ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি রোজা। রমজান মাসে রোজা রাখা প্রত্যেক সুস্থ ও সক্ষম মুসলমানের জন্য ফরজ। নবীজী (স) বলেছেন, তোমরা রোজা রাখো যেন সুস্থ থাকতে পারো। তাই নবী-রসুলরা এ মাসটি রোজা রাখা, আত্মশুদ্ধি ও সৃষ্টির সেবার মাঝে কাটাতেন।
মাহে রমজানের সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি
সারাদিন না খেয়ে থাকা মানে রোজা রাখা নয়। ভরপেট সেহরি-ইফতার করাতে রোজার মাহাত্ম্য বাড়ে না। রমজানে প্রয়োজন আত্মশুদ্ধির আপ্রাণ চেষ্টা। তাই শুধু খাবারে নয়—চিন্তা, কথা ও আচরণেও সংযমী হোন।
আরেকটি রমজান মাস পাওয়ায় নিজেকে ভাগ্যবান মনে করুন। দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণে পরিকল্পিতভাবে এ মাসটিকে কাজে লাগান।
রমজানকে কেনাকাটাসর্বস্ব করে তুলবেন না। রমজান আসার আগেই ঈদের কেনাকাটা সম্পন্ন করুন।
কীভাবে রমজানের প্রতিটি দিন অতিবাহিত করবেন তার রুটিন করুন। এসময় রোজা রাখা ও আনুষঙ্গিক ইবাদতকেই প্রাধান্য দিন।
সেহরিতে রমজানে খাবার মেন্যু
পরিমিত ভাত-সবজি/ কলা-খেজুর/ দই-চিড়া খান।
মাছ-গোশত জাতীয় প্রোটিন এবং তেলেভাজা খাবার বর্জন করুন।
সেহরিতে পর্যাপ্ত পানি পান করুন। এতে সারাদিন পানির তৃষ্ণা কম অনুভূত হবে।
সেহরিতে ডাল ও ডিম এড়িয়ে চলুন।
সেহরিতে খিচুড়ি খাবেন না। খিচুড়ি পানির তৃষ্ণা বাড়ায়।
ইফতারে খাবার মেন্যু
মাগরিবের আজান দিলে খেজুর ভালোভাবে চিবিয়ে খেয়ে পানি পান করুন।
মাগরিবের নামাজ পড়ে রাতের খাবার হিসেবে ভাত, শাকসবজি, মাছ/গোশত/ডিম, ডালসহ অন্যান্য সুষম খাবার খান।
ঢেঁকিছাঁটা লাল চালের ভাত বেশি উপকারী। কোষ্ঠকাঠিন্য ও এসিডিটি থেকে মুক্তি পেতে শাকসবজির পরিমাণ বাড়িয়ে দিন।
ভাজাপোড়া, মশলাদার, গুরুপাক ও অস্বাস্থ্যকর খাবার বর্জন করুন।
বর্জন করুন ইফতার ও সেহরি পার্টি
খাদ্য-উৎসবের নয়, খাদ্যসংযমের মাস রমজান।
স্ট্যাটাস বাড়াতে বিলাসবহুল হোটেল/রেস্তোরাঁ/খাদ্যমেলায় ইফতার/সেহরি পার্টিতে অংশ নেবেন না।
দাওয়াতে গেলে খেজুর ও পানি দিয়ে ইফতার করুন। রকমারি ভাজাপোড়া, তৈলাক্ত খাবার থাকলে এড়িয়ে চলুন।
সেহরির পরে করণীয়
দাঁত ব্রাশ ও ওজু করে কিছুক্ষণ বজ্রাসনে বসুন।
আল কোরআন বাংলা মর্মবাণী অডিও শুনতে থাকুন।
ফজরের নামাজ আদায়ের পর আল কোরআন বাংলা মর্মবাণী পড়তে পারেন।
ইফতারের আগে পালনীয়
গৃহকর্মী ও অধীনস্থদের নিয়ে একসঙ্গে ইফতার করুন।
ইফতারের ১৫ মিনিট আগে খেজুর-পানি সামনে নিয়ে বসুন।
নিজের জন্যে বিশেষ প্রার্থনায় ডুবে যান এবং অন্যদের জন্য দোয়া করুন।
রোজার শারীরিক উপকারিতা
রোজা বা উপবাস মস্তিষ্কের বয়সজনিত রোগ যেমন আলঝেইমার্স, হান্টিংটন্স বা পার্কিনসন্স-এর ঝুঁকি কমায়।
রোজা দেহের অতিরিক্ত টক্সিনের বিনাশ ঘটায়।
রোজা দেহের অভ্যন্তরে সৃষ্ট টক্সিনের বিনাশ ঘটায় এবং শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমায়, যা ডায়াবেটিসকে প্রতিহত করতে সাহায্য করে।
এসিডিটি, আলসার, উচ্চ রক্তচাপ, পেটব্যথার উপশমেও রোজা গুরুত্বপূর্ণ।
রমজানে বর্জনীয়
পানি পান না করে থাকতে হবে! এ ধরনের চিন্তা করা।
দেরিতে ইফতার করা।
ইচ্ছাকৃতভাবে সেহরি না খাওয়া বা ইফতার ও সেহরিতে অতিরিক্ত খাবার খাওয়া।
ক্ষুধায় কাতর হয়ে অন্যদের সাথে খিটখিটে আচরণ করা।
শেষের ১০ দিন কেনাকাটায় ব্যস্ত থাকা।
রমজানে ইবাদত
রমজান মাসের নফল ইবাদত ফরজ আদায়ের সমান সওয়াবের।
রোজার মূল লক্ষ্য আল্লাহ-সচেতনতা (তাকওয়া) বৃদ্ধি করা।
নামাজ আদায়ের পর ‘সুবহানাল্লাহ’, ‘আলহামদুলিল্লাহ’, ‘আল্লাহু আকবর’ পড়ুন।
তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করুন।
শবে কদর (রমজানের শেষ ১০ দিনের বেজোড় রাতে) ইবাদত করুন।
আত্মশুদ্ধির পথে ধাপে ধাপে
পরচর্চা ও গীবত থেকে বিরত থাকুন।
ধৈর্য ও সহনশীলতা অনুশীলন করুন।
রমজান মাসে আত্মিক পবিত্রতা অর্জনকেই বেশি গুরুত্ব দিন।
স্মার্টফোনের ভার্চুয়াল ভাইরাস থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আসক্তি কমান।
রমজান মাস আত্মশুদ্ধির, সংযমের এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাস। এই মাসে ইবাদত, সংযম ও আত্মিক পরিশুদ্ধির মাধ্যমে আত্মার পরিশুদ্ধি লাভ করা সম্ভব।
আপনার মতামত লিখুন :