ইসলামে ধর্ষণ একটি গুরুতর অপরাধ এবং এর জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে। ইসলামি শরিয়তে শিরক ও হত্যার পর ব্যভিচার ও ধর্ষণকে বড় ধরনের অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।
আল্লাহতায়ালা কুরআনে বলেন, ‘হে নবী! আপনি মুমিনদের বলে দিন, তারা যেন নিজেদের দৃষ্টি অবনত রাখে এবং লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। এটাই তাদের জন্য সবচেয়ে বড় পবিত্রতা। নিশ্চয়ই তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন।’ (সূরা নূর : ৩০)
ইসলামী শরিয়ত অনুযায়ী, বিবাহিত ব্যভিচারীর শাস্তি হলো প্রকাশ্যে পাথর মেরে মৃত্যুদণ্ড, আর অবিবাহিত ব্যভিচারীর শাস্তি একশটি বেত্রাঘাত।
আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, ‘ব্যভিচারিণী ও ব্যভিচারী, তাদের প্রত্যেককে একশটি করে বেত্রাঘাত করো। আল্লাহর বিধান কার্যকর করতে তোমাদের মনে দয়া যেন স্থান না পায়, যদি তোমরা আল্লাহতে এবং পরকালে বিশ্বাসী হও। আর মুমিনদের একটি দল যেন তাদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে।’ (সূরা নূর: ২)
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, অবিবাহিত পুরুষ ও নারীর ক্ষেত্রে শাস্তি একশ বেত্রাঘাত এবং এক বছরের জন্য দেশান্তর। আর বিবাহিত পুরুষ ও নারীর ক্ষেত্রে একশ বেত্রাঘাত ও রজম তথা পাথর মেরে মৃত্যুদণ্ড। (সহিহ মুসলিম)
ধর্ষণের শাস্তি আরও কঠোরভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, কারণ এতে একপক্ষ পাশবিক হিংস্রতার শিকার হয়। রাসূল (সা.)-এর যুগে এক মহিলাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করা হলে নবীজি (সা.) তাকে কোনো শাস্তি দেননি; বরং ধর্ষককে কঠোর শাস্তি দেন। (ইবনে মাজাহ ২৫৯৮)
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সম্ভ্রম রক্ষা করতে গিয়ে যে নিহত হয়, সে শহিদ।’ (আবু দাউদ, তিরমিজি) অর্থাৎ, নিজের সম্মান রক্ষার জন্য লড়াই করতে গিয়ে নিহত হলে তাকে শহিদের মর্যাদা দেওয়া হবে।
আধুনিক আইনেও ধর্ষণের জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০-এর ৯ ধারায় বলা হয়েছে, ‘যদি কোনো পুরুষ কোনো নারী বা শিশুকে ধর্ষণ করেন, তাহলে তিনি মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এবং অতিরিক্ত অর্থদণ্ডেও দণ্ডিত হবেন।’
ইসলামে ধর্ষণের শাস্তি কঠোরভাবে প্রয়োগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যাতে অন্য কেউ এমন ঘৃণ্য অপরাধ করতে সাহস না পায়। ইসলামে প্রকাশ্য শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে, যাতে মানুষ তা দেখে শিক্ষা নিতে পারে এবং সমাজে ভয় ও শৃঙ্খলা বজায় থাকে।
বর্তমানে ধর্ষণের ঘটনা সমাজে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। চার থেকে আট বছর বয়সী শিশুরাও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে, যা মানুষের নৈতিক অবক্ষয়ের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ। এ সমস্যা সমাধানে পারিবারিক ও ধর্মীয় শিক্ষার গুরুত্ব অনেক বেশি।