ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৬ মার্চ, ২০২৫

আজান চলাকালে সেহরি খাওয়া যাবে কি?

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: মার্চ ৬, ২০২৫, ০৫:০৭ পিএম
ছবি: সংগৃহীত

সেহরি মানে শেষ রাতের খাবার। আর সাহরি (সেহরি নামে যেটা আমাদের দেশে সমধিক পরিচিত) শব্দের অর্থ ভোরের খাবার। রোজা রাখার উদ্দেশ্যে সুবহে সাদিকের কাছাকাছি সময়ে যে পানাহার করা হয়, সেটাকে ইসলামের পরিভাষায় সেহরি বলে। 

সেহরি খাওয়া সুন্নত। এতে রয়েছে বরকত ও কল্যাণ। ইহুদি-খ্রিস্টানরাও রোজা পালন করতো কিন্তু তারা ভোররাতে সেহরি গ্রহণ করতো না। তাই রাসূল (সা) ভোররাতে সেহরি খাওয়ার বিশেষ তাগিদ দিয়েছেন। 

সেহরি খাওয়ার অনেক ফজিলতও হাদিসে শরিফে বর্ণিত হয়েছে। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা সেহরি খাও, কারণ সেহরিতে বরকত আছে।’ (বুখারি, হাদিস: ১৯২৩) কিন্তু সেহরি শেষ রাতের কোন সময়ে খাওয়া ভালো? এটা অনেকে জানেন না। তাদের জেনে রাখার সুবিধার্থে এই লেখায় সংক্ষেপে তা তুলে ধরা হলো।

এক. সেহরি খাওয়া সুন্নত। পেটে ক্ষুধা না থাকলে দু-একটি খেজুর খেয়ে নেওয়া উত্তম অথবা অন্য কোনো জিনিস খেয়ে নেবে। (হেদায়া, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা ১৮৬)

দুই. বিলম্বে সেহরি খাওয়া উত্তম। আগে খাওয়া হয়ে গেলে শেষ সময়ে কিছু চা, পানি, পান ইত্যাদি খেলেও সেহরির ফজিলত অর্জিত হবে। (হেদায়া, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা ১৮৬)

তিন. সময় আছে, নাকি নেই—এমন সন্দেহ নিয়ে সেহরি খাওয়া মাকরুহ। (আলমগিরি, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা: ২০১)

চার. সঠিক ক্যালেন্ডারে সুবহে সাদিকের যে সময় দেওয়া থাকে, তার দু-চার মিনিট আগে খানা বন্ধ করে দেবে। এক-দুই মিনিট আগে-পিছে হলে রোজা হয়ে যাবে, তবে ১০ মিনিট পর খাওয়ার দ্বারা রোজা হবে না। (আপকে মাসায়েল, খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা ২০১)

কিন্তু মনে রাখতে হবে, শুধু ক্যালেন্ডারের ওপর নির্ভর করা উচিত নয়, কেননা অনেক সময় তাতে ভুলও হয়ে থাকে, তাই এ ব্যাপারে সতর্ক হওয়া দরকার।

পাঁচ. নিদ্রার কারণে সেহরি খেতে না পারলেও রোজা রাখতে হবে। সেহরি খেতে না পারায় রোজা না রাখা অত্যন্ত পাপ। (বেহেস্তি জেওর, পৃষ্ঠা ৩৫৩)

সেহরি খাওয়া অবস্থায় ফজরের আজান হয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে খাওয়া বন্ধ করতে হবে এবং যথারীতি রোজা পালন করতে হবে। তবে সময়ের পর ভুলক্রমে বা অনিচ্ছাকৃত পানাহার করায় রোজা ভঙ্গ হয়েছে বিধায় এই রোজাটি রমজানের পর আবার কাজা আদায় করতে হবে। 

কিন্তু আজান শোনার পরও যদি পানাহার বন্ধ না করেন, তাহলে কাজার সঙ্গে কাফফারা ও আদায় করতে হবে। যেহেতু প্রথমে ভুলবশত খাওয়া হলেও পরে ইচ্ছাকৃত খাওয়ার দ্বারা রোজা ভঙ্গ করা হয়েছে। (আল-মাওসূ‍‍`আতুল ফিকহিয়্যাহ, ফাতাওয়ায়ে আলমগিরি)

সুবহে সাদিক হওয়া এবং সেহরির সময় বাকি থাকার ব্যাপারে সংশয়যুক্ত সময়ে পানাহার করা মাকরুহ। আমাদের দেশের ক্যালেন্ডারগুলোতে আজান ও সেহরির মাঝে কয়েক মিনিট বিরতি দেওয়া হয়। সংশয়যুক্ত সময় বলতে ওই সময়টাকে ধরা যায়। তবে এ সময়ে খাওয়ার মাধ্যমে রোজা শুদ্ধ হয়ে যাবে। (আহসানুল ফাতওয়া, খণ্ড- ৪, পৃষ্ঠা ৪৩২, আল ফিকহুল হানাফী ফি ছাওবিহিল জাদীদ, খণ্ড- ১, পৃষ্ঠা ৪৩৩)।

আর কেউ যদি সেহরি খাওয়ার সময় আছে মনে করে সেহরি খায়। এরপর জানা যায় যে, তখন সেহরির সময় শেষ হয়ে গিয়েছিল। তাহলে পরবর্তী সময়ে সে রোজার কাজা আদায় করতে হবে। কাফ্ফারা আদায় করতে হবে না। (রদ্দুল মুহতার, খণ্ড- ৩, পৃষ্ঠা ৪৩৬)