ইসলামে নারী ও পুরুষের সম্মান ও মর্যাদা আল্লাহর কাছে এক সমান, এবং তাদের জন্য একই নিয়মে পুরস্কৃত হওয়ার সুযোগ রয়েছে। তবে, তাদের নির্দিষ্ট কাজ এবং দায়িত্বগুলো আল্লাহ কর্তৃক আলাদা করা হয়েছে, যা প্রতিটি ব্যক্তির শক্তি, ক্ষমতা এবং প্রাকৃতিক গুণাবলী অনুসারে নির্ধারিত। ইসলামের মধ্যে নারী ও পুরুষের মর্যাদা এবং দায়িত্বের মধ্যে যে বৈষম্য নেই, তার ব্যাখ্যা আরো বিস্তারিতভাবে বলা যায়।
১. আল্লাহর কাছে মর্যাদা:
ইসলামে আল্লাহর কাছে মর্যাদা লাভের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো তাকওয়া (আল্লাহর প্রতি শ্রদ্ধা ও ভয়) এবং ভালো কাজের মাধ্যমে আত্মবিশুদ্ধি। আল্লাহ বলেন, "তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সেই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে তোমাদের মধ্যে অধিক তাকওয়া সম্পন্ন। নিশ্চয় আল্লাহ তো সর্বজ্ঞ, সম্যক অবহিত।" (সুরা হুজুরাত: ১৩) এর মানে, একজন ব্যক্তি তার লিঙ্গ বা সামাজিক অবস্থান দ্বারা নয়, বরং তার চরিত্র, আমল, এবং আল্লাহর প্রতি নিবেদন দ্বারা মর্যাদা অর্জন করেন।
২. লিঙ্গ অনুযায়ী সওয়াব:
কোরআনে আল্লাহ স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছেন যে, সৎ কর্মের প্রতিদান নারী এবং পুরুষ উভয়ের জন্য সমান। আল্লাহ বলেন, "নিশ্চয় আমি তোমাদের কোনো পুরুষ অথবা নারী আমলকারীর আমল নষ্ট করব না। তোমরা একে অপরের অংশ।" (সুরা আলে ইমরান: ১৯৫) এর মানে, একজন নারী তার আমলের কারণে পুরস্কৃত হবেন ঠিক যেমন পুরুষরা পুরস্কৃত হন। কোনো লিঙ্গের কারণে সওয়াব কমানো হবে না।
৩. ভালো কাজের প্রতিদান:
একটি গুরুত্বপূর্ণ আয়াতে, আল্লাহ ঘোষণা করেছেন যে, যারা মুমিন এবং ভালো কাজ করবে, তারা পুরস্কৃত হবে—না পুরুষ বা নারী—যারাও কাজের মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি তাদের আনুগত্য প্রদর্শন করে। "যে মুমিন অবস্থায় নেক আমল করবে, পুরুষ হোক বা নারী, আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং তাদেরকে তাদের কর্মের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার দান করব।" (সুরা নাহল: ৯৭)
৪. বিশেষ গুণাবলী ও পুরস্কার:
ইসলাম ধর্মে নারীর জন্যও বিশেষ মর্যাদা নির্ধারিত। কোরআনে একটি আয়াতে আল্লাহ মুসলিম পুরুষ ও নারীর জন্য যেসব গুণাবলী ও কাজকে সম্মানিত করেছেন, তা বর্ণনা করেছেন। "মুসলিম পুরুষ ও নারী, মুমিন পুরুষ ও নারী, অনুগত পুরুষ ও নারী, সত্যবাদী পুরুষ ও নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও নারী, বিনয়াবনত পুরুষ ও নারী, দানশীল পুরুষ ও নারী, সিয়ামপালনকারী পুরুষ ও নারী, নিজদের লজ্জাস্থানের হিফাযতকারী পুরুষ ও নারী, আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও নারী, তাদের জন্য আল্লাহ মাগফিরাত ও মহান প্রতিদান প্রস্তুত রেখেছেন।" (সুরা আহজাব: ৩৫)
৫. নারী ও পুরুষের সামাজিক দায়িত্ব:
ইসলামে কিছু ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষের দায়িত্ব ভিন্ন হতে পারে, যা তাদের প্রাকৃতিক গঠন ও শারীরিক ক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে। উদাহরণস্বরূপ, পুরুষের উপর সংসারের আর্থিক ভার ও ভরণপোষণের দায়িত্ব অর্পিত, তবে নারীও উপার্জন করতে পারে, তবে এটি তার দায়িত্ব নয়।
৬. ইসলামের দৃষ্টিতে নারী ও পুরুষের সম্পর্ক:
ইসলামে নারী ও পুরুষের সম্পর্ক ঐক্য ও সহমর্মিতার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত। আল্লাহ বলেন, "তারা তোমাদের পোশাক, আর তোমরা তাদের পোশাক।" (সুরা বাকারা: ১৮৭) এর মানে, একে অপরের জন্য তারা পরিপূরক এবং একে অপরের আত্মবিশ্বাস ও সম্মানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
৭. ইসলামে নারীর মর্যাদা:
ইসলামে নারীকে একটি বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে, যা অন্যান্য ধর্মের তুলনায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অগ্রণী। নারীকে মা, বোন, স্ত্রী হিসেবে বিশেষ সম্মান ও মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তার কোরআনে নারীর ওপর দায়িত্বগুলো খুব স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন এবং তাদেরকে ধর্মীয় ও সামাজিকভাবে উচ্চ মর্যাদা দিয়েছেন।
এইসব মৌলিক ধারণাগুলো ইসলামের মধ্যে নারী-পুরুষের মধ্যে সমতা ও সম্মান প্রদানের প্রমাণ।