পবিত্র মাহে রমজান আল্লাহর তরফ থেকে মুসলমানদের জন্য অনন্য নেয়ামত। এ মাস পার্থিব চিন্তা, স্বার্থ-ভেদাভেদ ভুলে সহমর্মী হওয়ার শিক্ষা দেয়। রমজানের শিক্ষা নিয়েএবার নিজের ফেরিভাইড ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন আলোচিত ইসলামিক চিন্তাবিদ শায়খ আহমাদুল্লাহ।
মঙ্গলবার (৪ মার্চ) দেওয়া ওই স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, ‘রোযাদারের অন্যতম আনন্দের মুহূর্ত ইফতার। আমরা যারা সামর্থ্যবান, প্রতিদিন হরেক রকমের মজাদার ইফতার করছি। কিন্তু ঘরের পাশের দরিদ্র মানুষটার খোঁজ কি একবারও নিয়েছি?
দরিদ্র মানুষকে ইফতার করানো রমাদানের গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটা শুধু ইবাদতই নয়, এটা আত্মপ্রশান্তিরও কারণ। তাই, এই রমাদানে প্রতিবেশীর ঘরে ১০ দিন, ২০ দিন কিংবা এক মাসের ইফতার কিনে পাঠাতে পারি। ধরুন, আপনার এলাকার বস্তিতে একজন রিকশাচালক থাকেন।
রমাদানে তিনি পরিবার নিয়ে সীমাহীন দুশ্চিন্তায় আছেন। তার ছোট ছোট সন্তানেরা মজাদার ইফতার খাওয়ার বায়না ধরেছে। কিন্তু কয়েক পদের ইফতার কেনার সামর্থ্য রিকশাচালক ভাইটির নেই। সন্তানদের সামনে তিনি পরাজিত মুখ করে মন খারাপ করে বসে আছেন।
এমন সময় আপনি ব্যাগ ভর্তি ইফতার নিয়ে তার বাড়িতে উপস্থিত হলেন। কল্পনা করুন, ঠিক সেই মুহূর্তে ওই বাড়িটির অবস্থা কেমন হবে! আপনার এক ব্যাগ বাজারের মাধ্যমে ওই বাড়িতে সুখের জান্নাত রচিত হবে। আবার আমরা অনেকেই দরিদ্রদের ইফতার কিনে দেই; কিন্তু সাহরির খবর রাখি না। অথচ রোযার শক্তি সঞ্চয়ের জন্য পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ সেহরিও জরুরি।
যখন বাজারে যাবেন, শুধু দরদামে ব্যস্ত না থেকে আশপাশে একটু চোখ রাখুন। দ্রব্যমূল্যের কারণে হঠাৎ গরিব হয়ে যাওয়া অনেক সম্ভ্রান্ত মানুষ পেয়ে যাবেন, একটা মাছের দিকে তারা করুণ চোখে চেয়ে আছে। তাদের সাধ আছে কিন্তু সাধ্য নেই। সম্ভব হলে বিনয়াবত মুচকি হেসে তার মাছটা কিনে দিন।
এতে আপনার কিছু পয়সা খরচ হবে বটে, কিন্তু অপার্থিব এক মানসিক প্রশান্তিতে ভরে উঠবে আপনার বুক। কারণ, নিজের খাবারের একাংশ অনাহারীর মুখে বিলিয়ে দেয়ার মাঝে যে অপার্থিব সুখ, সেই সুখ বন্ধ দরজায় একলা ভোগের মাধ্যমে কখনোই অর্জিত হয় না।
আপনার সহযোগিতায় যদি কষ্টে থাকা রোযাদারের মুখে হাসি ফোটে, আশা করা যায় মহান আল্লাহও আপনার প্রতি সন্তুষ্ট হবেন। কারণ হাদিসে এসেছে, রাসূল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো দুস্থের অভাব দূর করবে, মহান আল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাতে তার দুরবস্থা দূর করবেন।’
ওই পোস্টের মন্তব্যে তিনি আরও যুক্ত করেন, ‘ইফতার করানোর বিশেষ আরেকটি ফজিলত হলো, যতজনকে ইফতার করানো হয় ততজনের রোজার সওয়াব পাওয়া যায়। আমরা চাইলেও এক রমাদানে ত্রিশের অধিক রোযা রাখতে পারব না। কিন্তু দরিদ্রকে ইফতার করানোর মাধ্যমে আমরা অধিক রোযার সওয়াব পেতে পারি।’
আপনার মতামত লিখুন :