আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে অবস্থান করা মুসলিম নভোচারীদের জন্য রমজানের রোজা পালন করা একটি অনন্য চ্যালেঞ্জ। মহাশূন্যে এই গবেষণাগারটি প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ২৭,৬০০ কিলোমিটার গতিতে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে, ফলে নভোচারীরা দিনে ১৬ বার সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত প্রত্যক্ষ করেন। এ অবস্থায় সূর্যাস্তের সময় অনুসরণ করে রোজা রাখা কীভাবে সম্ভব?
সম্প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রথম মহাকাশচারী সুলতান আলনেয়াদি ছয় মাসের জন্য মহাকাশে পাড়ি জমিয়েছেন। তার এই মহাকাশ মিশনের সময়েই পৃথিবীতে পালিত হচ্ছে পবিত্র রমজান। ফলে অনেকের মনে প্রশ্ন জেগেছে, তিনি কীভাবে রোজা পালন করবেন?
ইসলামি নির্দেশনা ও সমাধান
আলনেয়াদি ব্যাখ্যা করেন, ইসলাম ধর্মে সফরকারীদের জন্য রোজা না রাখার অনুমতি রয়েছে। যেহেতু তিনি একজন মহাকাশচারী, তাই ইসলামি বিধান অনুসারে তার রোজা ভাঙার অনুমতি আছে। তিনি বলেন, অসুস্থ হলে রোজা রাখা বাধ্যতামূলক নয়। কাজেই যদি আমাদের মিশনের জন্য শারীরিকভাবে শক্ত থাকতে হয়, তাহলে রোজা ভাঙার অনুমতি রয়েছে।
মালয়েশিয়ার প্রথম নভোচারী শেখ মুজাফর শুকুর ২০০৭ সালে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে অবস্থান করেছিলেন। সে সময় মালয়েশিয়ার ন্যাশনাল ফতোয়া কাউন্সিল তার জন্য বিশেষ ধর্মীয় নির্দেশিকা জারি করেছিল। এতে বলা হয়, নভোচারীরা চাইলে পৃথিবীতে ফিরে রোজা রাখতে পারেন অথবা পৃথিবীর যে সময় অনুসারে তারা যাত্রা করেছেন, সেই সময় অনুযায়ী রোজা পালন করতে পারেন।
নামাজ ও অন্যান্য ধর্মীয় আচার
শূন্য মাধ্যাকর্ষণে ধর্মীয় আচার পালন করাও বেশ চ্যালেঞ্জিং। মালয়েশিয়ার ফতোয়া কাউন্সিল শেখ মুজাফরকে জানিয়েছিল, কিবলামুখী হয়ে নামাজ পড়া সম্ভব না হলে তিনি সুবিধাজনক দিকের দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করতে পারেন। হাঁটু গেড়ে বসাও বাধ্যতামূলক নয়, তিনি স্বাভাবিকভাবে নামাজ পড়তে পারবেন।
ধর্মীয় আচার পালন মহাকাশ ভ্রমণের শুরু থেকেই চলে আসছে। ১৯৬৮ সালে নাসার অ্যাপোলো ৮ মিশনের নভোচারীরা চাঁদে যাওয়ার পথে বাইবেলের জেনেসিস পাঠ করেছিলেন। সেই ধারাবাহিকতায় মুসলিম নভোচারীরাও মহাশূন্যে তাদের ধর্মীয় আচার পালন অব্যাহত রেখেছেন।
রোজা পালন করা হবে কীভাবে?
সুলতান আলনেয়াদি জানিয়েছেন, তিনি সম্ভবত কোঅর্ডিনেটেড ইউনিভার্সেল টাইম (UTC) বা গ্রিনিচ মান সময় অনুসারে রোজা রাখতে পারেন, যেটি আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের স্বীকৃত টাইম জোন। তবে এটি নির্ভর করবে তার শারীরিক সক্ষমতা ও মিশনের প্রয়োজনীয়তার ওপর।
মহাকাশে মুসলিমদের রোজা রাখার বিষয়টি ইসলামি ফতোয়ার মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব হয়েছে। ভবিষ্যতে চাঁদ বা মঙ্গল গ্রহে স্থায়ী বসবাস শুরু হলে এই বিষয়ে আরও নতুন সিদ্ধান্ত আসতে পারে।