কোরআন নাজিলের মাস রমজান। আর রমজানের অন্যতম বিশেষ ইবাদত তারাবিহ নামাজ। তারাবিহর নামাজের প্রধান উদ্দেশ্য কোরআন তেলাওয়াত করা ও শোনা।
এ নামাজেই মাসব্যাপী পূর্ণ কোরআন শরিফ তেলাওয়াত করা হয়। একে খতম তারাবিহ বলে। আবার ছোট ছোট সুরা দিয়েও তারাবিহ নামাজ পড়া যায়।
অনেকে এটাকে সুরা তারাবিহ বলে থাকে। খতম তারাবিহ কিংবা সুরা তারাবিহ উভয় ক্ষেত্রে ২০ রাকাত তারাবিহ পড়া উত্তম। রোজায় যতবেশি নামাজ পড়া যায় ততবেশি উত্তম।
যারা শরিয়তসম্মত কোনো গ্রহণযোগ্য ওজরের কারণে রোজা পালনে অক্ষম, তারাও সুযোগ ও সামর্থ্য থাকলে তারাবিহ আদায় করুন। পুরুষরা মসজিদে গিয়ে জামাতের সঙ্গে আর নারীরা নিজ নিজ ঘরে তারাবিহ আদায় করুন। শিশুরা বড়দের সঙ্গে সাধ্যমতো তারাবিহ পড়বে।
তারাবীহ’র অর্থ- বিশ্রাম করা, প্রশান্তি লাভ করা। এ নামাজে যেহেতু প্রতি চার রাকাত পর পর একটু বিশ্রাম নিয়ে তাসবিহ ও দোয়া পাঠ করা হয়, তাই এই নামাজকে তারাবীহ’র নামাজ বলা হয়।
তারাবীহ এশার ফরজ ও সুন্নত নামাজের পর এবং বিতিরের পূর্বে আদায় করা হয়। তারাবিহ’র নামাজ সুন্নাতে মুআক্কাদাহ। যেটা গুরুত্বের দিক থেকে ওয়াজিবের কাছাকাছি।
রাসুলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি রোজা ফরজ করেছেন, আর আমি তোমাদের জন্য তারাবিহ নামাজকে সুন্নত করেছি।
যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজানে দিনে রোজা পালন করবে ও রাতের নামাজ (তারাবীহ) আদায় করবে, সে গুনাহ থেকে এরূপ পবিত্র হবে, যেরূপ নবজাতক শিশু মাতৃগর্ভ থেকে নিষ্পাপ হয়ে ভূমিষ্ঠ হয়।’ (নাসাঈ)।
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে নেকীর আশায় তারাবিহ আদায় করবে, তার পূর্ববর্তী সকল গুনাহ ক্ষমা করা হবে।
(বুখারী ও মুসলিম) রাসুল (সা.) তারাবীহকে কতটুকু গুরুত্ব দিয়েছেন এবং তারাবিহ যেন ফরজ না হয়ে যায়, যেটা আদায়ে উম্মতের কষ্ট হতে পারে, সেটা রাসুল (সা.) এর একটি হাদিসে থেকেই বোঝা যায়। যা হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত।
তারাবিহ ২০ রাকাত সুন্নাত। এটা রাসুল (সা.), সাহাবী, তাবেঈন, তাবে-তাবেঈন এবং মুজতাহিদ ইমামগণের আমল দ্বারা প্রমাণিত।
হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) রমজান মাসে বিশ রাকাত এবং বিতির পড়তেন। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা) সমস্ত সাহাবীদের আমলও বিশ রাকাত ছিল।
রাসুল (সা.) এর নাতি হযরত আলী ইবনে হাসান (রা.) থেকে বর্ণিত, হযরত ওমর (রা.) এর নির্দেশে লোকদেরকে নিয়ে উবাই বিন কাব (রা.) বিশ রাকাত তারাবি পড়েছেন। (আবু দাউদ) এভাবে খলিফা ওমর, ওসমান, আলী (রা.) সহ সব সাহাবীর ঐকমত্যে বিশ তারাবিহ পড়া হয়েছে।
কোরআনে কারীম তিলাওয়াতের মতো শুনলেও একই রকম সওয়াব। এজন্য তারাবি নামাজে পরিপূর্ণ আদবের সাথে মনোযোগ দিয়ে কোরআন শুনতে হবে। ২০ রাকাত না পড়ে ইমামকে রেখে মসজিদ ত্যাগ করা উচিত নয়। রাসুল (সা০) বলেন, যে ব্যক্তি ইমামের সাথে শেষ পর্যন্ত কিয়ামুল লাইল তথা তারাবি আদায় করবে, তার জন্য পুরো রাত সিয়াম পালনের সওয়াব লাভ হবে। (তিরমিজি)
রমজানের বিশেষ ফজিলত পূর্ণ আমল তারাবিহ’র নামাজে কোনোভাবেই অবহেলা করা উচিত নয়। আসুন আমরা যথাযথ গুরুত্বের সাথে তারাবিহ’র নামাজ আদায় করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করি। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন। আমিন
লেখক : গণমাধ্যমকর্মী