাসেই সবচেয়ে বেশি রোজা রাখতেন। কিন্তু কেন তিনি শাবান মাসে এত বেশি রোজা রাখতেন?
এর উত্তর পাওয়া যাবে হযরত উসামা বিন যায়েদ রা. থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে। ওই হাদিস থেকে শাবান মাসের গুরুত্ব ও তাৎপর্যের বিষয়টিও পরিষ্কার হয়ে যাবে। আর তা হলো উসামা বিন যায়েদ রা. বলেন,
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (রমজান ছাড়া) শাবান মাসে বেশি রোজা রাখতেন অন্য কোনো মাসেই এত রোজা রাখতেন না। উসামা বিন যায়েদ রা. বলেন, আমি (একবার) বললাম- وَلَمْ أَرَكَ تَصُومُ مِنْ شَهْرٍ مِنَ الشُّهُورِ مَا تَصُومُ مِنْ شَعْبَانَ. আমি আপনাকে কোনো মাসেই এত রোজা রাখতে দেখিনি, শাবান মাসে আপনি যত রাখেন, (এর রহস্য কি)?
এ প্রশ্নের উত্তরে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- ذَاكَ شَهْرٌ يَغْفُلُ النَّاسُ عَنْهُ بَيْنَ رَجَبٍ وَرَمَضَانَ، وَهُوَ شَهْرٌ تُرْفَعُ فِيهِ الْأَعْمَالُ إِلَى رَبِّ الْعَالَمِينَ فَأُحِبُّ أَنْ يُرْفَعَ عَمَلِي وَأَنَا صَائِمٌ. শাবান হল রজব ও রমযানের দ্বিতীয় মাস। এ মাস সম্পর্কে (অর্থাৎ এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য সম্পর্কে) মানুষ গাফেল থাকে। শাবান হল এমন মাস, যে মাসে রব্বুল আলামিনের কাছে (বান্দার) আমল পেশ করা হয়। আমি চাই, রোজাদার অবস্থায় আমার আমল (আল্লাহর দরবারে) পেশ হোক।
(মুসনাদে আহমাদ, হাদিস ২১৭৫৩,সুনানে নাসায়ি, হাদিস ২৩৫৭, মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হাদিস ৯৮৫৮)
শাবান মাসের প্রতি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেন এত গুরুত্বারোপ করতেন, এই হাদিসে তিনি তা খুলে বলেছেন। তাঁর কথার মর্ম হল, এই মাসে বান্দার আমল আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়। কাজেই এ মাসটি গুরুত্বের দাবিদার। তাছাড়া সামনে রমজান আসছে, ফজিলতপূর্ণ মাস হিসেবে রমযানকে গুরুত্ব প্রদান করা হয়। শাবান মাসের আগে রজব মাস আছে, রজব মাস পবিত্র চার মাসের একটি,
اِنَّ عِدَّۃَ الشُّهُوۡرِ عِنۡدَ اللّٰهِ اثۡنَا عَشَرَ شَهۡرًا فِیۡ کِتٰبِ اللّٰهِ یَوۡمَ خَلَقَ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضَ مِنۡهَاۤ اَرۡبَعَۃٌ حُرُمٌ ؕ ذٰلِکَ الدِّیۡنُ الۡقَیِّمُ
কুরআনের সুরা তাওবায় (৯: ৩৬) চারটি মাসকে ‘পবিত্র মাস’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তন্মধ্যে রজব একটি। সেদিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে। সেই চারমাস হল, জিলক্বদ, যিলহজ, মহররম, রজব। (সহিহ বুখারি, হাদিস ৩১৯৭)
তাই রজব মাসকেও গুরুত্ব প্রদান করা হয়। মাঝখানে শাবানের ব্যাপারে গাফলতি হয়ে যায়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সতর্ক করলেন যে, দেখো, একটি বিশেষ দৃষ্টিকোণ থেকে এই মাসটিও গুরুত্বের দাবিদার। এ মাসে বান্দার গোটা বছরের আমলনামা আল্লাহর দরবারে পেশ করা হয়। তাই শাবান আল্লাহর দরবারে আমলনামা পেশ হওয়ার মাস। কাজেই এই মাসেরও যথাযথ কদর করা চাই। এ কারণেই আমি এ মাসে এত রোজা রাখি ।
শাবান মাসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিক রোজা রাখার কারণ সম্পর্কে আরো কিছু বক্তব্য রয়েছে। কিন্তু এ মতটিকেই হাফেয ইবনে হাজার রাহ. সর্বাধিক উত্তম মত বলে রায় প্রদান করেছেন। (ফাতহুল বারী, হাদিস নং ১৬৯৬, লাতায়েফুল মাআরেফ, ইবনে রজব, পৃ ২৫৬)
ইমাম ইবনে রজব রাহ. এই হাদিস সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে একটি গভীর বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তিনি বলেছেন, এই হাদিসে এই ইঙ্গিত রয়েছে যে, কখনো কোনো একটা সময়, ব্যক্তি বা স্থানের ফযীলত প্রসিদ্ধ হয়ে যায়, তখন সবাই সেই প্রসিদ্ধ স্থান, কাল, পাত্র নিয়েই ব্যস্ত থাকে। অথচ ভিন্ন বিবেচনায় অন্য কোনো স্থান, কাল, পাত্র সেই প্রসিদ্ধ স্থান, কাল, পাত্রের চেয়েও উত্তম হতে পারে। কিন্তু অনেকে সেদিকে লক্ষ্য করে না। (লাতায়েফুল মাআরিফ, পৃ. ২৫১)
সুতরাং একাধিক ফযিলতের কারণে যেভাবে রমজান মাসকে গুরুত্ব প্রদান করা হয় এবং পবিত্র মাস হিসেবে আশহুরে হুরুম বা পবিত্র চার মাসকে যেভাবে গুরুত্ব প্রদান করা হয়, তেমনি সারা বছরের আমলনামা পেশ হওয়ার মাস হিসেবে শাবান মাসকেও যথাযথ গুরুত্ব প্রদান করা কর্তব্য। আর এই গুরুত্ব প্রদান করার উপায় হল, সব ধরনের গুনাহ থেকে বেঁচে থেকে নেক আমলের প্রতি যত্নবান হওয়া। শাবান মাসের অধিকাংশ দিন রোজা রেখে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতকে এই নির্দেশনাই দিয়ে গেছেন।
প্রসঙ্গত, এখানে উল্লেখ করে দেওয়া প্রয়োজন, সহিহ হাদিসে আছে, আল্লাহর দরবারে প্রতিদিন বান্দাদের আমলনামা পেশ করা হয়। দিনের আমলনামা রাতে আর রাতের আমলনামা দিনে পেশ করা হয়। (সহিহ মুসলিম, হাদিস ১৭৯) এটি হল প্রতিদিনের আমলনামা। অপর একটি সহিহ হাদিসে এসেছে যে, সপ্তাহে সোমবার ও বৃহস্পতিবার আমলনামা পেশ করা হয়। (সহিহ মুসলিম, হাদিস ২৫৬৫) এটি হল সাপ্তাহিক আমলনামা। আর একবার পেশ করা হয় বাৎসরিকভাবে। সেটা হল শাবান মাসে। এখানে সেটার কথাই বলা হয়েছে। (লাতায়েফুল মাআরেফ, পৃ. ২৪৪)
শাবান মাসের রোজা
উপরিউক্ত বর্ণনাসমূহ থেকে স্পষ্ট যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর দরবারে আমলনামা পেশ করা হবে―এ বিষয়টির প্রতি গুরুত্বারোপ করে শাবান মাসে সর্বাধিক রোজা রাখতেন। তাই শাবান মাসে অন্যান্য নেক আমলের পাশাপাশি সামর্থ্য অনুযায়ী রোজা রাখার চেষ্টা করা কর্তব্য। কিন্তু রোজা রাখবে শাবান মাসের ২৭ তারিখ পর্যন্ত। হাদিসে রমযানের এক-দুই দিন আগে রোজা রাখতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। (সহিহ বুখারি, হাদিস ১৯১৪)
লাইলাতুন নিসফি মিন শাবানের ফজিলত
শাবান মাসের একটি ফযীলত হল, অর্ধ-শাবানের রাত। অর্থাৎ চৌদ্দ শাবান দিবাগত রাত। এ রাতের বিশেষ ফযিলতের কথা বর্ণিত হয়েছে। একটি হাদিসে আছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- يَطَّلِعُ اللهُ إِلَى خَلْقِهِ فِي لَيْلَةِ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ فَيَغْفِرُ لِجَمِيعِ خَلْقِهِ إِلَّا لِمُشْرِكٍ أَوْ مُشَاحِنٍ. আল্লাহ তাআলা অর্ধ-শাবানের রাতে সৃষ্টির দিকে (রহমতের) দৃষ্টি দেন; অতঃপর তিনি তার সকল সৃষ্টিকে ক্ষমা করে দেন, কেবল শিরককারী ও বিদ্বেষপোষণকারী ব্যতীত (এই দুই শ্রেণিকে ক্ষমা করেন না)। ইবনে হিব্বান, হাদিস ৫৬৬৫, শুআবুল ঈমান, বাইহাকী ৩/৩৮২, হাদিস ৩৮৩৩
قال البيهقي: وقد روينا هذا من أوجه، وفي ذلك دلالة على أن للحديث أصلا من حديث مكحول. এই হাদিসটি নির্ভরযোগ্য ও আমলযোগ্য। ইমাম ইবনে হিব্বান, ইমাম যাকীউদ্দীন মুনযিরী, যাইনুদ্দীন ইরাকি প্রমুখ হাদিস বিশারদ ইমামগণ হাদিসটিকে নির্ভরযোগ্য বলে মতামত দান করেছেন। (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস ৫৬৬৫, আততারগীব ওয়াত তারহীব ২/১১৮, শরহুল মাওয়াহেব ৭/৪১২)
এই হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী অর্ধ-শাবানের রাতে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে সবার জন্য রহমত ও মাগফিরাতের দ্বার উন্মুক্ত করা হয়। কেবল শিরকে লিপ্ত ব্যক্তি এবং অন্যের প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারী ছাড়া সবাই এই মাগফিরাত ও রহমত প্রাপ্ত হয়।
কোনো বিশেষ সময়ের ব্যাপারে আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত ও মাগফিরাতের ঘোষণা আসলে করণীয় হল, সেই সময়ে সকল গুনাহ থেকে বিরত থেকে নেক আমলের প্রতি যত্নবান হওয়া, যেন আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাতের উপযুক্ত হওয়া যায়।
এ হাদিস ও অন্যান্য হাদিসে মাগফিরাতের ঘোষণা থাকার কারণে বহু আগ থেকেই গুনাহ মুক্তির রাত হিসেবে এ রাতকে শবে বরাত তথা ‘মুক্তির রজনী’ নামে অভিহিত করা হয়। কাজেই এ রাতে গুনাহ মুক্তির জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা কাম্য। পাশাপাশি অধিক নেক আমল ও দুআ-ইস্তিগফারের মাধ্যমে আল্লাহর মাগফিরাত ও রহমত প্রাপ্তির ঐকান্তিক চেষ্টা করাও কর্তব্য।
এ সম্পর্কে আরেকটি হাদিস
হযরত আলা ইবনুল হারিস রাহ. থেকে বর্ণিত, আয়েশা রা. বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে নামাযে দাঁড়ান এবং এত দীর্ঘ সিজদা করেন যে, আমার ধারণা হল, তিনি হয়তো মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি তখন উঠে তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম। তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল। যখন তিনি সিজদা থেকে উঠলেন এবং নামাজ শেষ করলেন, আমাকে লক্ষ করে বললেন, হে আয়েশা অথবা বলেছেন, হে হুমাইরা, তোমার কি এই আশঙ্কা যে, আল্লাহর রাসূল তোমার হক নষ্ট করবেন? আমি উত্তরে বললাম, না, ইয়া রাসুলাল্লাহ। আপনার দীর্ঘ সিজদা থেকে আমার এই আশঙ্কা হয়েছিল, আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কি না। নবীজী জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি জানো, এটা কোন্ রাত? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন ইরশাদ করলেন- এটা হল অর্ধ-শাবানের রাত (শাবানের চৌদ্দ তারিখের দিনগত রাত)। আল্লাহ তাআলা অর্ধ-শাবানের রাতে তাঁর বান্দাদের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেন এবং ক্ষমপ্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করেন এবং অনুগ্রহ প্রার্থীদের অনুগ্রহ করেন আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের ছেড়ে দেন তাদের অবস্থাতেই। শুআবুল ঈমান, বাইহাকী ৩/৩৮২-৩৮৬
ইমাম বাইহাকী রাহ. এই হাদিসটি বর্ণনার পর এর সনদের ব্যাপারে বলেছেন هذا مرسل جيد.
শবে বরাতের গুরুত্ব
লাইলাতুল বারা‘আতের ফযীলত নির্ভরযোগ্য হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। সম্মিলিত কোন রূপ না দিয়ে এবং এ রাত উদ্যাপনের বিশেষ কোন পন্থা উদ্ভাবন না করে ব্যক্তিগত ভাবে শক্তি ও সামর্থ্য অনুযায়ী বেশী বেশী ইবাদত করাও নির্ভরযোগ্য রেওয়ায়েত দ্বারা প্রমাণিত। এখানে লাইলাতুল বারা‘আতের ফযীলত ও করণীয় বিষয়ের কিছু হাদিস যথাযথ উদ্ধৃতি ও সনদের নির্ভরযোগ্যতা সহ উল্লেখ করা হলো।
আমাদের দেশে শবে বরাতকে কেন্দ্র করে নানামুখী চিন্তা-ভাবনা প্রচলিত রয়েছে। কেউ কেউ তো শবে বরাতকে একদম ভিত্তিহীন বলে অভিহিত করছেন। আবার কেউ কেউ এ পুণ্যময় রাতটিকে উপলক্ষ্য করে নানা বিদআত ও রুসুমাতে জড়িয়ে পড়েছেন।
আবার তৃতীয় একটি অবস্থানে আছেন হক্কানী ওলামায়ে কেরাম ও তাদের অনুসারীগণ। তাদের অভিমত হলো, শবে বারাত প্রমাণিত। এর বিশেষ কিছু আমলও রয়েছে। তবে এর সঙ্গে চালু হয়ে পড়া সামাজিক প্রথা তথা রুসুমাতগুলো বিদআত ও বর্জনীয় ৷
আমি এবং হক্কানী ওলামায়ে কেরাম তৃতীয় এই অভিমতটিকে সমর্থন করেন ও এর প্রতি সকলকেই উৎসাহিত করে থাকেন।
আমি প্রথমে শবে বারা’আতের প্রমাণ স্বরূপ আলোচনা টুকুন পেশ করেছি এরপরও তার জন্য আরো কিছু প্রমাণাদি ও আমল পেশ করবো,অতঃপর এ রাতে বর্জনীয় বিষয়গুলো আলোচনা করবো ৷
শবে বরাত কী?
শব ফার্সি শব্দ। অর্থ: রাত। আর বারাআত এটি আরবি শব্দ। براءة অর্থ হলো: পবিত্রা, শান্তি, মুক্তি, পরিত্রাণ ইত্যাদি। লাইলাতুল বরাত অর্থ হলো: জাহান্নাম থেকে মুক্তির রাত।
শবে বারাআতকে হাদিসের পরিভাষায় ব্যক্ত করা হয়েছে ليلة النصف من شعبان তথা মধ্য শাবানের রাত। অতএব, ফারসির শবে বরাত শব্দটি আরবিতে না পেলেই তাকে অস্বীকার করা উচিত নয়।
তা না হয় আপনি নামাজ এবং রোজার মত ভারতবর্ষের অতিপরিচিত ইসলামের পন্চভিত্তির গুরুত্বপূর্ণ দুটি বিশেষ ইবাদত ও সরাসরি কোরআন ও হাদিসে তালাশ করে পাবেন না। তাই বলে নামাজ ও রোজা ফরজ ইবাদত হিসেবে পরিগণিত হবে না?
শবে বরাতের আমল
উপর্যুক্ত হাদিসে দীর্ঘ নফল নামাজ, দীর্ঘতম সময় সিজদা করার কথা আছে। সুতরাং এ রাতে নফল নামাযসহ অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগির প্রতি যত্নবান হওয়া কাম্য। যেমন নফল নামাযের সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী দুই রাকাত করে যত রাকাত সম্ভব পড়তে থাকা, কুরআন কারীম তিলাওয়াত করা, দরুদ শরীফ পড়া, তাওবা-ইস্তেগফার করা, দোয়া করা এবং কিছুটা ঘুমের প্রয়োজন হলে ঘুমিয়ে নেওয়া। এমন যেন না হয় যে, সারা রাতের দীর্ঘ ইবাদতের ক্লান্তিতে ফজরের নামাজ জামাআতের সাথে পড়া সম্ভব হল না। খেয়াল রাখতে হবে, ফরজ নামাযে যেন কোনোরূপ শৈথিল্য না হয়। কারণ, ফরজ ইবাদতের গুরুত্ব সর্বাবস্থায় নফল ইবাদতের চেয়ে বেশি।
একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, অনেক অনির্ভরযোগ্য ওযিফার বই-পুস্তকে এই রাতে নামাযের যে নির্দিষ্ট নিয়মকানুন লেখা আছে, যেমন এত রাকাত হতে হবে, প্রতি রাকাতে এই সুরা এতবার পড়তে হবে ইত্যাদি এগুলো ঠিক নয়। বরং স্বাভাবিকভাবে যেকোনো সুরা দিয়ে দুই রাকাত করে নফল নামাজ পড়বে। (আলআছারুল মারফূআ, আবদুল হাই লাখনোভী, পৃ. ৮০-৮৫)
এ রাতের করণীয় সম্পর্কে ইমাম ইবনে রজব রাহ. বলেছেন, ‘মুমিনের কর্তব্য এই যে, এ রাতে খালেস দিলে তওবা করে যিকির, দুআ ও ইস্তেগফারের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে। যত্নের সঙ্গে নফল নামাজ পড়বে। সওয়াব লাভের আশা নিয়ে পনেরো তারিখের রোজাও রাখবে। কেননা কখন মৃত্যু এসে যায় বলা যায় না। তাই কল্যাণের মওসুম শেষ হওয়ার আগেই তার মূল্য দেওয়া কর্তব্য। তবে অত্যন্ত জরুরি বিষয় হল, ওইসব গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা, যেগুলো এ রাতের সাধারণ ক্ষমা ও দুআ কবুল হওয়া থেকে মানুষকে বঞ্চিত করে দেয়। যথা : শিরক, হত্যা, বিদ্বেষ। এগুলো সবই কবিরা গুনাহ। আর বিদ্বেষ তো এতই গর্হিত বিষয় যে, এটা অধিকাংশ সময়ই মানুষকে আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাত থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।
যেকোনো মুসলমান সম্পর্কেই বিদ্বেষ পোষণ করা অত্যন্ত মন্দ প্রবণতা। তবে সাহাবায়ে কেরাম ও সালাফে সালেহীন সম্পর্কে অন্তরে বিদ্বেষ বিদ্যমান থাকা অত্যন্ত ভয়াবহ ও গর্হিত অপরাধ। এজন্য মুসলমানদের কর্তব্য হল, সর্বদা অন্তরকে পরিষ্কার রাখা এবং হিংসা-বিদ্বেষ থেকে পাক-পবিত্র রাখা। বিশেষত উম্মাহর পূর্বসূরি ব্যক্তিদের সম্পর্কে অন্তর পুরোপুরি পরিষ্কার থাকা অপরিহার্য, যাতে রহমত ও মাগফিরাতের সাধারণ সময়গুলোতে বঞ্চিত না হতে হয়।’ লাতাইফুল মা আরিফ, পৃ. ২৬৫
এ রাতের নফল আমলসমূহ সম্মিলিত নয়, ব্যক্তিগত
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, এ রাতের নফল আমলসমূহ, বিশুদ্ধ মতানুসারে একাকীভাবে করণীয়। ফরজ নামাজ তো অবশ্যই আমাদের আদায় করতে হবে। এরপর যতটুকু নফল পড়ার তা নিজ নিজ ঘরে একাকী পড়বে। এসব নফল আমলের জন্য দলে দলে মসজিদে এসে সমবেত হওয়ার কোনো প্রমাণ হাদিস শরীফেও নেই আর সাহাবায়ে কেরামের যুগেও এর রেওয়াজ ছিল না। (ইক্তিযাউস সিরাতিল মুসতাকীম ২/৬৩১-৬৪১, মারাকিউল ফালাহ, পৃ. ২১৯)
তবে কোনো আহ্বান ও ঘোষণা ছাড়া এমনিই কিছু লোক যদি মসজিদে এসে যায়, তাহলে প্রত্যেকে নিজ নিজ আমলে মশগুল থাকবে, একে অন্যের আমলের ব্যাঘাত সৃষ্টির কারণ হবে না।
কোনো কোনো জায়গায় এই রেওয়াজ আছে যে, এ রাতে মাগরিব বা এশার পর থেকেই ওয়াজ-নসিহত আরম্ভ হয়। আবার কোথাও ওয়াজের পর মিলাদ-মাহফিলের অনুষ্ঠান হয়, মিলাদ পরবর্তী মিষ্টি বিতরণ হয়। কোথাও তো সারারাত খতমে-শবীনা হতে থাকে। উপরন্তু এ সবকিছুই করা হয় মাইকে এবং বাইরের মাইকও ছেড়ে দেওয়া হয়।
মনে রাখতে হবে, এ সবকিছুই ভুল রেওয়াজ। এ রাতে মাইক ছেড়ে দিয়ে বক্তৃতা-ওয়াজের আয়োজন করা ঠিক নয়। এতে না ইবাদতে আগ্রহী মানুষের পক্ষে ঘরে বসে একাগ্রতার সাথে ইবাদত করা সম্ভব হয়, আর না মসজিদে। অসুস্থ ব্যক্তিদের বিশ্রামেও মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটে। আল্লাহ আমাদের এসব ভুল কাজকর্ম পরিহার করার তাওফীক দিন।
এ রাতের আপত্তিকর কাজকর্ম
এছাড়া এ রাতে বেশ কিছু আপত্তিকর কাজকর্মও দেখা যায়। যেমন, মসজিদ, ঘর-বাড়ি বা দোকানপাটে আলোকসজ্জা করা, পটকা ফুটানো, আতশবাজি, কবরস্থান ও মাযারে ভিড় করা, কবরস্থান ও মাযারে আলোকসজ্জা করা, মহিলাদের বিনাপ্রয়োজনে ঘরের বাইরে যাওয়া, বিশেষত বেপর্দা হয়ে দোকানপাট, মাজার ইত্যাদিতে ভিড় করা, তরুণ ও যুবক ছেলেদের সারারাত শহরের অলিতে গলিতে ঘুরে বেড়ানো, হৈ-হুল্লোড় করা―এসব কিছুই আপত্তিকর কাজ। শায়েখ আবদুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী রাহ. বলেন, এই রাতের নিকৃষ্ট বেদআতসমূহের মাঝে নিচের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত―ঘর-বাড়ি, দোকানপাট আলোকসজ্জা করা, হৈ চৈ ও আতশবাজির উদ্দেশ্যে সমবেত হওয়া ইত্যাদি। এগুলো সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং এগুলোর স্বপক্ষে কোনো জাল রেওয়ায়েতও পাওয়া যায় না। সম্ভবত হিন্দুদের ‘দেওয়ালি’ প্রথা থেকে তা গ্রহণ করা হয়েছে। (মা ছাবাতা বিস সুন্নাহ, পৃ. ৩৫৩-৩৬৩)
শবে বরাতে কৃত কিছু কাজ তো অন্য সময়েও হারাম। আর কিছু কাজ আছে, যা অন্য সময় করা জায়েয, কিন্তু শবে বরাতে সেগুলোর পেছনে পড়ে শবে বরাতের আমল থেকে বঞ্চিত হওয়া কিছুতেই ঠিক নয়। যেমন খিচুড়ি বা হালুয়া-রুটি রান্না করে নিজেরা খাওয়া বা গরিবদের খাওয়ানো। সাধারণ সময়ে এগুলো করা জায়েয। কিন্তু শবে বরাতে এগুলোর পেছনে পড়ে শবে বরাতের মূল কাজ তওবা-ইস্তেগফার, নফল ইবাদত প্রভৃতি থেকে বঞ্চিত থাকা একেবারেই ঠিক নয়। বস্তুত এগুলোও শয়তানের এক প্রকারের ধোঁকা, মানুষকে মূল কাজ থেকে বিরত রাখার জন্য শয়তান এসব কাজকর্মে মানুষকে ব্যস্ত করে দেয়।
শবে বরাতের পরের দিন শাবান মাসের ১৫ তারিখের রোজা
শবে বরাতের পরের দিন শাবান মাসের ১৫ তারিখ। এ দিন অনেকে রোজা রেখে থাকেন। এ সম্পর্কে একটি বিষয় জেনে রাখা প্রয়োজন। প্রতি চান্দ্র মাসে তিন দিন রোজা রাখা সুন্নত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেও প্রতি মাসে তিন দিন রোজা রাখতেন, সাহাবীগণকেও মাসে তিন দিন রোজা রাখতে বলতেন। (জামে তিরমিজি, হাদিস ৭৬০,৭৬৩)
সে হিসেবে মাসে তিন দিন রোজা রাখা সুন্নাত। এই তিন দিন মাসের শুরুতেও হতে পারে, মাঝেও হতে পারে, আবার শেষেও হতে পারে। কিন্তু কিছু কিছু হাদিসে স্পষ্ট আছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদেরকে বিশেষভাবে মাসের ১৩, ১৪, ১৫ তারিখ (যাকে আইয়ামে বীয বলা হয়) রোজা রাখতে বলেছেন। (জামে তিরমিযী, হাদিস ৭৬১, সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ২৪৪৯, ফাতহুল বারী, ১৯৮১ নং হাদিসের আলোচনা)
এই হাদিসগুলোর ওপর ভিত্তি করে হাফেয ইবনে হাজার রাহ. বলেছেন, যে তিন দিনের কথা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলে গেছেন, সেই তিন দিন রোজা রাখাই সর্বোত্তম। (ফাতহুল বারী, ১৯৮১ নং হাদিসের আলোচনা)
সে হিসেবে প্রতি মাসের আইয়ামে বীযে রোজা রাখা সুন্নত। শাবান মাসও এর ব্যতিক্রম নয়। তাই শাবান মাসের আইয়ামে বীযে (১৩, ১৪, ১৫) রোজা রাখাও সুন্নত। ১৫ তারিখ আইয়ামে বীযের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কারণে ১৫ তারিখ রোজা রাখাও সুন্নতে সামেল।
বাকি থাকল একটি বর্ণনায় বিশেষভাবে ও পৃথকভাবে ১৫ শাবান রোজা রাখার কথা বর্ণিত হয়েছে। (সুনানে ইবনে মাজাহ, বর্ণনা ১৩৮৪) কিন্তু বর্ণনাটি শাস্ত্রীয় বিচারে দুর্বল। শাস্ত্রীয় বিচারে দুর্বল হওয়ার কারণে কেবল এই বর্ণনার ওপর ভিত্তি করে ১৫ শাবানের রোজাকে পৃথকভাবে সুন্নত কিংবা মুস্তাহাব মনে করা সঠিক নয় বলে মতামত দিয়েছেন মুহাক্কিক আলেমগণ।
তবে, যেমনটি পূর্বে বলা হল, ১৫ তারিখ আইয়ামে বীযের অন্তর্ভুক্ত,এ হিসেবে এই দিনের রোজাকে (১৩ ও ১৪ তারিখের রোজাসহ) নিঃসন্দেহে সুন্নত মনে করা যাবে।
মোটকথা, সর্বাবস্থায় শাবান মাসের ১৫ তারিখে রোজা রাখা যাবে। পূর্বের দুই দিন তথা ১৩ ও ১৪ তারিখের সঙ্গে মিলিয়ে একসঙ্গে তিন দিন রোজা রাখা যেমন যাবে, তেমনি পৃথকভাবে কেবল ১৫ তারিখও রোজা রাখা যাবে। এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে তিন দিন রাখাই উত্তম।
এমনিভাবে ১৫ তারিখ আইয়ামে বীযের একটি দিন হিসেবে ১৫ তারিখের রোজাকে সুন্নতও মনে করা যাবে। কিন্তু পৃথকভাবে শাবান মাসের ১৫ তারিখ বিশেষ একটি দিন, সে হিসেবে পৃথকভাবে এ দিনে রোজা রাখা সুন্নত―এমন ধারণা রাখা যাবে না।
এ প্রসঙ্গে শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মাদ তাকী উসমানী হাফিযাহুল্লাহ বলেন, ‘আরো একটি বিষয় হচ্ছে, শবে বরাত-পরবর্তী দিনে অর্থাৎ শাবানের পনেরো তারিখে রোজা রাখা। গভীরভাবে বিষয়টি উপলব্ধি করা প্রয়োজন। হাদিসে রাসুলের বিশাল ভাণ্ডার হতে একটি মাত্র হাদিস এর সমর্থনে পাওয়া যায়। তাতে বলা হয়েছে, ‘শবে বরাতের পরবর্তী দিনটিতে রোজা রাখ’। সনদ ও বর্ণনার সূত্রের দিক থেকে হাদিসটি দুর্বল। তাই এ দিনের রোজাকে এই একটি মাত্র দুর্বল হাদিসের দিকে তাকিয়ে সুন্নত বা মুস্তাহাব বলে দেওয়া অনেক আলেমের দৃষ্টিতেই অনুচিত। তবে হাঁ, শাবানের গোটা মাসে রোজা রাখার কথা বহু হাদিসে পাওয়া যায়। অর্থাৎ ১ শাবান থেকে ২৭ শাবান পর্যন্ত রোজা রাখার যথেষ্ট ফজিলত রয়েছে। কিন্তু ২৮ ও ২৯ তারিখে রোজা রাখতে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই বারণ করেছেন। ইরশাদ করেন, ‘রমজানের দু-একদিন পূর্বে রোজা রেখো না।’ যাতে রমজানের জন্য পূর্ণ স্বস্তির সাথে স্বতঃর্স্ফূভাবে প্রস্তুতি নেওয়া যায়। কিন্তু ২৭ তারিখ পর্যন্ত প্রতিদিনের রোজাই অত্যন্ত বরকতপূর্ণ।
একটি লক্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে, শাবানের এই ১৫ তারিখ তো ‘আইয়ামে বীয’ এর অন্তর্ভুক্ত। আর নবীজী প্রতি মাসের আইয়ামে বীজ এ রোজা রাখতেন। সুতরাং যদি কোনো ব্যক্তি এই দুই বিষয়কে সামনে রেখে শাবানের ১৫ তারিখের দিনে রোজা রাখে যা ‘আইয়ামে বীয’ এর অন্তর্ভুক্ত, পাশাপাশি শাবানেরও একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিন, তবে ইনশাআল্লাহ নিশ্চয়ই সে সওয়াব পাবে। তবে শুধু ১৫ শাবানের কারণে এ রোজাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে সুন্নত বলে দেওয়া অনেক আলেমের মতেই সঠিক নয়। আর সে কারণেই অধিকাংশ ফুকাহায়ে কেরাম মুস্তাহাব রোজার তালিকায় মুহাররমের ১০ তারিখ ও ইয়াওমে আরাফা (জিলহজের ৯ তারিখ) এর কথা উল্লেখ করেছেন। অথচ শাবানের ১৫ তারিখের কথা পৃথকভাবে কেউই উল্লেখ করেননি। বরং তারা বলেছেন, শাবানের যেকোনো দিনই রোজা রাখা উত্তম। সুতরাং এ সকল বিষয়ের দিকে দৃষ্টি রেখে যদি কেউ রোজা রাখে, ইনশাআল্লাহ সে সওয়াব পাবে। তবে মনে রাখতে হবে যে, রোজা রাখার ব্যাপারে এ মাসের নির্দিষ্ট কোনো দিনের পৃথক কোনো বৈশিষ্ট্য নেই।’ ইসলাহী খুতুবাত ৪/২৬৭-২৬৮