অন্যের দোষ না খুঁজি গোপন রাখি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: মার্চ ১৭, ২০২৫, ১০:১১ এএম

অন্যের দোষ না খুঁজি গোপন রাখি

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

    ভুল-ত্রুটি, দোষ-গুণ মিলিয়েই মানুষ। আল্লাহর বিশেষ বান্দারা ছাড়া পৃথিবীতে কেউ এসবের ঊর্ধ্বে নয়। তাই অন্যের দোষ অনুসন্ধান করা ও প্রচার করা মুমিনের জন্য শোভনীয় নয়। আল্লাহও চান, বান্দা দোষ গোপন রাখার গুণে গুণান্বিত হোক। তাই যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের দোষ আড়াল করবে, কঠিনতম পরিস্থিতিতে আল্লাহ তার দোষ গোপন রাখবেন। 

মুমিনের বৈশিষ্ট্য হলো অন্যের ভালো কাজগুলোয় সমর্থন দেওয়া এবং কারো দোষ-ত্রুটি অনুসন্ধান না করা। তবে বর্তমান সময়ে অনেকের মধ্যেই পান থেকে চুন খসলেই একজনের কথা অন্যজনের কাছে গিয়ে বলা কিংবা অন্যের দোষ খোঁজার প্রবণতা দেখা যায়। যা মোটেও উচিত নয়।  

ইসলাম মানুষের এসব গোপনীয়তাকে সম্মান করে, গুরুত্ব দেয়। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘আর তোমরা গুপ্তচরবৃত্তি করো না’। (সূরা হুজুরাত ১২)। স্বয়ং আল্লাহ যে জিনিস নিষেধ করেছেন, তাকে ভয় করা এবং তা থেকে দূরে থাকাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। 

মানুষের গোপনীয়তার সঙ্গে তার সম্মান জড়িত। কারো সম্মানে আঘাত করা বা কাউকে অপমানিত করা ইসলাম কখনো সমর্থন করে না। স্পষ্ট হারাম এটা। তাই কারো কোনো গোপন বিষয় জেনে গেলেও তা অন্যের কাছে প্রকাশ করব না। 

তবে দেশ, সমাজ ও মানুষের নিরাপত্তা বিধান নিশ্চিত, শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা প্রকল্পে, চোর-ডাকাত, খুনি, সন্ত্রাসী, দুর্নীতিবাজ, মাদক কারবারি, ঋণখেলাপি, প্রতারক ও ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত লোকদের খোঁজে বের করতে গোয়েন্দাগিরি করা যাবে। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় গোয়েন্দা নিযুক্ত করতে কোনো অসুবিধে নেই।

দোষ গোপন রাখায় আছে পুরস্কার: মানুষের দোষ গোপন রাখা মহৎ কাজ। দোষ-ত্রুটি প্রকাশের ফলে ব্যক্তি সানন্দে জীবনযাপন করতে পারে না। চলাফেরার পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। পৃথিবী তার জন্য সংকীর্ণ হয়ে যায়। 

মানুষের কল্যাণার্থে মানুষের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখা অপরিহার্য। আল্লাহ তাআলা দোষ-ত্রুটি গোপনকারীর দোষ গোপন করেন। তাকে উভয় জগতে পুরস্কৃত করেন। মানবতার নবী মুহাম্মদ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানের দোষ গোপন রাখে আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তার দোষ ঢেকে রাখবেন।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৯৪৫)

দোষ অনুসন্ধানকারীর শাস্তি ভয়াবহ: পরের দোষ খোঁজা নিন্দনীয়। কোনো গোপনীয় সভা কিংবা দলের পেছনে অকারণে গুপ্তচরের ভূমিকা পালন করা গুনাহ। মানুষের অপছন্দ হওয়া সত্ত্বেও কোনো ব্যক্তি যদি তাদের কথা শোনে; গোয়েন্দাগিরি করে তাহলে তার জন্য আছে ভয়াবহ শাস্তি। রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি কোনো সম্প্রদায়ের কথা গুপ্তভাবে শুনল; অথচ সে তাদের কথাগুলো শুনুক তারা তা পছন্দ করছে না অথবা তারা তার অবস্থান টের পেয়ে তার থেকে দূরে পালিয়ে যাচ্ছে, কিয়ামতের দিন এ জন্য তার কানে সিসা ঢেলে দেওয়া হবে।’ (বুখারি, হাদিস : ৭০৪২)

শুধু অন্যের নয়, নিজের গোপনীয় বিষয়ও ফাঁস করা যাবে না। কারণ আল্লাহর কাছে তওবা করে ক্ষমা চাইলে তিনি তা ক্ষমা করবেন। কিন্তু প্রকাশ করে দিলে আল্লাহর আবৃত পর্দা খুলে ফেলা হয়। ফলে গোপন রাখার সুযোগ তাঁর থাকে না। তাই নিজের হোক বা অন্যের কারো ব্যক্তিগত ত্রুটি প্রকাশ করা মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়। তাই আজ থেকে আমরা প্রতিজ্ঞা করি, কারো দোষ-ত্রুটি অন্যদের কাছে প্রকাশ করব না, পরচর্চা ও পরনিন্দা করব না। আল্লাহ তাআলা আমাদের সেই তাওফিক দান করুন। আমিন।
লেখক : গণামধ্যমকর্মী
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!