ঢাকা রবিবার, ০৯ মার্চ, ২০২৫

নারী সাহাবিদের রমজানের ইবাদত

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: মার্চ ৮, ২০২৫, ০৪:২৬ পিএম
ছবি: ইন্টারনেট

ইসলামের প্রথম যুগে সাহাবি নারীরা ছিলেন এক উজ্জ্বল উদাহরণ। তাঁদের জীবনে ইবাদত, নিষ্ঠা এবং ত্যাগের এক অনন্য দৃষ্টান্ত ছিল। বিশেষ করে, রমজান মাসে তাঁদের ইবাদত ছিল অতুলনীয় এবং আল্লাহর প্রতি তাঁদের ভালোবাসা, শ্রদ্ধা এবং নিষ্ঠা ছিল স্পষ্ট। 

রমজান এমন একটি মাস, যেখানে সাহাবি নারী ও পুরুষ উভয়েই নিজেদের আত্মশুদ্ধির জন্য কঠোর পরিশ্রম করতেন এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য সব ধরনের ইবাদত ও ভালো কাজের দিকে মনোনিবেশ করতেন।

১. আয়েশা (রা.)
আয়েশা (রা.) হলেন নবী (সা.)’র স্ত্রী এবং ইসলামের ইতিহাসে সবচেয়ে প্রভাবশালী নারীদের মধ্যে একজন। তাঁর রমজানে ইবাদত ছিল অতুলনীয়। তিনি বিশেষ করে রমজান মাসে কোরআন তিলাওয়াত, নফল নামাজ, দান-খয়রাত এবং আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনা করতেন।

একটি হাদিসে তিনি বলেন: রমজানে আমি রাত্রে অনেক সময় কোরআন তিলাওয়াত করতাম এবং সালাত আদায় করতাম, যাতে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারি। (বুখারি)

তাঁর জীবনের এক বিশেষ দৃষ্টান্ত হলো, তিনি রমজান মাসে পাড়া-মহল্লার দরিদ্রদের জন্য দান-খয়রাত করতেন। তাঁর জীবনের ইবাদত একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা যে, রমজান কেবল উপবাস (সিয়াম) পালন করার সময় নয়, বরং অন্যান্য ইবাদত যেমন—তাহাজ্জুদ নামাজ, কোরআন তিলাওয়াত, দান এবং পরোপকারিতার সময়ও।

২. উম্ম সালামাহ (রা.)
উম্ম সালামাহ (রা.), নবী (সা.)‍‍`র স্ত্রীরাও রমজান মাসে অত্যন্ত নিবিড়ভাবে ইবাদত করতেন। তাঁর ইবাদতের মধ্যে কোরআন তিলাওয়াত, সালাত, এবং দান-খয়রাত অন্তর্ভুক্ত ছিল। তিনি রমজানে সময়মতো সিয়াম পালন করতেন এবং তাহাজ্জুদ নামাজে ব্যস্ত থাকতেন।

একটি হাদিসে জানা যায়, তিনি বলেছিলেন: রমজান মাসে আমি সিয়াম পালন করতাম এবং একে একে ছোট ছোট সৎকর্মে নিযুক্ত থাকতাম। (মুসলিম)

তিনি কখনো রমজান মাসে খুশি হতেন না, যতক্ষণ না তিনি অন্যান্য ব্যক্তিদেরকে খাওয়ানোর জন্য খাবার বিতরণ করতেন এবং সাধারণভাবে পরিপূর্ণভাবে ইবাদতের দিকে মনোনিবেশ করতেন।

৩. আস্মা বিন্তে আবি বকর (রা.)
আস্মা (রা.) ছিলেন একজন অনুপ্রেরণাদায়ী সাহাবি, যিনি রমজান মাসে সিয়াম পালন করার পাশাপাশি নিজের জীবনকে সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর দিকে নিবেদিত রাখতেন। তিনি একটি হাদিসে বলেছিলেন, আমি রমজান মাসে সিয়াম পালন করার সময় প্রতিদিন সকালবেলা আল্লাহর কাছে সাহায্য চেয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করতাম, যাতে তিনি আমাকে ইবাদতের প্রতি দৃঢ় রাখেন। (সুনান আবু দাউদ)

তিনি বিশেষভাবে তাহাজ্জুদ নামাজের প্রতি গুরুত্ব দিতেন এবং রাতের অন্ধকারে আল্লাহর কাছে তাঁর গুনাহ মাফ চেয়ে গভীরভাবে প্রার্থনা করতেন। এছাড়াও, তিনি দান-খয়রাতও করতেন, যাতে দরিদ্র ও গরীবদের সেবা করা যায়।

৪. হুমাইরা বিন্তে আবু হাদরম (রা.)
হুমাইরা (রা.) হলেন একজন সাহাবি নারী, যিনি অনেক দীর্ঘ সময় ধরে রমজান মাসে সিয়াম পালন করতেন এবং নিয়মিত কোরআন তিলাওয়াত করতেন। তিনি মুসলিম সমাজে একজন আদর্শ মহিলারূপে পরিচিত ছিলেন এবং তাঁর ইবাদত ও আল্লাহর প্রতি নিষ্ঠা ছিল অনুকরণীয়।

তিনি একবার বলেছিলেন: রমজানে আমি সিয়াম পালন করে কখনও মনে করিনি যে এটি কষ্টকর, বরং আমি এতে আল্লাহর রহমত ও দয়া পেয়েছি। (ইবনে কাসির)

৫. ফাতিমা (রা.)
ফাতিমা (রা.), নবী (সা.)‍‍`র কন্যা, তাঁর জীবনে রমজানের ইবাদত ছিল গভীর মনোযোগের। তিনি রমজান মাসে কোরআন তিলাওয়াত করতেন, দান-খয়রাত করতেন এবং দীর্ঘ সময় ধরে নফল নামাজ আদায় করতেন। তাঁর জীবনে সিয়াম এবং নফল ইবাদত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল এবং তিনি সর্বদা আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য চেষ্টা করতেন।

একটি হাদিসে বলা হয়েছে: ফাতিমা (রা.) রমজান মাসে নফল ইবাদত যেমন সিয়াম, সালাত ও দান-খয়রাতের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে রহমত চাইতেন। (মুসনাদ আহমদ)