মহিমান্বিত মাহে রমজান। মুমিনের প্রিয় মাস। বছর ঘুরে আবার এসেছে বছরের সেরা ও মহিমান্বিত মাস। আল্লাহর পক্ষ থেকে অনুগ্রহ-অনুকম্পা, ক্ষমা ও নাজাতপ্রাপ্তির মাস পবিত্র রমজান। অবশেষে গতকাল এ মাসের আগমনের অপেক্ষার অবসান হলো। রমজানের রহমত, বরকত ও মাগফিরাত উপস্থিত হওয়ায় ধর্মপ্রাণ মানুষ মহাখুশি। জীবনকে উন্নত ও অর্থবহ করার প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য রমজানের রোজার গুরুত্ব অপরিসীম।
কারণ এ মাসেই নাজিল হয়েছে পবিত্র কোরআন মাজিদ। এ মাসেই রয়েছে পবিত্র শবেকদর। আর কদরের রাতের ইবাদত হাজার মাসের ইবাদতের সমতুল্য। তাই সাহাবিদের রমজানের প্রস্তুতি নেওয়ার প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন স্বয়ং রাসুলুল্লাহ (সা.)। এই মাসে অধিক ইবাদতের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়াও করেছেন তিনি। এজন্যই রমজানের শুরু থেকেই একটি সুস্পষ্ট পরিকল্পনা করা জরুরি।
এই রমজান যেন অতীতের যেকোনো রমজানের চেয়ে বেশি বরকতময় হয়, সে লক্ষ্যে নিজেকে প্রস্তুত করা প্রয়োজন। নামাজ, রোজা, দান-সদকাহ, ইসতেগফার ও কোরআন তিলাওয়াতের পরিকল্পনা করা উচিত। একজন মুমিনের রমজান কেমন হওয়া উচিত, তা নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো।
বেশি বেশি দোয়া করা: আল্লাহ তার বান্দার দোয়া শুনেন ও কবুল করেন। তাই আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করা। আল্লাহ বলেন, বলুন, আমি কাছেই আছি। আমি দোয়া কবুল করি, যখনই কেউ আমাকে ডাকে। (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৬)
রমজানের বিধান জানা এবং মানা: রমজানের আমলাদি সম্পর্কে জানা এবং আমল ও মাসায়েল শেখা গুরুত্বপূর্ণ। কোন কাজ করা করণীয় এবং কোনটি বর্জনীয়, সে সম্পর্কে সচেতন হওয়া। প্রয়োজনে বিশ্বস্ত আলেমের থেকে মাসায়েল জেনে আমল করা উচিত।
নামাজে মনোযোগী হওয়া ও গুনাহ পরিত্যাগ করা: রমজানের শুরু থেকেই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সঙ্গে পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা দরকার। পাশাপাশি নিজের জীবনে যত নামাজ কাজা হয়েছে, সেগুলো আদায়ে তৎপর হওয়া। রমজানের বরকত লাভের জন্য গুনাহ ও খারাপ অভ্যাস বর্জন করা প্রয়োজন। পাপাচার ও অপবিত্রতা নিয়ে রমজানে প্রবেশ করলে পূর্ণ ফজিলত পাওয়া যাবে না।
কোরআন তিলাওয়াত করা: রমজানের শুরু থেকেই কোরআন তিলাওয়াতের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। যারা নিয়মিত পড়েন না, তারা শিখে নেওয়ার চেষ্টা করুন। যারা পড়েন, তারা বেশি বেশি খতম দেওয়ার পরিকল্পনা করুন। এমন হতে পারেÑ প্রতি নামাজের পর ৪ পৃষ্ঠা করে পড়লে সহজেই দিনে এক পারা তিলাওয়াত হয়ে যাবে। এবং ৩০ দিনে এক খতম খুবই সহজে হয়ে যাবে।
সাধ্য অনুযায়ী দান-সদকাহ করা : রমজানের অন্যতম বিশেষ আমল হলো সাধ্য অনুযায়ী দান-সদকাহ করা। গরিব-দুঃখীদের সহায়তা করা, ইফতার-সাহরির ব্যবস্থা করা এবং অভাবীদের দিকে সহানুভূতির হাত বাড়ানো গুরুত্বপূর্ণ। রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, আল্লাহ বলেন, হে আদম সন্তান, দান করো, আমিও তোমাদের জন্য ব্যয় করব। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২১৯৮)
এই প্রস্তুতিগুলো নেওয়া হলে, মুমিনের জন্য এটি হবে এক অনন্য, বরকতময় রমজান মাস। আল্লাহ আমাদের সবাইকে রমজানের যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণের তাওফিক দান করুন। আমিন।
লেখক : গণমাধ্যমকর্মী