একটি আদর্শ পরিবার গঠনে স্ত্রীর যেমন দায়িত্ব রয়েছে, তেমন স্বামীরও ভূমিকা থাকা জরুরি। স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে যতটা বুঝতে পারবে তাদের জীবন ততটা মধুময় হবে। একমাত্র একজন স্বামীই পারে, তার স্ত্রীর জীবনকে পূর্ণ করে দিতে। স্বামী যদি তার স্ত্রীকে বুঝে, তাকে ভালোবাসা দিয়ে পূর্ণ করে, তবে তাদের সংসার অনাবিল সুখে ভরপুর হয়ে যাবে। সেখানে পাওয়া যাবে জান্নাতের সন্ধান।
প্রচণ্ড শীতে কিংবা গরমে সবার আগেই বিছানা ত্যাগ করে কর্মব্যস্ত স্বামীর কাজে সহযোগিতা ও সন্তানাদির স্কুল-কলেজে যাওয়ার প্রস্তুতিতে লেগে যান স্ত্রীরা। আবার সারা দিনের কাজের ফলে ক্লান্ত-অবসন্ন শরীরে ঘুমাতেও যান সবার পরে। একটি পরিবারে সুখ-শান্তি তখনই বিরাজ করে; যখন কোনো পুরুষ তার স্ত্রীর কাজকে সম্মান ও স্বীকৃতি দেয়। নিজ হাতে ঘরের কাজে স্ত্রীকে সহযোগিতা করে।
সব স্বামীর উচিত, তাদের স্ত্রীদের কাজের মৌখিক স্বীকৃতি ও প্রশংসার পাশাপাশি সাংসারিক কাজে সামান্য সময়ের জন্য হলেও সহযোগিতা করা। স্ত্রী ঘরের বাইরে কাজ করলে যথাসম্ভব ঘরের কাজ ভাগাভাগি করে নেওয়া। পরিবারের কর্তাব্যক্তি শুধু ব্যয় বহন করেই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পাবেন এমনটি নয়। কোনো সাংসারিক কাজকর্ম করতে পারবে না; এমন কোনো নির্দেশনা ইসলামে নেই। ঘরের কাজেও সহযোগিতা করা বিশ্বনবীর সুন্নাত।
আদর্শবান স্বামী হতে হলে বিশ্বনবীর (সা.) দাম্পত্য জীবনের সুন্নত মানার বিকল্প নেই। প্রিয়নবী (সা.) তার স্ত্রীদের অনেক ভালোবাসতেন। গুরুত্বপূর্ণ কাজে তাদের পরামর্শ নিতেন। এমনকি তাদের ঘরোয়া কাজে সহায়তা করতেন। স্ত্রীকে সঙ্গ দেওয়া এবং মানসিক সাপোর্ট দেওয়া স্বামীর কর্তব্য। স্ত্রী-সন্তানদের হক যথাযথভাবে আদায় করতে হবে। ঘরোয়া কাজে স্ত্রীকে সহযোগিতা করাকে আমাদের সমাজে লজ্জার বিষয় মনে করা হলেও এটি কিন্তু নবীজির সুন্নত এবং আদর্শ স্বামীর বৈশিষ্ট্য।
‘উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা (রা.)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, নবীজি কি পরিবারের লোকদের ঘরোয়া কাজে সহযোগিতা করতেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, নবীজী ঘরের লোকদের তাদের কাজে সহযোগিতা করতেন এবং নামাজের সময় হলে নামাজের জন্য যেতেন।’ (বুখারি: ৬৭৬)
শুধু ঘরোয়া বিষয়েই নয়, উম্মাহর অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েও নিজের স্ত্রীদের মতামত নিতেন। হুদায়বিয়ার সন্ধির মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রেক্ষাপটে নবীজী (সা.) উম্মে সালমা (রা.)-এর কাছ থেকে পরামর্শ নিয়েছিলেন। পরবর্তী সময় যা অতি কার্যকরী বলে বিবেচিত হয়। (বুখারি: ২৭৩১)
ভালোবাসা মূলত কাজে প্রমাণের বিষয়, কিন্তু মাঝেমধ্যে মুখেও প্রকাশ করতে হয়। কারণ, স্ত্রীর মন স্বামীর ভালোবাসার কথা শোনার অপেক্ষায় থাকে। কথার মাধ্যমে স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ করা নবীজির সুন্নত। রাসুলুল্লাহ (স.) বিভিন্ন সময়ে তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রীদের রোমাঞ্চকর কথা বলতেন। আয়েশা (রা.)-এর প্রশংসা করে নবীজী (স.) বলেছেন, ‘খাবারের মধ্যে সারিদ যেমন সবার সেরা, নারীদের মধ্যে আয়েশা সবার সেরা।’ (বুখারি: ৩৪১১) খাদিজা (রা.) সম্পর্কে বলেছেন, ‘আমার মনে তার প্রতি ভালোবাসা ঢেলে দেওয়া হয়েছে।’ (মুসলিম: ২৪৩৫)
নবীজী (স.)-এর পবিত্র দাম্পত্য জীবনে স্বীয় স্ত্রীদের সঙ্গে আন্তরিকতা ও রোমান্টিকতার এতসব চিত্র অঙ্কিত রয়েছে, যা একটি আদর্শ দাম্পত্য জীবনের উৎকৃষ্ট উপমা। আশ্চর্যের বিষয় হলো, পরবর্তী সময়ে উম্মুল মুমিনিনরা এসব ঘটনার বিবরণ এতটা উচ্ছ্বাসের সঙ্গে দিয়েছেন, যা তাদের ভেতরকার ভাব-আবেগের সুস্পষ্ট প্রতিচ্ছবি। এছাড়াও অসংখ্য আন্তরিকতা ও রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতায় ভরপুর ছিল নবীজীর দাম্পত্য জীবন।
তবে দাম্পত্য জীবনকে অর্থবহ করতে স্বামীর পাশাপাশি স্ত্রীরও ব্যাপক ভূমিকা থাকা চাই। দুজনের ধৈর্য ও ভালোবাসার মাধ্যমে একটি সুখী পরিবার গড়ে ওঠে। আর সুখী পরিবারই আগামী প্রজন্মের আদর্শ বিদ্যাপীঠ। আল্লাহ তাআলা উম্মতে মুসলিমার সব পুরুষকে পরিবারের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ঘরের অভ্যন্তরীণ কাজে নারীদের সহযোগিতা করে সুন্নাতের অনুসরণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
লেখক : গণমাধ্যমকর্মী