জ্ঞাপন করি কৃতজ্ঞতা না দেই খোঁটা

জামিল আহমদ

প্রকাশিত: মার্চ ১৩, ২০২৫, ০৯:৩২ এএম

জ্ঞাপন করি কৃতজ্ঞতা না দেই খোঁটা

ফাইল ছবি

সামাজিক সাধারণ নিয়ম হচ্ছে উপকারের বিনিময়ে উপকার করা। যেহেতু সব উপকারের বিনিময়ে উপকার করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়; তাই আমরা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করি। কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মধ্যে অনেক কল্যাণ নিহিত রয়েছে। গুণীজনরা বলেন, ‘কোনো পুরস্কার দিতে তোমার হাত যদি সংকীর্ণ হয়, তাহলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশের তোমার জিহ্বাকে যথেষ্ট লম্বা করো।’

আল্লাহ কোরআনে বলেছেন, ‘যে কৃতজ্ঞ হয়, সে তো কেবল স্বীয় কল্যাণের জন্যই কৃতজ্ঞ হয়। আর সে অকৃতজ্ঞ হলে তো আল্লাহ অভাবমুক্ত, প্রশংসিত।’ (সুরা লোকমান ১২)। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে মানুষের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না, সে আল্লাহর প্রতিও কৃতজ্ঞ হয় না।’ (তিরমিযি ১৯৫৫)
মানবজীবনে সুখে-দুঃখে সর্বাবস্থায় মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা উচিত। 

আল্লাহ মানবজাতিকে বিভিন্নভাবে পরীক্ষা করে দেখেন, বান্দা তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে কি না? বান্দা যদি কৃতজ্ঞ হয়, তাহলে তার জন্য রয়েছে উত্তম প্রতিদান। কোরআনে আল্লাহ কৃতজ্ঞতার প্রসঙ্গ যতবার উল্লেখ করেছেন ততবারই অকৃতজ্ঞ হতে নিষেধ করেছেন। কেননা অকৃতজ্ঞতা ও দম্ভের কারণে শয়তান অভিশপ্ত হয়েছে। 

সুতরাং আমাদের আবশ্যই আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হতে হবে। আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহের তুলনায় আমাদের শুকরিয়া জ্ঞাপন খুবই সামান্য। আল্লাহর অফুরন্ত নিয়ামতরাজির যথাযথ কৃতজ্ঞতা দেখানোর সামর্থ্য মানুষের নেই। আমাদের কৃতজ্ঞতার প্রয়োজন আল্লাহর নেই; বরং আমাদের কল্যাণের জন্যই আমাদের আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হতে হবে।

উপকারকারীর জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করাও কৃতজ্ঞতার একটি প্রকাশ। আমরা হয়তো কারো জন্য সরাসরি কিছু করতে পারি না, তবে যদি মহান আল্লাহ নিজ হাতে তাকে পুরস্কৃত করেন, তা অবশ্যই তার মর্যাদা অনুযায়ী হবে। তাই যখন আমরা কারো দ্বারা উপকৃত হই বা বিপদে কাউকে পাশে পাই, তখন তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য আমরা রসুলুল্লাহ (সা.)-এর ভাষায় ‘জাজাকাল্লাহ’ বলার মাধ্যমে দোয়া করতে পারি। এ ছাড়া মোনাজাতে তার জন্য মহান আল্লাহর কাছে কল্যাণ কামনা করাও একটি সুন্দর কাজ।

আর উপকার করে খোঁটা দেওয়া একটি বিশ্রী অভ্যাস। এটা মানুষের ব্যক্তিত্বকে ছোট করে দেয়। দেখা যায়, একশ্রেণির মানুষ দান-দক্ষিণা করে এবং অন্যকে ঋণ দিয়ে পরক্ষণেই খোঁটার বাণে জর্জরিত করে। 

গ্রহীতার সঙ্গে দাতার কোনো কারণে সম্পর্ক নষ্ট হলে তখন অতীতে উপকারের ফিরিস্তি খুলে দেয়। কাউকে সহযোগিতা করে খোঁটা দেওয়া ইসলামে নিকৃষ্ট অপরাধ। খোঁটা দিলে উপকারের সওয়াব বিনষ্ট হয়ে যায়। তাই খোঁটা দেওয়া ইসলামের দৃষ্টিতে জঘন্য অন্যায় ও কবিরা গুনাহ হিসেবে বিবেচিত। 

মূলত যারা সংকীর্ণমনা তারাই উপকার করে অপরকে খোঁটা দেয়। আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন তাদের সাথে কথা বলবেন না বলে হাদিসে এসেছে। রাসুল (সা.) বলেন, তিন শ্রেণির লোকের সঙ্গে আল্লাহ কেয়ামতের দিন কথা বলবেন না। খোঁটাদানকারী; সে যা কিছু দান করে পরক্ষণেই তার খোঁটা দেয়। আর যে ব্যক্তি মিথ্যা শপথ করে তার পণ্য বিক্রি করে এবং যে ব্যক্তি টাখনুর নিচে কাপড় ঝুলিয়ে চলে বা পরিধান করে। (মুসলিম, হাদিস নং: ২০২)

তাই কাউকে উপকার করতে চাইলে, নিঃস্বার্থভাবেই করব। উপকার করে খোঁটা দিতে যাব না। নিজের ব্যক্তিত্ব ছোট করার পাশাপাশি উপকারের সওয়াব নষ্ট করব না। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন।
লেখক : গণমাধ্যমকর্মী
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!