আর মাত্র কয়েকদিন পরেই শুরু হবে পবিত্র রমজান মাস। রমজান বছরের শ্রেষ্ঠ মাস। এই মাস মুসলিম উম্মাহর প্রতি আল্লাহর বিশেষ নিয়ামত ও অনুকম্পা। রমজানে অত্যধিক নেক আমল ও জিকির-আজকার করা উচিত। এতে বিপুল পরিমাণে সওয়াব লাভ হবে। এই মাসে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার, সহবাস ও যেকোনো ধরনের অশ্লীলতা থেকে বিরত থেকে রোজা পালন করেন মুসলমানেরা।
পুরো এক মাস টানা রোজা রাখার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হলো স্বাস্থ্যগত জটিলতা। সবরকম পানাহার থেকে বিরত থাকার পরেও পর্যাপ্ত শক্তির মাত্রা বজায় রাখার জন্য শরীরকে প্রস্তুত করা দরকার। খাওয়া এবং ঘুমের ধরণে আকস্মিক পরিবর্তনের ফলে ক্লান্তি, পানিশূন্যতা এবং হজমের সমস্যা হতে পারে। বিশেষ করে মাসের প্রথম রোজাগুলোতে এরকম অবস্থা সৃষ্টি হওয়াটা স্বাভাবিক। তাই রমজানের জন্য মানসিক প্রস্তুতির পাশাপাশি শারীরিক প্রস্তুতির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
জেনে নিন কীভাবে রমজানের জন্য শারীরিকভাবে প্রস্তুত হবো-
প্রতি বেলার আহারে নিয়মানুবর্তিতা
রমজানের কয়েক সপ্তাহ আগে থেকে খাদ্যাভাসে পরিবর্তন আনতে হবে। রোজার সময়সূচির সঙ্গে শরীরকে মানিয়ে নিতে ভারী খাবারের পরিবর্তে নিয়মিত বিরতিতে হাল্কা খাবার গ্রহণ করা ভালো হবে। সারাদিনের জন্য ডিনারের উপর নির্ভরশীলতা কমানো উচিত। কেননা এই অভ্যাস হজমকে ব্যাহত করে এবং রোজার সময় অস্বস্তি সৃষ্টি করে।
পুষ্টিকর খাবারে মনোযোগী হতে হবে
পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবারের প্রতি অধিক মনোযোগী হতে হবে। বীজ জাতীয় খাবার, ফল এবং চর্বিহীন প্রোটিন দীর্ঘ সময় ধরে শরীরে শক্তি সঞ্চয় করে রাখতে সাহায্য করে। অপরদিকে চিনি ও অস্বাস্থ্যকর চর্বিযুক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার শরীরের দুর্বলতার কারণ হয়। এই নতুন খাদ্যাভ্যাস ভোর রাতে খেয়ে সারা দিন রোজা রাখার জন্য শরীরকে ভারসাম্যপূর্ণভাবে তৈরি করে।
পর্যাপ্ত পানি ও ফলের রস খান
মাসব্যাপী রোজা মানে প্রতিদিন এক বিপুল পরিসরের সময় শরীরের অভ্যন্তর ভাগ শুষ্ক থাকা। এ অবস্থায় শরীরের প্রয়োজনীয় শক্তির যোগানের জন্য আগে থেকেই নিয়মিত পানি খাওয়া অত্যন্ত জরুরি। শরীরের পর্যাপ্ত হাইড্রেশনের জন্য প্রতিদিন কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ গ্লাস পানি পান করার প্রয়োজন। নারকেলের পানি, তাজা ফলের রস এবং তরমুজের মতো পানিসমৃদ্ধ ফলগুলো হাইড্রেশনের জন্য সহায়ক। এভাবে শরীরের প্রয়োজনীয় পানির চাহিদা পূরণ করলে রোজার সময় ক্লান্তি, মাথাব্যথা এবং অন্যান্য ডিহাইড্রেশন-সংক্রান্ত লক্ষণগুলো থেকে মুক্ত থাকা যাবে।
ঘুমে অনিয়ম করবেন না
দীর্ঘ মেয়াদে শরীরকে সুস্থ ও সতেজ রাখতে স্বাস্থ্যকর ঘুমের বিকল্প নেই। সেহরি ও ইফতারের সময়গুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য করার জন্য আগে থেকেই ঘুমের সময়সূচিতে পরিবর্তন আনতে হবে। যারা রাতে খুব তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়েন, তাদের জন্য এই পরিবর্তন আনা অনেকটাই সহজ ব্যাপার। ঘুমের অনিয়ম শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে এবং হজমে ব্যাঘাত ঘটায়। এতে করে দেহের সামগ্রিক শক্তির উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ফলশ্রুতিতে রোজা রাখার মুহূর্তগুলো ক্রমেই জটিল থেকে জটিলতর হয়ে ওঠে। অন্যদিকে, রাতে দ্রুত ঘুমাতে যাওয়া এবং ভোরের কিছুক্ষণ আগে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস করা হলে রমজানের রুটিনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া সহজ হয়। ঘুমের এই অনুশীলন কেবল শরীরের জন্যই নয়, মনের স্বাস্থ্যের জন্যও উপযোগী।
ক্যাফেইন এবং চিনির পরিমাণ কমান
রোজার প্রথম দিনগুলোতে আকস্মিকভাবে ক্যাফেইন ও চিনি গ্রহণ থেকে বিরত থাকা মাথাব্যথা, বিরক্তি এবং ক্লান্তির কারণ হতে পারে। এই উপসর্গগুলো এড়াতে রমজান মাসের আগে থেকে ধীরে ধীরে এ ধরণের খাদ্য উপাদানগুলো পরিহার করা উচিত।কফি, এনার্জি ড্রিংক্স এবং চিনিযুক্ত স্ন্যাকসের বদলে ভেষজ চা এবং তাজা ফল খাওয়া শুরু করা যেতে পারে। চিনি ও ক্যাফেইনের এই ক্রমান্বয়ে হ্রাস শরীরকে আকস্মিক ধাক্কা থেকে রক্ষা করবে। এছাড়া পরিশোধিত চিনি গ্রহণ কমিয়ে দেওয়া রক্তে শর্করার মাত্রাকে স্থিতিশীল করে ও ক্ষুধা হ্রাস করে। এটি সারাদিন ধরে শক্তি ধরে রাখার জন্য যথেষ্ট কার্যকর।
ইবাদতে অভ্যস্থ হোন
রমজান শুধু পানাহার থেকে বিরত থাকার নাম নয়। এটি তাকওয়া অর্জনেরও মাস। ঘুম ও খাওয়া-দাওয়ার পাশাপাশি ইবাদত বন্দেগি এমনকি প্রতিটি কাজের জন্য নতুন রুটিনে অভ্যস্ত হতে হবে। যা রমজানে আপনাকে ক্লান্তি থেকে অনেকটা মুক্ত রাখবে। ইবাদত বাড়িয়ে দিতে করতে সহায়ক হবে। এক্ষেত্রে নফল নামাজ ও কোরআন তেলাওয়াতের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারেন।
অসুস্থরা যেভাবে প্রস্তুতি নেবেন
অসুস্থতা প্রকারভেদে চিকিৎসকের কাছ থেকে রোজা পালনের সক্ষমতা বা অক্ষমতা ও জটিলতা বিষয়ে পরামর্শ নিয়ে নেবেন। খাদ্য তালিকা পুনর্বিন্যাস, রমজানে ওষুধের মাত্রা নির্ধারণ ও গ্রহণের পুনর্বিন্যাস জেনে নিতে হবে, যাতে রমজানের রোজা পালন ও অন্যান্য ইবাদতে সমস্যা না হয়।
মূলত এই প্রস্তুতি শরীরে শক্তির ভারসাম্য এবং ইবাদতে মনোনিবেশে সহায়তা করে, যা রমজানের ধর্মীয় মাহাত্ম্য বজায় রাখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়া রমজান পরবর্তী তিন বেলা আহারের জীবনে ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রেও এসব প্রস্তুতি সহায়ক। আসুন, প্রস্তুতি শুরু করি। আল্লাহ তাআলা আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন।
আপনার মতামত লিখুন :