ইসলামে ধর্ষণ-ব্যভিচারের শাস্তি...

রূপালী ডেস্ক

প্রকাশিত: মার্চ ৮, ২০২৫, ০৭:০৬ পিএম

ইসলামে ধর্ষণ-ব্যভিচারের শাস্তি...

ফাইল ছবি

ধর্ষণ সমাজ জীবনে এক জঘন্যতম পাপাচার। জিনা-ব্যভিচার এক সমাজ বিধ্বংসী কালচার। ধর্ষণ মানুষকে পশুতে পরিণত করে দেয়। ব্যভিচারের প্রসারের কারণে মানবতা বিপন্ন হয়। সমাজের শান্তি-শৃঙ্খলা বিঘ্নিত হয়।

উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, দেশে একেরপর এক ধর্ষণের ঘটনা বেড়েই চলছে। সম্প্রতি এক শিশুকে ধর্ষণের ঘটনা দেশে নারীর সামাজিক নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। আরও কত ঘটনা যে আমাদের অজান্তেই ঘটেছে, কত ধর্ষিতা মা বোন ও শিশু লোকলজ্জার ভয়ে আত্মহত্যা করেছে তার হিসেব মেলা ভার!

বছর শেষে আইনশৃঙ্খলা নিয়ে বার্ষিক প্রতিবেদন দেয় মানবাধিকার সংস্থাগুলো। পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠানগুলো এই প্রতিবেদন প্রস্তুত করে থাকে। এসব প্রতিষ্ঠানের পর্যবেক্ষণ বলছে, তারা একটি ধারণা দিয়ে থাকেন, তবে সঠিক সংখ্যা এর চেয়েও বেশি। এমনকি পত্রিকায় যখন অন্য কোনও ইস্যুকে গুরুত্ব দেয় তখন প্রতিনিধিরা ধর্ষণের খবর দেওয়ার চেয়ে ওইসব সুনির্দিষ্ট বিষয়ে মনোযোগী থাকেন। ফলে ধর্ষণের অনেক ঘটনাই পরিসংখ্যানের বাইরে থেকে যায়। আর প্রকৃত হিসেব ইস্যুর ভিড়ে চাপা পড়ে যায়। 

ধর্ষণ- ব্যভিচারের শাস্তি : ইসলামে ধর্ষণ-ব্যভিচার এতোটাই জঘন্য যে, এর আশে পাশে যেতেও নিষেধ করা হয়েছে। ব্যভিচার ও ধর্ষণ রোধে ইসলামে পর্দার বিধান রাখা হয়েছে, নারীদের শালীন পোশাক পরিধানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সাথে দুনিয়া ও আখেরাতে এর কঠোর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। রাসূল সা. বলেন, ‘ব্যভিচারী অবিবাহিত নারী পুরুষকে ১০০ বেত্রাঘাত এবং ১ বছরের জন্য নির্বাসন করতে হবে। আর বিবাহিত নারী-পুরুষকে রজম করতে হবে অর্থাৎ পাথর নিক্ষেপ করে হত্যা করতে হবে’ (মুসলিম : ১৬৯০)।

অন্যত্র আল্লাহ তাআলা বলেন, তারা আল্লাহর সাথে অন্য কোনো মাবুদকে ডাকে না, শরীয়ত সম্মত কারণ ব্যতীত কাউকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। আর যে ব্যক্তি এসকল কাজ করে সে শাস্তি ভোগ করবে। কিয়ামতের দিন তার শাস্তি দ্বিগুণ করা হবে। এবং এ শাস্তি লাঞ্ছিত অবস্থায় সে অনন্তকাল ভোগ করতে থাকবে। (সুরা ফুরকান : ৬)। রাসূল সা. বলেছেন, অর্ধ রজনীতে আকাশের দ্বার উন্মুক্ত করা হয়। এ সময় মুসলিম যে দুআই করবে তার সে দুআ আল্লাহ কবুল করবেন। তবে ব্যভিচারকে পেশা হিসেবে গ্রহণকারিণী নারীর দুআ আল্লাহ কবুল করবেন না। (আল মুজামুল কাবীর লিততাবারানী : ৪৩৯১)।

ধর্ষণের কারণ ও প্রতিকার : সমাজে ধর্ষণের ঘটনা ঘটার প্রধান কারণ এবং প্রথম ধাপ, পরনারী কিংবা পরপুরুষের প্রতি কুদৃষ্টি দেওয়া। ইসলাম সেই উৎসটাই উপড়ে ফেলতে চেয়েছে। তাই পুরুষকে নির্দেশ দিয়েছে দৃষ্টি অবনত রাখতে আর নারীকে বলেছে দৃষ্টি অবনত রাখার পাশাপাশি দৈহিক সৌন্দর্যকে ঢেকে রাখতে এবং কঠোরভাবে নির্দেশ দিয়েছে শরিয়ত সমর্থিত প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যেতে। আল্লাহ তাআলা বলেন, হে নবী আপনি মুমিনদেরকে বলে দিন, তারা যেন নিজেদের দৃষ্টি অবনত রাখে এবং লজ্জাস্থানের হেফাজত করে এটাই তাদের জন্যে সবচেয়ে বড় পবিত্রতা। নিশ্চয়ই তারা যা করে আল্লাহ তা আবহিত আছেন। (সুরা নূর : ৩০)।

অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে, ‘তোমরা তোমাদের বাসস্থানে অবস্থান করবে এবং জাহেলি যুগের সৌন্দর্য প্রদর্শনের মতো তোমরা তোমাদের প্রদর্শন করবে না, তোমরা যথাযথভাবে নামাজ আদায় করবে এবং জাকাত প্রদান করবে।’ (সূরা আহজাব : ৩৩)। সমাজের সবাই যদি ইসলামী আদর্শের প্রতি অনুপ্রাণিত হয়, একযোগে প্রতিরোধ গড়ে তোলে, রাষ্ট্রীয় আইনের যথাযথ প্রয়োগ হয়, তবে আশা করা যায় ধর্ষণের প্রকোপ ধীরে ধীরে কমতে শুরু করবে। বিশেষত রাজনৈতিক পরিচয়ে কোনো ধর্ষক যেন আইনের হাত থেকে রক্ষা না পায়, রাষ্ট্রকে তা নিশ্চিত করতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমগুলো ব্যবহার করে গণসচেতনা গড়ে তুলতে হবে। তবে এই সামাজিক অভিশাপ থেকে দেশ ও জাতি রক্ষা পাবে।

আরবি/এস

Link copied!