ঢাকা মঙ্গলবার, ০৪ মার্চ, ২০২৫

ইফতারের সময় যে আমলের কথা ভুলে যাবেন না

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: মার্চ ৪, ২০২৫, ০৫:২৭ পিএম
ছবি: সংগৃহীত

পবিত্র রমজানের মাসের অন্যতম অনুষঙ্গ হলো ইফতার। আর রোজাদারের জন্য ইফতার করা সুন্নত। রোজা শেষ করার উদ্দেশ্যে সূর্যাস্তের পরে পানাহার করাকে ইফতার বলে। এই সময়ের অনেক মূল্য রয়েছে ইসলামে। জাবির (রা.) বলেন, রাসূল (স.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা প্রতিদিন ইফতারের সময় অসংখ্য জাহান্নামিকে মুক্তি দেন। আর প্রতিরাতেই তা সংঘটিত হয়ে থাকে।’ (ইবনে মাজাহ: ১৬৪৩)

ইফতারের সময়
সূর্য অস্ত গেলে ইফতারের সময় হয়। ওমর ইবনে খাত্তাব (রা.) বলেন, রাসূল (স.) বলেন, ‘যখন রাত সেদিক থেকে ঘনিয়ে আসে এবং দিন এদিক থেকে ওদিক চলে যায় এবং সূর্য ডুবে যায় তখন রোজার ইফতার করবে।’ (বুখারি: ১৮৩০)

ইফতারের সময় কিছু আমলের অনেক গুরুত্ব রয়েছে। বিশেষ করে দোয়া করা, ইফতারে বিলম্ব না করা এবং অন্যকে সঙ্গে নিয়ে ইফতার করা অনেক বরকতপূর্ণ আমল। হাদিসের আলোকে এখানে ইফতারের সময়ের সুন্নত আমলগুলো তুলে ধরা হলো।

দোয়া করা
ইফতারির সময়টাতে গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল হলো দোয়া করা। এই সময়ে দোয়া কবুলের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূল (স.) বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া রদ হয় না। ন্যায়পরায়ণ বাদশাহ, সাওম পালনকারী—যতক্ষণ না সে ইফতার করে এবং মজলুমের দোয়া। কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা এই শ্রেণির মর্যাদা এ মেঘমালার ওপর রাখবেন এবং তাদের জন্য আসমানের দ্বারসমূহ উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। আর আল্লাহ বলবেন, আমার ইজ্জতের কসম! একটু পরে হলেও আমি অবশ্যই তোমাকে সাহায্য করব। (তিরমিজি: ৩৫৯৮; ইবনে মাজাহ: ১৭৫২)

ইফতারের আগমুহূর্তে যেকোনো দোয়া করা যায়। হাদিসে বর্ণিত দোয়াগুলো পাঠ করা উত্তম। ওই সময় এই ছোট্ট দোয়া পাঠ করা যায়—‘ইয়া ওয়াসিআল মাগফিরাহ ইগফিরলি।’ (শুয়াবুল ঈমান: ৩৬২০)

ইফতারে বিলম্ব না করা
ইফতারের সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করতে হয়। বিনা কারণে বিলম্ব করা সুন্নতের পরিপন্থী। সাহল ইবনে সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেছেন, ‘লোকেরা যত দিন ওয়াক্ত হওয়া মাত্র ইফতার করবে তত দিন তারা কল্যাণের ওপর থাকবে।’ (বুখারি: ১৮৩৩; মুসলিম: ২৪২৫) যথাসময়ে ইফতারকারী ব্যক্তি আল্লাহর প্রিয়। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (স.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, আমার কাছে প্রিয়তম বান্দা সে যে অবিলম্বে ইফতার করে। (তিরমিজি: ৭০০)

অন্যদের ইফতার করানো
রমজান সহমর্মিতা ও সমবেদনার মাস। ইফতারি শুধু নিজের জন্য নয়, আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীর প্রতিও খেয়াল রাখতে হয়। তাদের ইফতারি খাইয়ে অফুরন্ত সওয়াব পাওয়া যায়। জায়েদ ইবনে খালিদ জুহানি (রা.) বলেন, রাসূল (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি সাওম পালনকারীকে ইফতার করায় তার জন্য আছে তাদের অনুরূপ সওয়াব। আর এতে তাদের কারো সওয়াবের কিছু কম হবে না।’ (ইবনে মাজাহ: ১৭৪৬)

ইফতার করার নিয়ম
পানি এবং খেজুর দ্বারা ইফতার শুরু করা সুন্নত। খাবারের অন্যান্য সুন্নত এক্ষেত্রে প্রযোজ্য। ইফতারে ভাজাপোড়ার পরিবর্তে দেশীয় ফলমূল খাওয়া উত্তম। সালমান ইবনে আমির (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারিম (স.) ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের কেউ যদি ইফতার করে, তবে সে যেন খেজুর দিয়ে ইফতার করে। ইবনে উয়াইনা একটু বর্ধিত করেছেন, ‘এতে বরকত আছে। কেউ যদি তা না পায়, তবে সে যেন পানি দিয়ে ইফতার করে। কেননা পানি অতি পবিত্র।’ (তিরমিজি: ৬৯৫; আবু দাউদ: ২৩৪৭)

দোয়ার মাধ্যমে ইফতার খাওয়া শুরু করতে হয়। মুআজ ইবনে জোহরা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) ইফতারের সময় এই দোয়া পড়তেন—اَللّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَعَلي رِزْقِكَ اَفْطَرْتُ উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু ওয়ালা রিজকিকা আফতারতু।’ অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমারই জন্য রোজা রেখেছি, এবং তোমারই দেয়া রিজিক দ্বারা ইফতার করছি।’ (আবু দাউদ: ২৩৫০, মুজামুল আওসাত: ৭৫৪৯)

রাসূল (স.) ইফতারশেষে এ দোয়া পাঠ করতেন—ذَهَبَ الظَّمَأُ وَابْـتَلَّتِ العُرُوْقُ وَثَبَتَ الاَ جْرُ اِنْ شَاءَ الله ‘জাহাবাজ জামাউ ওয়াব তাল্লাতিল উরুকু ওয়া সাবাতাল আজরু ইনশা-আল্লাহু।’ অর্থ: (ইফতারের মাধ্যমে) পিপাসা দূর হলো, শিরা-উপশিরা সিক্ত হলো এবং যদি আল্লাহ চান সাওয়াবও স্থির হলো। (আবু দাউদ: ২৩৫৭)