ঢাকা বুধবার, ০৫ মার্চ, ২০২৫

রমজানে প্রতিবেশীর হক আদায়ের সুবর্ণ সুযোগ

জামিল আহমদ
প্রকাশিত: মার্চ ৫, ২০২৫, ১২:২৬ এএম
ছবি: সংগৃহীত

চলছে ইবাদতের মৌসুম পবিত্র রমজান। এ মাস হচ্ছে সংযমের মাস। ধনী তথা সামর্থ্যবানদের গরিবের কষ্ট, ক্ষুধা, তৃষ্ণা ও অভাব বোঝানোর মাস। এ সময়ও প্রতিবেশীর হক কতটুকু আদায় করছি, চিন্তা করা প্রয়োজন। 

কেননা মানুষের জীবনযাত্রায় প্রতিবেশীর গুরুত্ব অপরিসীম। দুঃখ-কষ্ট, আনন্দ-বেদনায় এই প্রতিবেশীই নিত্যসঙ্গী আমাদের। তবে  বাস্তবতা হলো, কখনো সামান্য রাগ, ক্ষোভ ও ঝগড়া-বিবাদকে কেন্দ্র করে এই প্রতিবেশীর সঙ্গেই অনেক দূরত্ব তৈরি হয়ে যায়। 

এতে কথাবার্তা তো নয়ই, পারস্পরিক দেখাদেখিও বন্ধ হয়ে যায়। সামাজিক কারণে ঝগড়া-বিবাদ হতেই পারে। এসব জিইয়ে রাখা উচিত নয়। 

আর ইসলাম প্রতিবেশীর অধিকারকে মা-বাবা ও আত্মীয়-স্বজনের অধিকারের পাশেই স্থান দিয়েছে। নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তাদের সঙ্গে সদ্ব্যবহারের। রাসুল (সা.) বলেছেন, আল্লাহর কাছে সঙ্গীদের মধ্যে উত্তম সঙ্গী হলো সেই ব্যক্তি, যে তার নিজের সঙ্গীর কাছে উত্তম। আল্লাহর দৃষ্টিতে প্রতিবেশীর মধ্যে উত্তম প্রতিবেশী হলো সেই প্রতিবেশী, যে তার নিজের প্রতিবেশীর কাছে উত্তম। (তিরমিজি)। 

একবারও ভাবছি আমাদের প্রতিবেশীর কথা। না ভাবলে ভাবা প্রয়োজন। হয়তো ভাবছি ঈদে বাড়ি গেলে দরিদ্র প্রতিবেশীকে জাকাত-ফিতরা দেব। 

কিন্তু আর রমজান মাস হতে পারে প্রতিবেশীর হক আদায় করার সুর্বণ সুযোগ। যদি এই রমজানে তাকে সাদকাহ দিই, তাহলে এর প্রতিদান পাওয়া যাবে অন্যান্য সময়ের চেয়ে দশগুণ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত বেশি। 

সুতরাং ফিতরার চিন্তা করার আগেই এই রমজানে গরিব প্রতিবেশীর পাশে দাঁড়াই। তাদের ইফতার দিয়ে সহযোগিতা করি। শুধু নিজের রুচিকর ইফতার নিয়ে ব্যস্ত থাকলেই চলবে না। 

কিয়ামতের কঠিন দিনে আমাদের এই গরিব প্রতিবেশীর ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এটা মনে রাখা উচিত, রমজান চলে গেলে যেন আবার প্রতিবেশীদের ভুলে না যাই। রমজানে শিক্ষায় যেন সারা জীবন চলতে পারি সেই চেষ্টা করা উচিত। 

প্রকৃত ঈমানদারের বৈশিষ্ট্য হলো প্রতিবেশীর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা। কারণ প্রতিবেশীর প্রতি সদাচরণকে ঈমানের অনুষঙ্গ বলা হয়েছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, আল্লাহর শপথ সে (প্রকৃত) মুমিন নয়! আল্লাহর শপথ সে মুমিন নয়!

আল্লাহর শপথ সে মুমিন নয়! সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন, সে কে হে আল্লাহর রাসুল? রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তির অনিষ্ট থেকে তার প্রতিবেশী নিরাপদ নয়। (বুখারি, হাদিস : ৬০১৬)

ক্ষুধার্ত প্রতিবেশী রেখে যে মুমিন উদরপূর্তি করবে, ইসলাম তাকে পূর্ণাঙ্গ মুমিনের স্বীকৃতি দেয় না। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ওই ব্যক্তি মুমিন নয়, যে পেটপুরে খায় অথচ তার পাশের প্রতিবেশী না খেয়ে থাকে। (আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ১১২)

দরিদ্র ও অসহায়কে সহায়তা করা অনেক সওয়াবের কাজ। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই প্রতিবেশী দরিদ্রদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। পারস্পরিক সুসম্পর্ক বৃদ্ধির ক্ষেত্রে উপহার আদান-প্রদান খুবই কার্যকর। 

এতে ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়। প্রতিবেশীদের খুব সামান্য কিছু হলেও উপহার দিতে পারি। সেটা সুস্বাদু তরকারির ঝোলও হতে পারে। এক হাদিসে আছে, আল্লাহর রাসুল (সা.) হজরত আবু জর (রা.)-কে বললেন, ‘হে আবু জর, তুমি ঝোল (তরকারি) রান্না করলে তার ঝোল বাড়িয়ে দিয়ো এবং তোমার প্রতিবেশীকে তাতে শরিক করো।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৬২৫)। 

ফজিলতপূর্ণ রমজানের শেষ সময়ে এবং ঈদ সামনে রেখে আমাদের সবার উচিত প্রতিবেশীদের প্রতি ভালোবাসা ও  সহমর্মিতা প্রকাশ করা। সর্বোপরি তাদের অভাব-অনটনে সাহায্য-সহায়তার হাতকে প্রসারিত করা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাওফিক দান করুন।
লেখক : গণমাধ্যমকর্মী