রোজা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। তবে, গর্ভাবস্থায় রোজা রাখা নিয়ে অনেক গর্ভবতী মায়ের মনে নানা প্রশ্ন থাকে—রোজা রাখা যাবে কি না, এতে গর্ভের সন্তানের কোনো ক্ষতি হবে কি না, অথবা গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে কি না? এ ধরনের প্রশ্নের উত্তর আসলে নির্ভর করে গর্ভবতী নারীর শারীরিক অবস্থা এবং তার গর্ভের সন্তানের স্বাস্থ্যের ওপর।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং ইসলামী বিশেষজ্ঞদের মতে, সঠিক পদ্ধতিতে রোজা রাখলে গর্ভাবস্থায় কোনো সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে, কিছু শর্ত এবং সাবধানতা মেনে চলা উচিত। গর্ভাবস্থায় রোজা রাখার শর্তসমূহ-
গর্ভবতী নারীর শারীরিক অবস্থার গুরুত্ব
রোজা রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে, গর্ভবতী নারীর শারীরিক অবস্থা খতিয়ে দেখতে হবে। যদি কোনো গুরুতর শারীরিক সমস্যা থাকে, যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, অথবা গর্ভাশয়ের কোনো সমস্যা, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।
শিশুর নিরাপত্তা
অধিকাংশ গবেষণায় দেখা গেছে, রোজা রাখলে গর্ভের শিশুর উপর কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়ে না, তবে গর্ভবতী মায়ের শরীরের পুষ্টি ও শক্তি যথেষ্ট থাকা উচিত। গর্ভের শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি মায়ের শরীরে মজুত থাকে, তবে তা রোজা রাখার সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে না থাকলে শিশুর স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
গরমের সময়ে রোজা রাখা
গরমের সময় রোজা রাখা একটু ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, কারণ দীর্ঘ সময় পানি না খাওয়ার ফলে গর্ভবতী মায়ের শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। গরমের দিনে রোজা রাখার ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, যেমন সূর্যাস্তের সময় ইফতারের আগে পর্যাপ্ত পানি পান করা।
গর্ভবতী মায়ের যদি কোনো শারীরিক সমস্যা থাকে
যদি মায়ের শরীরে কোনো রোগ থাকে, যেমন ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ, এবং সে যদি ইনসুলিন বা অন্যান্য ওষুধ ব্যবহার করে, তবে তাকে রোজা রাখা থেকে বিরত থাকা উচিত। কারণ রোজা রাখার ফলে ব্লাড সুগারের স্তর কমে যেতে পারে, যা মা এবং শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
রোজা রাখার সময় যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে
বিশ্রাম নিন
গর্ভাবস্থায় শরীরের অনেক পরিবর্তন ঘটে, তাই রোজা রাখার সময় পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অধিক পরিশ্রম, হাঁটাহাঁটি বা ভারী কাজ করা থেকে বিরত থাকুন।
পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুন
রোজা রাখার সময় ইফতার, সেহরি এবং রাতের খাবারে পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত। এতে শরীর শক্তি পায় এবং গর্ভের শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ হয়। সেহরিতে শাকসবজি, ফল, দুধ, ডিম এবং শর্করা জাতীয় খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন।
পর্যাপ্ত পানি পান করুন
দীর্ঘ সময় পানিহীন থাকার কারণে গর্ভবতী মায়ের শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে, যা মা এবং শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই রোজা রাখার সময় পর্যাপ্ত পানি পান করুন, বিশেষ করে ইফতার ও সেহরির সময়।
ঘুমের প্রতি গুরুত্ব দিন
পর্যাপ্ত ঘুম গর্ভবতী নারীর শরীরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাত জাগা থেকে বিরত থাকতে হবে, কারণ ঘুমের অভাবে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে এবং এটি গর্ভবতী মায়ের স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন?
গর্ভাবস্থায় রোজা রাখার সময়ে কিছু লক্ষণ দেখা দিলে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তা বা উদ্বেগ অনুভব করলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। নিচে কিছু লক্ষণের তালিকা দেওয়া হলো, যা দেখে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি-
গর্ভের শিশুর নড়াচড়া বন্ধ হয়ে গেলে।
তলপেটে বা পিঠে তীব্র ব্যথা অনুভব হলে।
শক্তি ও শক্তির অভাব অনুভব করলে, যদিও পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া হয়।
বমি, মাথাব্যথা বা তীব্র ক্লান্তি অনুভব করলে।
জ্বর বা শীতল ভাব অনুভব করলে।
গর্ভের শিশুর ওজন না বাড়লে।
ঘন ঘন প্রস্রাব বা গন্ধযুক্ত প্রস্রাব হলে।