রমজান মাস এক অমূল্য সময়, যা আল্লাহর বিশেষ রহমত, মাগফিরাত (ক্ষমা) এবং নাজাত (মুক্তি) লাভের সুযোগ প্রদান করে। রমজানের শেষ মুহূর্তগুলো বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এই সময় আল্লাহ তাআলা রোজাদারদের জন্য বিশেষ রহমত এবং ক্ষমা মঞ্জুর করেন। অতএব, রমজানের শেষ মুহূর্তগুলোকে কাজে লাগিয়ে মুমিনদের আরও বেশি ইবাদত এবং দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে নৈকট্য লাভের চেষ্টা করা উচিত।
এখানে রমজানের শেষ মুহূর্তে মুমিনের করণীয় কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল আলোচনা করা হলো:
১. ইস্তিগফার (ক্ষমা প্রার্থনা)
রমজান মাসের শেষ মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা। পুরো মাসটি ইবাদতের মধ্যে কাটানোর পর, এটি এক বিশেষ সময় যখন আল্লাহ বান্দাদের প্রতি অত্যন্ত দয়ালু হন এবং তাদের মাফ করে দেন। অতএব, এই সময়টিকে নিজের পাপের জন্য তাওবা করার এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ হিসেবে কাজে লাগান।
করণীয়:
রমজানের শেষ মুহূর্তে ইস্তিগফার করুন।
প্রতিদিন বিশেষভাবে আস্তাগফিরুল্লাহ (আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করুন) শব্দগুলো বেশি বেশি পড়ুন।
২. লাইলাতুল কদরের দোয়া
রমজান মাসের শেষ দশকটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এর মধ্যে রয়েছে লাইলাতুল কদর। এটি হাজার মাসের চেয়েও উত্তম রাত। এই রাতটি আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ রহমত ও মাগফিরাতের রাত। যারা এই রাতের ইবাদত ও দোয়া করে, তাদের জন্য আল্লাহ সমস্ত পাপ মাফ করেন এবং তাদের দোয়া কবুল করেন।
করণীয়:
২০ রমজান থেকে ৩০ রমজান পর্যন্ত প্রতিদিন রাতে দোয়া ও নফল নামাজে মগ্ন থাকুন।
লাইলাতুল কদরের রাতটি বিশেষভাবে ইবাদত করুন, দোয়া, কোরআন তিলাওয়াত এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন।
৩. সদকাহ ও দান-খয়রাত
রমজান মাসে দান-খয়রাতের গুরুত্ব অনেক বেশি। রমজানের শেষ সময়ে গিয়ে আরও বেশি সদকাহ করা উচিত। আল্লাহ তাআলা রমজান মাসে দানকে বহুগুণ বাড়িয়ে দেন। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দান হলো ফিতরা (যাকাতুল ফিতর), যা রমজান মাসের শেষে গরীব-দুঃখীদের সাহায্য করার জন্য দেয়া হয়।
করণীয়:
রমজানের শেষ দিনগুলোতে অতিরিক্ত দান করুন, বিশেষ করে গরিবদের সাহায্য করুন।
ফিতরা দান করুন, যাতে আপনার রোজা পরিপূর্ণ হয় এবং গরিবরা ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারে।
৪. কোরআন তিলাওয়াত ও তাফসীর
রমজান মাসে কোরআন তিলাওয়াতের প্রতি মনোযোগ দেয়া হয়। শেষ মুহূর্তে এই অভ্যাসটি বজায় রেখে, পুরো কোরআন তিলাওয়াতের চেষ্টা করুন। কোরআন বুঝে তিলাওয়াত এবং তার তাফসীর (অর্থ বুঝে পাঠ) করলে জীবনে অনেক সুফল আসে।
করণীয়:
রমজান মাসের শেষ সময়টিতে কোরআন তিলাওয়াত এবং তাফসীর করে তার অর্থ বুঝে চিন্তা করুন।
রমজানের শেষ দিনগুলোতে বেশি বেশি কোরআন পড়ুন এবং এর উপকারিতা নিয়ে চিন্তা করুন।
৫. নফল নামাজ ও তাহাজ্জুদ
রমজান মাসের শেষ সময়ে নফল নামাজ এবং তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার গুরুত্ব বাড়ে। এই সময়টি আল্লাহর কাছে বিশেষ দোয়া করার এবং বেশি বেশি ইবাদত করার সময়।
করণীয়:
রমজান মাসের শেষ রাতগুলোতে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ুন।
অতিরিক্ত নফল নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে নৈকট্য কামনা করুন।
৬. আত্মবিশ্লেষণ ও তাওবা
রমজান মাসের শেষ মুহূর্তে আত্মবিশ্লেষণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিজেকে মূল্যায়ন করুন, কতটুকু ইবাদত আদায় করেছেন, কোথায় ভুল হয়েছে এবং সেই ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিন।
করণীয়:
রমজান মাসের শেষ সময়ে নিজের সমস্ত পাপের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে তাওবা করুন।
ভবিষ্যতে আরও ভালো কাজ করার অঙ্গীকার করুন এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইুন।
৭. ঈদের প্রস্তুতি
রমজান মাসের শেষ সময়ে ঈদের আনন্দের প্রস্তুতিও একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। ঈদের দিন গরিব-দুঃখীদের সহায়তা, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক বজায় রাখা, ঈদে আনন্দ করা—এসব হলো রমজানের শেষ সময়ে করণীয়।
করণীয়:
ঈদের জন্য প্রস্তুতি নিন, গরিবদের সাহায্য করুন এবং তাদের মধ্যে ঈদের আনন্দ ছড়িয়ে দিন।
ঈদুল ফিতরের নামাজের জন্য প্রস্তুতি নিন এবং পবিত্রতা বজায় রাখুন।
আপনার মতামত লিখুন :