ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৬ মার্চ, ২০২৫

তারাবিহ নামাজ না পড়লে রোজা হবে কি?

ধর্ম ডেস্ক
প্রকাশিত: মার্চ ৬, ২০২৫, ০৮:০৭ পিএম
ছবি: সংগৃহীত

দিনের বেলা বান্দার জন্য আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা রোজা ফরজ করেছেন। রোজার পাশাপাশি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো তারাবিহ নামাজ। এ নামাজ জামাতে আদায় ও সম্পূর্ণ কোরআন শরিফ একবার খতম করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা। অন্যদিকে রোজা মুসলমানদের জন্য ফরজ করা হয়েছে।

আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘হে ইমানদাররা, তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল, তোমাদের আগের লোকদের ওপর, যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৩)

এখন প্রশ্ন হলো, তারাবির নামাজ না পড়লে রোজা হবে কি-না। এ বিষয়ে অনেক মতবিরোধ রয়েছে। অনেকে মনে করেন, তারাবির নামাজ না পড়লে রোজা হবে না। আসলে বিষয়টি ঠিক নয়।

তারাবিহর সঙ্গে রোজার কোনো সম্পর্ক নেই। তারাবিহ একটা ফজিলতের বিষয়। এই নামাজ সুন্নাত। আর রোজা ফরজ ইবাদত। তবে তারাবিহ নামাজ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি রোজার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। সহিহ বুখারি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসে সিয়াম (রোজা) পালন করল ইমানের সঙ্গে, তার পূর্বের যত গুনাহ আছে আল্লাহ তায়ালা সব মাফ করে দেবেন।’

একই হাদিসের মধ্যে রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসে কিয়াম করবে বা সালাতুত তারাবিহ আদায় করবে তার পূর্ববতী যত গুনাহ আছে আল্লাহ তাআলা সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেবেন।’

তাই রমজান মাসে রোজার যত গুরুত্ব রয়েছে, ততটুকু তারাবিহর নামাজেরও গুরুত্ব রয়েছে। ফজিলতের দিক থেকে কোনো পার্থক্য নেই। কিন্তু দুটি ভিন্ন ইবাদত। তারাবিহর নামাজ যদি কেউ আদায় করে না থাকেন তাহলে যে তার রোজা হবে না বা তার ফজিলত থেকে মাহরুম হয়ে যাবেন— এমন বক্তব্য সঠিক নয়। তার সিয়াম হয়ে যাবে— এতে কোনো সন্দেহ নেই।

তারাবির নামাজ কোনো কারণে কেউ পড়তে না পারলে অনেকে মনে করেন, তারাবি যেহেতু পড়তে পারলাম না, তাহলে রোজা রেখে লাভ নেই। বিষয়টি একদমই ঠিক নয়। কেননা, তারাবির নামাজ হলো সুন্নতে মুয়াক্কাদা, যা পালনে বাধ্যবাধকতা নেই। কিন্তু রোজা রাখায় আছে। রোজা রাখা ফরজ, যা অবশ্যই পালনীয়। কিন্তু সুন্নাত ও তারাবির মাধ্যমে তার যে মর্যাদা পাওয়ার সুযোগ ছিল, তা থেকে সে বঞ্চিত হলো।

আর কেউ যদি ২০ রাকাত না পড়ে, ১২ রাকাত বা ৮ রাকাত পড়ে— তাহলে সে ১২ বা ৮ রাকাতের সাওয়াব পেয়ে যাবে। কিন্তু ২০ রাকাত পড়ার যে সাওয়াব ছিল, তা থেকে নিজেকে বঞ্চিত করল। এক্ষেত্রে সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে— এই দুনিয়ার নামাজ-রোজা ইত্যাদি ইবাদতের অর্জন দিয়ে আখেরাতের লক্ষ লক্ষ বছর জীবন অতিবাহিত করতে হবে। 

কাজেই এ আমলগুলো আমাদের যত বেশি নেওয়া যায়, ততবেশি আখেরাতে আমাদের স্বচ্ছল জীবন আসবে। এজন্য যারা সুস্থ-সবল ও কোনো বাধা-বিপত্তি নেই, তারা যেন কম করার চেষ্টা না করেন; বরং বেশি করার চেষ্টা করেন। তারা শুধু বিশ রাকাতই নয়; বরং আরও বেশি পড়বেন, নফল নামাজ পড়বেন। কারণ, বেশি প্রাপ্তির মাস রমজান, তাই বেশি  বেশি করে সাওয়াব আদায় করে নিতে হবে।