জীবনে যেসব মানুষের সঙ্গে আমাদের দীর্ঘ সময় কাটাতে হয়, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন কর্মক্ষেত্রের সহকর্মী। অনেকাংশে পরিবারের সদস্যদের চেয়েও সহকর্মীদের সঙ্গে বেশি সময় অতিবাহিত করতে হয়।
ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন দীর্ঘ সময় একসঙ্গে কাজ করতে গিয়ে সহকর্মীরাও পরিবারের সদস্য হয়ে যান। আর সুন্দর, দায়িত্বশীল ও ভারসাম্যপূর্ণ আচরণ একজন কর্মীকে যেমন বহু দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে, তেমনি দায়িত্বহীন আচরণ মানুষকে নিজ কক্ষপথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে পারে।
তাই দীর্ঘ সময় সহকর্মীদের সঙ্গে কাটাতে গিয়ে সম্পর্কে কোনো ধরনের তিক্ততা যেন না আসে, সেদিকে খেয়াল রাখা উচিত। কাজেই সহকর্মীদের সঙ্গে সুন্দর, দায়িত্বশীল ও ভারসাম্যপূর্ণ আচরণ কর্মজীবনে সাফল্যলাভে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটিই ইসলামের নির্দেশনা।
সহকর্মী হিসেবে মুসলিম-অমুসলিম, পরিচিত-অপরিচিত, আত্মীয়-অনাত্মীয় সবার সঙ্গে সদ্ব্যবহার এবং সবাইকে সমানভাবে দেখার নির্দেশ দিয়েছে ইসলাম। এজন্য ইসলাম পারস্পরিক সাক্ষাতে হাসিমুখে কথা বলার নির্দেশ দিয়েছে।
আর সব ক্ষেত্রেই সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা জরুরি। অন্যথায় হিতে বিপরীত হয়। সহকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্কের ভিত্তি হলো পেশাদারি। কাজেই এই সম্পর্ক পেশাদারির মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখতে হবে।
ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের ভিত্তিতে নৈকট্য ও দূরত্ব কখনো কখনো মানুষের জন্য বিপদের কারণ হয়। এজন্য কর্মক্ষেত্রে কোনো সহকর্মীকে যৌক্তিক কারণ ছাড়া অগ্রাধিকার না দেওয়াই উত্তম।
কর্মক্ষেত্রে একসঙ্গে কাজের সময় অবশ্যই মনে রাখতে হবে যেন আপনার আচরণে কেউ কোনো ধরনের কষ্ট না পান। কথার ফাঁকে এমন কিছু বলা যাবে না, যাতে করে কেউ মর্মাহত হন।
যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও কর্মদক্ষতা সবার সমান হয় না। পরস্পরকে সহযোগিতা করে এগিয়ে নিতে হয়। পারস্পরিক সহযোগিতায় সৌহার্দ্য গড়ে ওঠার ফলে কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ সুন্দর হয়। আর অধীনস্থদের প্রতি দুর্ব্যবহার করা ইসলামে নিষিদ্ধ।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘অধীনস্থদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারকারী জান্নাতে যেতে পারবে না।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১৯৪৬)
কারো শোনা কথায় কান দিলে কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ বিষাক্ত হয়ে উঠতে পারে। তাই কোনো কথা শুনলে তা যাচাই করার আগে প্রতিক্রিয়া দেখানো উচিত নয়। এসব এড়িয়ে চললেই সুন্দর পরিবেশ নিশ্চিত হবে।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ, যদি কোনো পাপাচারী তোমাদের কাছে কোনো বার্তা নিয়ে আসে, তোমরা তা পরীক্ষা করে দেখবে। যেন অজ্ঞতাবশত তোমরা কোনো সম্প্রদায়কে ক্ষতিগ্রস্ত করে না বসো এবং পরে তোমাদের কৃতকর্মের জন্য তোমাদের অনুতপ্ত হতে হয়।’ (সুরা হুজরাত, আয়াত: ৬)
মানুষের দোষ প্রচার করা নিন্দনীয় স্বভাব। বিশেষ প্রয়োজন ও অপারগতা ছাড়া মুমিন অন্যের দোষ প্রকাশ করবে না। আর কেউ যদি কোনো কথা গোপন রাখার অনুরোধ করে, তবে তা গোপন রাখবে।
একান্ত অপারগতা ও সামগ্রিক কল্যাণ ছাড়া তা প্রকাশ করবে না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, কোনো ব্যক্তি কোনো কথা বলার পর আশপাশে তাকালে তার উক্ত কথা আমানত বলে গণ্য হবে।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১৯৫৯)
সবার প্রতি কল্যাণকামী হওয়া ইসলামের অন্যতম শিক্ষা। মানুষের প্রতি কল্যাণকামিতা হলো সঠিক পথ ও কল্যাণকর কাজের দিকনির্দেশনা দেওয়া, দোষত্রুটি গোপন রাখা, প্রয়োজন পূরণ করা, প্রতারণা না করা, হিংসা পোষণ না করা; সবার প্রতি সহনশীলতা প্রদর্শন এবং সব কাজে সেবার মানসিকতা জাগ্রত করা।
সবাই নিজ নিজ ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল হলে এবং সহকর্মীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক নিশ্চিত করা গেলে কর্মজীবন হয়ে উঠবে অত্যন্ত সাফল্যময়। আল্লাহ সবাইকে তাওফিক দিন।
লেখক : গণমাধ্যমকর্মী