রমজানের দ্বিতীয় ১০ দিনের আমল (মাগফিরাতের ১০ দিন)

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: মার্চ ১০, ২০২৫, ০১:৫৫ পিএম

রমজানের দ্বিতীয় ১০ দিনের আমল (মাগফিরাতের ১০ দিন)

ছবি: সংগৃহীত

চলছে সারাবিশ্বের মুসলমানদের পবিত্র মাস রমজান। রমজান মাসের মাঝের ১০ দিন যেহেতু মাগফিরাত বা ক্ষমার, সুতরাং এই ১০ দিন আমাদের করণীয় হবে আল্লাহ পাকের ক্ষমা সংক্রান্ত নামগুলো হৃদয়ঙ্গম করে এর ভাব-প্রভাব ও বৈশিষ্ট্য অর্জন ও অধিকার করে নিজের মধ্যে আত্মস্থ করার চেষ্টা করা এবং আজীবন তার ধারক-বাহক হয়ে তা দান করা বা বিতরণ করা তথা আল্লাহর গুণাবলি নিজের মাধ্যমে তাঁর সৃষ্টির কাছে পৌঁছে দেওয়া।

জেনে নিন রমজানের দ্বিতীয় ১০ দিনের আমল-

১. তওবা ও ইস্তিগফার বৃদ্ধি করা
রমজানের দ্বিতীয় দশক হলো মাগফিরাত বা আল্লাহর ক্ষমা লাভের বিশেষ সময়। এই সময়ে আমাদের উচিত আন্তরিকভাবে আল্লাহর কাছে তওবা করা এবং গুনাহ থেকে মুক্তির জন্য তাঁর দরবারে প্রার্থনা করা।

তওবা করার পদ্ধতি:
প্রথমে নিজের কৃত গুনাহ সম্পর্কে অনুতপ্ত হওয়া
সত্যিকারের মন থেকে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া
ভবিষ্যতে ওই গুনাহ পুনরায় না করার দৃঢ় সংকল্প গ্রহণ করা
যদি গুনাহের কারণে কারো প্রতি অন্যায় করা হয়ে থাকে, তবে তাকে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া বা তার হক ফিরিয়ে দেওয়া

রোজা অবস্থায় পিরিয়ড শুরু হলে করণীয়

ইস্তিগফারের দোয়া-
اللهم إنك عفو تحب العفو فاعف عني
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন, তুহিব্বুল আফওয়া, ফা’আফু ‘আন্নি।
অর্থ: হে আল্লাহ, তুমি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, তুমি ক্ষমা করতে ভালোবাসো, তাই আমাকে ক্ষমা করো।

অন্য একটি ইস্তিগফারের দোয়া-
أستغفر الله الذي لا إله إلا هو الحي القيوم وأتوب إليه
উচ্চারণ: আসতাগফিরুল্লাহাল্লাযি লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়ুল কাইয়্যুমু ওয়া আতুবু ইলাইহি।
অর্থ: আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, যিনি ছাড়া কোনো সত্যিকারের উপাস্য নেই। তিনি চিরঞ্জীব, সর্বত্র বিরাজমান। আমি তাঁর দিকে ফিরে আসছি।

২. তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা-
তাহাজ্জুদ নামাজ হলো রাতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নফল নামাজ। এটি আল্লাহর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা অর্জনের শ্রেষ্ঠ উপায়। বিশেষত রমজানের দ্বিতীয় দশকে এই নামাজের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া উচিত, কারণ এটি গুনাহ মাফ ও দোয়া কবুলের অন্যতম মাধ্যম।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন- ‘আমাদের প্রতিপালক প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশে নিকটবর্তী আসমানে নেমে আসেন এবং বলেন— ‍‍`কে আছো আমাকে ডাকবে, আমি তার দোয়া কবুল করবো? কে আছো আমার কাছে ক্ষমা চাইবে, আমি তাকে ক্ষমা করবো?’ (বুখারি, মুসলিম)

৩. কুরআন তিলাওয়াত বৃদ্ধি করা
রমজান হলো কুরআন নাজিলের মাস। তাই এই মাসে আমাদের বেশি বেশি কুরআন পড়া উচিত, অর্থ বুঝে পড়া উচিত এবং কুরআনের শিক্ষা আমাদের জীবনে বাস্তবায়ন করা উচিত।

কুরআন তিলাওয়াতের কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক-
প্রতিদিন নির্দিষ্ট পরিমাণ কুরআন তিলাওয়াত করা
কুরআনের অর্থ ও ব্যাখ্যা বোঝার চেষ্টা করা
কুরআনের নির্দেশনা অনুযায়ী জীবন গঠনের চেষ্টা করা
তিলাওয়াতের পর কুরআনের দোয়া ও জিকির করা

উত্তম আমল-
প্রতিদিন অন্তত এক পারা কুরআন তিলাওয়াত করা
কুরআনের ছোট ছোট সূরা মুখস্থ করার অভ্যাস গড়ে তোলা

৪. দোয়া ও জিকির করা-
রমজানের দ্বিতীয় দশক দোয়া ও জিকিরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু এটি মাগফিরাতের সময়, তাই এই সময় বেশি বেশি দোয়া করলে আল্লাহ আমাদের গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন।

গুরুত্বপূর্ণ কিছু জিকির-
সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি, সুবহানাল্লাহিল আজিম
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ
লা হাওলা ওলা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ

সম্পদ লাভের দোয়া ও আমল

৫. দান-সদকা বৃদ্ধি করা-
দান-সদকা রমজানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আমল। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—
দান-সদকা গুনাহগুলোকে এমনভাবে দূর করে দেয়, যেভাবে পানি আগুন নিভিয়ে দেয়। (তিরমিজি)

৬. গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা-
শুধু খাবার ও পানীয় থেকে বিরত থাকলেই রোজা পূর্ণ হয় না। বরং চোখ, কান, মুখ, হাত-পা সবকিছুকে সংযত রাখতে হবে।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন- যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা বলা ও সে অনুযায়ী কাজ করা পরিত্যাগ করল না, তার পানাহার ত্যাগ করায় আল্লাহর কোনো দরকার নেই। (বুখারি)

৭. শবে কদরের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া-
রমজানের শেষ দশকের মধ্যে লাইলাতুল কদর (শবে কদর) রয়েছে, যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। তাই দ্বিতীয় দশক থেকেই শবে কদরের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া দরকার।

কিভাবে প্রস্তুতি নেবেন?
রাতের ইবাদতের পরিমাণ বৃদ্ধি করা
আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য আরও বেশি ইবাদত করা
শেষ দশকের জন্য একটি ইবাদতের রুটিন ঠিক করে রাখা

রমজানের দ্বিতীয় দশক আমাদের জন্য ক্ষমা লাভের এক সুবর্ণ সুযোগ। এই সময়ে আমাদের উচিত গুনাহ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বেশি করে দোয়া করা, তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া, কুরআন তিলাওয়াত করা এবং দান-সদকা করা। আল্লাহ যেন আমাদের এই রমজান কবুল করেন এবং সবাইকে ক্ষমা করে দেন। আমিন!

আরবি/এসআর

Link copied!