প্রতিটি মুসলমানের জন্য রোজা ফরজ। বিভিন্ন নবী-রাসূলদের জামানায় এ রোজা ফরজ ছিল। উম্মতে মুহাম্মাদির ওপর এরই ধারাবাহিকতায় রোজা ফরজ করা হয়েছে। সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকবে হয়। এমনকি যাবতীয় অনাচার থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি স্ত্রী সহবাসেও বিধি-নিদেশ আরোপ করা হয়েছে। এমতাবস্থায় অনেকের মনেই প্র্রশ্ন থাকে যে, রোজা অবস্থায় স্ত্রী সহবাস, স্ত্রীকে জড়িয়ে ধরা বা চুমু খাওয়া যাবে কি না? এ বিষয়ে শরয়ীহ বিধান কী?
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে ইমানদারগণ, তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন রোজা ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’ (সূরা আল বাকারা, আয়াত: ১৮৩)।
মাকরুহ অর্থ অপছন্দনীয়। যেসব কাজ করলে গুনাহ হয় না; তবে ইসলামে অপছন্দ করা হয়েছে সেগুলোকে মাকরুহ বলে। রোজার ক্ষেত্রেও অনেক কাজ এমন রয়েছে, যেগুলো করলে রোজা ভঙ্গ হবে না। তবে এ ধরনের কাজ করা ঠিক নয়। যেমন: বীর্যপাত কিংবা সহবাসের আশংকা থাকাবস্থায় স্ত্রীকে চুম্বন করা। স্ত্রীর ঠোঁটে চুম্বন করা— বীর্যপাত বা সহবাসের আশঙ্কা থাকুক বা না থাকুক। বিবস্ত্র অবস্থায় স্ত্রীকে আলিঙ্গন করা ইত্যাদি।
রোজা অবস্থায় স্ত্রীকে চুম দেয়া বা আলিঙ্গন করা ইসলামে জায়েজ রয়েছে। এতে রোজার কোনো অসুবিধা হয় না। কেননা নবী করিম (সা.) রোজা অবস্থায় স্ত্রীকে চুম্বন করতেন, আলিঙ্গন করতেন। হজরত আয়শা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসূল (সা.) রোজা অবস্থায় স্ত্রীকে চুমু দিতেন এবং আলিঙ্গন করতেন। কিন্তু আপন (জৈবিক) চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতার অধিকারী (বুখারী ১৮৪১ মুসলিম ১১২১)।’
তবে, গোসল ফরজ হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরির আশঙ্কা থাকলে এমনটি করা মাকরুহ। বিশেষ করে যুবকদের এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। হাদিসে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা.) বলেন, ‘আমরা নবী (সা.)-এর কাছে বসা ছিলাম। তখন এক যুবক এলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, আমি কি রোজা রেখে চুমু খেতে পারি?’ নবী (সা.) বললেন, ‘না।’ এরপর এক বৃদ্ধ এলেন এবং একই প্রশ্ন করলেন। নবী (সা.) বললেন, ‘হ্যাঁ।’
আমরা তখন অবাক হয়ে একে অপরের দিকে তাকাচ্ছিলাম। নবী (সা.) বললেন, ‘আমি জানি, তোমরা কেন একে অপরের দিকে তাকাচ্ছ। শোনো, বৃদ্ধ নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন (মুসনাদে আহমদ: ২ / ১৮০ ও ২৫০)।’
তবে রোজা রেখে চুম্বন বা আলিঙ্গনের কারণে যদি বীর্যপাত হয়ে যায় তাহলে দিনের বাকি অংশ রোজা অবস্থায় থেকে পরে রোজার কাজা আদায় করতে হবে। কাফ্ফারা আদায় করতে হবে না। এটা অধিকাংশ আলেমদের মত। চুমু বা আলিঙ্গনের কারণে যদি মজি বের হয় তবে, এতে রোজার কোনো ক্ষতি করে না। এটা অধিকতর বিশুদ্ধ মত।
রোজাদারের জন্য সে যুবক হোক বা বৃদ্ধ, স্ত্রীকে চুমু দেয়া এবং আলিঙ্গন করা জায়েজ, যদি যৌন তাড়নার বশবর্তী হয়ে সহবাসে লিপ্ত বা বীর্যপাত হবে না বলে নিজের ওপর দৃঢ় অবস্থা থাকে। তাই তার রোজা নফল হোক বা ফরজ, রমজানে হোক বা অন্য কোনো মাসে। আলিঙ্গন দ্বারা উদ্দেশ্য গায়ে গা মিলানো। যেমন- স্পর্শ করা বা জড়িয়ে ধরা। আলিঙ্গন এখানে স্ত্রী সহবাসের উদ্দেশ্য নয়, কারণ স্ত্রী সহবাস করলে অবশ্যই রোজা ভেঙে যাবে।
রমজান মাসে রাত্রে সেহেরি খাওয়ার আগে স্বামী ও স্ত্রী মিলন করা যাবে। রোজা অবস্থায় সহবাস করা যাবে না। কিন্তু রোজা অবস্থায় চুম্বন করা যাবে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘আমি তোমাদের জন্য ধর্মকে সহজ করতে চাই। তাই তোমরা রমজান মাসে রাত্রে স্ত্রী গমন করলে তোমাদের কোনো পাপ নেই।’