রোজা না রাখার শাস্তি

জামিল আহমদ

প্রকাশিত: মার্চ ৩, ২০২৫, ০৯:৪৭ এএম

রোজা না রাখার শাস্তি

বছরের সবচেয়ে মহিমান্বিত মাস রমজান। মুমিনের অত্যন্ত প্রিয় মাস। আল্লাহর পক্ষ থেকে অনুগ্রহ-অনুকম্পা, ক্ষমা ও নাজাতপ্রাপ্তির মাস। পবিত্র এই মাস কোরআন অবতীর্ণের মাস। 

রমজানের রোজাকে ফরজ নির্ধারণ করে আল্লাহ ঘোষণা করেন, হে ঈমানদারগণ, তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমনভাবে তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল; যাতে তোমরা তাকওয়া (আল্লাহর ভয়) অবলম্বন করতে পারো। 

(সুরা: বাকারা, আয়াত : ১৮২) রোজার প্রতিদান বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মানবসন্তানের প্রতিটি নেক আমলের প্রতিদান ১০ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। আল্লাহতায়ালা বলেন, কিন্তু রোজার বিষয়টি ভিন্ন। কেননা, রোজা শুধু আমার জন্য, আমিই তার প্রতিদান দেব।’ (মুসলিম-১৫৫১) রমজানে রোজার বিধান পালন করা মুমিনের মৌলিক দায়িত্ব। এটি তার পরকালে সফলতার পথ দেখায়। 

কিন্তু রমজানের রোজা না রাখলে তার শাস্তিও রয়েছে ভয়াবহ। আর এ শাস্তি দুনিয়াতেও ভোগ করতে হয়, আখেরাতেও। রোজা না রাখলে মহান আল্লাহ ও রাসুলের অবাধ্যতা প্রকাশ পায়। একজন মুমিনের জন্য এমনটা কখনোই কাম্য নয়। এর জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। 

রোজার বিধান লঙ্ঘন করলে আধ্যাত্মিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়। তাই গুরুত্বসহ রোজা রাখা প্রত্যেক মুসলিমের ওপর আবশ্যকীয়। তবে রমজানে অসুস্থ, অতিবৃদ্ধ, মুসাফির, গর্ভবতী নারীর জন্য রোজা না রেখে পরবর্তীতে রোজার কাজা, কাফফারা, ফিদইয়া ইত্যাদি বদলা ব্যবস্থা স্থির করে শরিয়তে সুনির্দিষ্ট বিধিব্যবস্থা রয়েছে। রমজানের প্রতিটি রোজার পরিবর্তে একটি করে কাফফরা দিতে হবে।

কাফফারা হলো : একটি গোলাম মুক্ত করতে হবে। কারো গোলাম কেনার সামর্থ্য বা গোলামের অস্তিত্ব না থাকলে একাধারে ৬০টি রোজা রাখতে হবে। 

মধ্যখানে ভেঙে ফেলা যাবে না। ভেঙে ফেললে আবার শুরু থেকে ৬০টি রোজা রাখতে হবে। যদি এটারও সক্ষমতা কারও না থাকে তাহলে ৬০ জন মিসকিন-ফকিরকে গম, ভুট্টা, চাল, খেজুর, অর্থ বা অন্য কিছু মূল্যবান বস্তু প্রদান করতে হবে; তবে শর্ত হলো- এসব সদকায়ে ফিতর সমপরিমাণ হতে হবে। (বাদায়েউস সানায়ে ২/২৫৪)

নবীজি (সা.) বিনা কারণে রোজা ভঙ্গকারীদের শক্তভাবে ধমক দিয়েছেন। বিনা কারণে রমজানের রোজা ভেঙে ফেলা কবিরা গুনাহ। ইমাম জাহাবি রহ. তার লিখিত গ্রন্থ ‘আল কাবাইর’-এ লিখেন, শরয়িত বৈধতা ব্যতীত রোজা ভঙ্গ করা কবিরা গুনাহ। 

এ কথা মুমিনদের নিকট স্বতঃসিদ্ধ, স্বীকৃত বিষয়, কোনো ধরনের অসুস্থতা ছাড়াই রোজা ভঙ্গকারী, জিনাকারী, অন্যায়ভাবে শুল্ক আদায়কারী ও মদ্যপ থেকেও নিকৃষ্ট। ইসলামি বিশেষজ্ঞরা তার মুসলমান হওয়ার ব্যাপারে সংশয় পোষণ করেন এবং তার প্রতি নাস্তিকতার ধারণা রাখেন। 

শরিয়তসম্মত কারণ ছাড়া যে ব্যক্তি ইচ্ছাকৃত একটি রোজাও পরিত্যাগ করে, সে নিকৃষ্ট পাপী। দ্বীনের মৌলিক ফরজ লঙ্ঘনকারী। ঈমান ও ইসলামের ভিত্তি বিনষ্টকারী রূপে পরিগণিত। 

আর এ কারণে তার যে ক্ষতি হবে তা কস্মিনকালেও পূরণ হবে না। এমনকি পরে কাজা করে নিলেও রমজানের রোজার বরকত থেকে সে বঞ্চিত হবে। হাদিসে এসেছে, যে ব্যক্তি কোনো অসুস্থতা ছাড়া রমজানের একটি রোজা পরিত্যাগ করবে, সে যদি ওই রোজার পরিবর্তে আজীবন রোজা রাখে, তবুও ওই এক রোজার ক্ষতিপূরণ হবে না। আল্লাহ আমাদের গুরুত্বপূর্ণ ফরজ বিধান, রমজানের রোজা সঠিকভাবে পালন করার তাওফিক দান করুন আমিন।
লেখক : গণমাধ্যমকর্মী
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!