রমজান মাসে মুমিনরা যে আমল (ইবাদত) পালন করে, তা শুধু মাসটি পর্যন্ত সীমাবদ্ধ না রেখে, পুরো বছর ধরে অব্যাহত রাখতে হলে কিছু কৌশল অনুসরণ করা প্রয়োজন। রমজান আমাদের আত্মশুদ্ধি, ধৈর্য, তাকওয়া (আল্লাহর প্রতি ভয়) এবং অন্যান্য নৈতিক ও আধ্যাত্মিক গুণাবলী অর্জনের একটি উত্তম সময়, যা যদি সঠিকভাবে রপ্ত করা যায়, তা জীবনের প্রতিটি দিনেই কার্যকর হতে পারে।
রমজান মাসের আমল পুরো বছর অব্যাহত রাখার জন্য কিছু করণীয় তুলে ধরা হলো:
১. নিয়মিত নামাজ আদায় করা (ফরজ এবং নফল)
রমজান মাসে মুমিনরা তারাবীহ এবং অতিরিক্ত নামাজে বেশ মনোযোগী হয়। তবে রমজানের পরও নিয়মিত ফরজ নামাজ আদায়ের পাশাপাশি কিছু নফল নামাজ (যেমন তাহাজ্জুদ, সুন্নাত নামাজ) অব্যাহত রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মুমিনদের জন্য প্রতিদিন 5 ওয়াক্ত নামাজ এবং তাহাজ্জুদ নামাজ মেনে চলা উচিত।
করণীয়:
নিয়মিত ফজর, মাগরিব এবং ইশা নামাজের পরে কিছু সুন্নাত নামাজ পড়ুন।
রাতের তাহাজ্জুদ নামাজের প্রতি আগ্রহী হন।
২. কোরআন তিলাওয়াত এবং ধৈর্য
রমজান মাসে কোরআন তিলাওয়াতের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেয়া হয়। রমজান শেষে কোরআন তিলাওয়াত বন্ধ হয়ে না যায়, সেজন্য প্রতিদিন কিছু সময় কোরআন তিলাওয়াত করতে হবে। কোরআন পড়া এবং তার অর্থ বুঝে তা বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল।
করণীয়:
প্রতিদিন কিছু না কিছু কোরআন তিলাওয়াত করুন। হয়তো ১ পৃষ্ঠা বা কিছু আয়াত, তবে নিয়মিত হতে হবে।
কোরআনের আয়াতগুলো নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করুন এবং জীবনে প্রয়োগের চেষ্টা করুন।
৩. দোয়া এবং ইস্তিগফার (ক্ষমা প্রার্থনা)
রমজান মাসে দোয়া এবং ইস্তিগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) করার অভ্যাস গড়ে ওঠে। এই অভ্যাসটিকে পুরো বছর ধরে চালিয়ে যেতে হবে। আল্লাহর কাছে দৈনন্দিন প্রয়োজন, সাহায্য এবং ক্ষমা চাওয়ার মাধ্যমে সম্পর্ক গভীর করা সম্ভব।
করণীয়:
প্রতিদিন কিছু সময় দোয়া করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
নিজের এবং অন্যান্য মুসলিম ভাই-বোনদের জন্য দোয়া করুন।
প্রতিদিন কিছু সময় আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে ইস্তিগফার করুন (রোজা বা অন্যান্য বিশেষ সময়ের মতো)।
৪. সদকাহ এবং দান
রমজান মাসে সদকাহ ও দানের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেওয়া হয়। পুরো বছর ধরে দান-খয়রাত করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। একান্ত প্রয়োজনের সময় কিছু না কিছু সদকাহ দান করা আল্লাহর কাছে বিশেষ পছন্দের কাজ।
করণীয়:
প্রতিদিন বা প্রতি সপ্তাহে কিছু টাকা দান করার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
বিশেষ দিনগুলোতে (যেমন ঈদ, শুক্রবার) দান বা সাহায্য করুন।
৫. সাহরি এবং ইফতারের সময় নিয়মিত দোয়া
রমজান মাসে সেহরি এবং ইফতারের সময় দোয়া করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই অভ্যাস পুরো বছর ধরে রাখলে আল্লাহর বিশেষ রহমত লাভ করা সম্ভব।
করণীয়:
সেহরি এবং ইফতারের সময় দোয়া পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
প্রতিদিনের ইফতারের সময় পরিমাণ মতো খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন।
৬. তাওবা এবং আত্মবিশ্লেষণ
রমজান মাসে তাওবা (ক্ষমা চাওয়া) এবং আত্মবিশ্লেষণ করা হয়। পুরো বছর ধরে নিজের কাজ, চিন্তা এবং কর্ম সম্পর্কে ভাবতে হবে এবং ঈমানদার, খোদাপরস্ত, এবং সৎ হওয়ার জন্য চেষ্টা করতে হবে।
করণীয়:
প্রতি মাসে কিছু সময় আত্মবিশ্লেষণ করুন। আপনি কোন পাপ করেছেন এবং কীভাবে আত্মশুদ্ধি করতে পারবেন তা নিয়ে চিন্তা করুন।
আল্লাহর কাছে তাওবা করে জীবনের ভুল সংশোধন করার চেষ্টা করুন।
৭. অন্যদের প্রতি সহানুভূতি এবং সহায়তা
রমজান মাসে গরিব-দুঃখীদের প্রতি সহানুভূতি বেড়ে যায়। সারা বছর এই সহানুভূতির মনোভাব বজায় রাখতে হবে। ছোট ছোট ভালো কাজ, যেমন অসহায়দের সহায়তা, তাদের খুশি করা, প্রতিবেশীদের সঙ্গে সদ্ভাব রাখা, এগুলো রমজানের পরেও নিয়মিত করতে হবে।
করণীয়:
প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক ভাল রাখুন।
অসহায়দের সহায়তা এবং সহযোগিতা করুন।
৮. আত্ম-সংযম (Self-discipline) বজায় রাখা
রমজান মাসে মানুষ অনেক বেশি আত্ম-সংযমে থাকে। এটি শুদ্ধ চরিত্র গঠন এবং ভালো কাজের জন্য মনের শক্তি বাড়ায়। এই আত্ম-সংযমকে পুরো বছর ধরে বজায় রাখতে হবে, বিশেষ করে খাবার, কথা বলার এবং অন্যান্য বিষয়গুলোতে।
করণীয়:
প্রতি মাসে কিছু নির্দিষ্ট সময় ধরে নিজেদের চিন্তা এবং আচরণ পর্যালোচনা করুন।
যে বিষয়গুলো রমজান মাসে শিখেছেন, তা প্র্যাকটিস করুন।
৯. পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক আরও দৃঢ় করা
রমজান মাসে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে একত্রে সময় কাটানো, ইফতার করা, নামাজ পড়া, এসব কিছু সম্পর্ক গড়ে তোলে। পুরো বছর ধরে পরিবারের সদস্যদের প্রতি ভালোবাসা এবং সহানুভূতির মনোভাব রাখতে হবে।
করণীয়:
পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়মিত সময় কাটান।
তাদের জন্য দোয়া এবং সাহায্য করুন।
আপনার মতামত লিখুন :