দুনিয়াজুড়ে চলছে মহিমান্বিত রমজান মাস। আর এই মাসের শুরুতেই ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় তীব্র দুর্ভোগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে সাধারণ মানুষ। সেহরি ও ইফতার আয়োজন করতে গিয়ে সীমাহীন সংকটে পড়েছেন দখলদার ইসরায়েলি হামলার ধ্বংসস্তূপের মাঝে ঠাঁই নেওয়া নারী-শিশুসহ গাজার লাখো মানুষ।
খাদ্যসংকট, বিশুদ্ধ পানির অভাব, নিরাপদ আশ্রয়ের অভাব, বৈরী আবহাওয়া এবং অবরুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে তাদের জন্য রমজান মাসের প্রতিটি মুহূর্তই চরম কষ্টের হয়ে উঠেছে। সেহরির সময় তারা তেমন কিছুই খেতে পারেননি। কেউ শুকনো রুটি বা খেজুর দিয়ে সেহরি করেছেন, আবার কেউ পানি পান করেই রোজা শুরু করেছেন।
দিনভর রোজা রাখার পর গাজার মানুষরা যখন ইফতারের অপেক্ষায় ছিলেন, তখনো তাদের কপালে জুটেছে চরম দুর্ভোগ। যুদ্ধবিরতির মধ্যে দখলদার ইসরায়েলের অবরোধের কারণে গাজায় খাদ্য সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। ফলে পর্যাপ্ত ইফতার সামগ্রী জোগাড় করা অধিকাংশ মানুষের পক্ষেই সম্ভব হয়নি।
একবার চিন্তা করুন, ফিলিস্তিনের মতো না হলেও আমাদের দেশেও তো এমন অনেক শিশু রয়েছে, যারা ঠিকমতো খাবার খেতে পায় না, মাথা গোজার ঠাঁইও হয় না। আমদের সমাজের যেসব শিশু গৃহহীন, ভবঘুরে, সুবিধাবঞ্চিত, আশ্রয়হীন পথের ধারে, রাস্তাঘাটে, রেলস্টেশনে বা রেললাইনের পাশে, বাসস্টেশনে বা রাস্তার পাশে, লঞ্চঘাটে বা ফেরিঘাটে অথবা পরিত্যক্ত কোনো জায়গায় নিরাপত্তাহীন ও অসহায়ভাবে রাত যাপন করে, তারা পথশিশু।
এরা আমাদের সমাজেরই অংশ। ধনীদের সম্পদে এদের নির্দিষ্ট অংশ পাওনা রয়েছে। আল্লাহ বলেন, আর তাদের সম্পদে প্রাপ্য নির্ধারিত হক বা অধিকার রয়েছে প্রার্থী ও বঞ্চিতদের। (সূরা-৫১ জারিয়াত, আয়াত: ১৯ ও সুরা-৭০ মাআরিজ, আয়াত: ২৫)।অগণিত পথশিশুদের প্রতি আমাদেরও রয়েছে দায়িত্ব।
নিজ নিজ সাধ্য অনুযায়ী যদি আমরা এগিয়ে আসি, তাহলে এক দিন আমাদের দেশেও পথশিশু থাকবে না। ইনশআল্লাহ। আর পথশিশুদের আর্থিক অধিকার রক্ষাও সুনিশ্চিত করেছে ইসলাম। কোরআনে পথশিশুদের সহায়তার কথা বলা হয়েছে। পথশিশুদের সহযোগিতা করলে রয়েছে অশেষ সওয়াব।
তাই, এবারের রমজানে কমপক্ষে এক দিন হলেও পথশিশুদের ইফতার করা, সেহরি করা আমাদের উচিত। আর পথশিশুদের জন্ম, পিতা-মাতা নিয়ে আপত্তিকর কথা বলা যাবে না। শিশুদের জন্মস্থান নিয়ে অসম্মানজনক কথা বলা যাবে না। পথশিশুদের বংশ, জাত, বর্ণ, পদবি নিয়ে উপহাস করা যাবে না।
পথশিশুদের শারীরিক গঠন, আকার-আকৃতি ও গায়ের রং নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করা যাবে না। পথশিশুদের বিশেষ কোনো স্বভাব নিয়ে ঠাট্টা-তামাশা করা যাবে না। পথশিশুর জীবনে ঘটে যাওয়া কোনো অযাচিত বা অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয় উল্লেখ করে তাকে বিব্রত করা যাবে না। তাদের সঙ্গে অশোভন আচরণ করা যাবে না।
আমরা কর্তব্য, সামাজিক দায়িত্ব ও মানবিক কারণে পথশিশুদের মৌলিক অধিকার, তথা খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা নিশ্চিত করে তাদের সুনাগরিক হওয়ার পথ সুগম করে দেব। পথশিশুদের মধ্যে মেয়ে বা কন্যাশিশুরা বেশি ঝুঁকির মধ্যে থাকে, তাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সহায়তা ও নিরাপদ আশ্রয় নিশ্চিত করতে হবে।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হজরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন, যার ঘর নাই আমার ঘর তার ঘর, যার বাবা নাই আমি তার পিতা, যার ঋণ পরিশোধ করার ক্ষমতা নাই আমি তার অভিভাবক। (বায়হাকি)।
ফজিলতপূর্ণ রমজানের শেষ সময়ে এবং ঈদ সামনে রেখে আমাদের সবার উচিত পথশিশুদের প্রতি ভালোবাসা ও সহমর্মিতা প্রকাশ করা। সর্বোপরি তাদের অভাব-অনটনে সাহায্য-সহায়তার হাতকে প্রসারিত করা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাওফিক দান করুন।
লেখক : গণমাধ্যমকর্মী