বুধবার, ২৬ মার্চ, ২০২৫

রমজানের ২০তম দিনের ফজিলত

ধর্ম ডেস্ক

প্রকাশিত: মার্চ ২১, ২০২৫, ০৯:০৬ এএম

রমজানের ২০তম দিনের ফজিলত

ছবি: রূপালী বাংলাদেশ

চলছে পবিত্র রমজান মাস। আজ রোজার ২০তম দিন। সিয়াম-সাধনার এ মাসজুড়েই রয়েছে রহমত, বরকত ও নাজাতের সাওগাত। মুমিনের জন্য সৌভাগ্যের বার্তা নিয়ে আসে এ মাস। ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে আল্লাহর রাজি-খুশি হাসিলের বড় সুযোগ এ মহান মাসে।

মুসলিম উম্মাহ তাই মাসটি পরম যতনে খোদা তায়ালার নৈকট্য হাসিলে ব্যয় করে থাকেন। পবিত্র রমজানের ফজিলত ও মর্যাদা সম্পর্কে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে- প্রিয় নবীজি (সা.) এর প্রিয় সাহাবী হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেছেন, রাসুল (সা.) এরশাদ করেছেন, যখন রমজান মাস আসে আসমানের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয় এবং দোজখের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়, আর শয়তানকে শৃঙ্খলিত করা হয়। (বুখারি, মুসলিম)

অন্য হাদিসে এসেছে, হজরত শাহ্ ইবনে সা’দ (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারীম (সা.) এরশাদ করেছেন, বেহেশতের ৮টি দরজা রয়েছে। এর মধ্যে ১টি দরজার নাম রাইয়ান। রোজাদার ব্যতীত আর কেউ ওই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। (বুখারি, মুসলিম)

আজ রমজানের ২০তম দিন। এ দিনটিতে আল্লাহর পথে জীবন দানকারী শহিদের সমান সাওয়াব প্রদান করা হয়। বস্তুত, ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে আত্মশুদ্ধির যে সুযোগ বছরের এ মাসটিতে মুমিনের জন্য থাকে, তা সারা বছর আর কখনো পাওয়া যায় না। তাই তো প্রত্যেকের উচিত বেশি বেশি ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে নাজাতের পথ প্রশস্ত করা।

রমজানের শেষ ১০ দিনের মাহাত্ম্য
পবিত্র রমজানের প্রথম ১০ দিন রহমতের, দ্বিতীয় ১০ দিন ক্ষমা লাভের আর শেষ ১০ দিনে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তির। আগামীকাল থেকে শুরু হবে পবিত্র রমজানের শেষ ১০ দিন।

এ জন্য আল্লাহ পবিত্র কোরআনে এবং রাসুল (সা.) রমজানের শেষ ১০ দিনের প্রতি অনেক গুরুত্বারোপ করেছেন। সেই সঙ্গে নানা নফল ইবাদত দিয়ে শেষ ১০ দিনকে সমৃদ্ধ করেছেন।

মুসলিম উম্মার জন্য পবিত্র রমজানের প্রতিটি মুহূর্তই রহমত বর্ষিত হয়। সবচেয়ে বেশি রহমত থাকে রমজানের শেষ দশ দিন। এই ১০ দিনের মধ্যেই রয়েছে পবিত্র শবেকদর।

এ সময়ে বহু গুরুত্বপূর্ণ আমল করার নিয়ম আছে। রমজানুল কারিমের শেষ ১০ দিনের ১০টি মাসনুন আমল-
রমজানের সাধারণ আমলগুলো এই দশকে আরও বেশি গুরুত্বের সঙ্গে সম্পাদন করা।
এতেকাফ করা।
ইবাদতের জন্য রাত্রিজাগরণ করা।
পরিবারের সদস্যদের রাত্রিজাগরণে উদ্বুদ্ধ করা।
কোমর বেঁধে ইবাদতে মশগুল হওয়া বা ইবাদতের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা।
অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে ইবাদতের জন্য অধিক পরিমাণ সাধনা করা।
প্রতি রাতে বিশেষ করে বেজোড় রাতগুলোতে শবে কদরের আশায় ইবাদত করা।
শবেকদরের দোয়া পড়া। আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফাফু আন্নি।
ঈদের চাঁদ অনুসন্ধান করা ও চাঁদ দেখার দোয়া পড়া।
সাদকাতুল ফিতর আদায় করা।

সহিহ বুখারি শরিফের একটি হাদিসে রোজার শেষ দশ দিন সম্পর্কে আয়েশা (রা.) বলেছেন, শেষ দশ দিন শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নবীজি (সা.) ইবাদতে ব্যস্ত থাকতেন এবং পরিবারের সদস্যদের ও সারারাত জেগে ইবাদত করতে বলতেন।

রমজানের শেষ দশকের ফজিলত ও তাৎপর্য রমজান মাসের শেষ দশকের বিশেষ ফজিলত রয়েছে এবং আছে বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য। এগুলো হলো:

এ দশ দিনের মাঝে রয়েছে লাইলাতুল কদর নামের একটি রাত। যা হাজার মাস থেকেও শ্রেষ্ঠ। যে এ রাতে ঈমান ও ইহতিসাবের সঙ্গে ইবাদত-বন্দেগি করবে তার অতীতের পাপগুলো ক্ষমা করে দেওয়া হবে।

নবী করিম (সা.) এ রাতে ইবাদত-বন্দেগিতে বেশি সময় ও শ্রম দিতেন, যা অন্য কোনো রাতে দেখা যেত না। যেমন মুসলিম শরীফে আয়েশা (রা.) বর্ণিত হাদিসে এসেছে যে, তিনি এ রাতে কোরআন তেলাওয়াত, জিকির, সালাত ও দোয়ার মাধ্যমে জাগ্রত থাকতেন এরপর সাহরি গ্রহণ করতেন।

রমজানের শেষ দশক আসলে রাসুলুল্লাহ (সা.) পরনের লুঙ্গি শক্ত করে নিতেন। রাত্রি জাগরণ করতেন এবং পরিবারের সবাইকে জাগিয়ে দিতেন।
এ দশ দিনের একটি বৈশিষ্ট্য হলো, রাসুলুল্লাহ (সা.) এ শেষ দশ দিনে মসজিদে এতেকাফ করতেন। প্রয়োজন ব্যতীত তিনি মসজিদ থেকে বের হতেন না। লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এ রাতকে সব রাতের চেয়ে শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা দিয়েছেন।

তিনি তার কালামে এ রাতকে প্রশংসার সঙ্গে উল্লেখ করেছেন। তিনি তার কালাম সম্পর্কে বলতে গিয়ে এরশাদ করেন: ‘আমি তো ইহা অবতীর্ণ করেছি এক বরকতময় রজনীতে। আমি তো সতর্ককারী। এ রজনীতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় স্থিরকৃত হয়।’


 

সুরা আল-কদর এ সুরাতে যেসব বিষয় জানা গেল তা হলো:
এ রাত এমন এক রজনি যাতে মানবজাতির হেদায়াতের আলোকবর্তিকা মহাগ্রন্থ আল-কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে।
এ রজনি হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। অর্থাৎ তিরাশি বছরের চেয়েও এর মূল্য বেশি।
এ রাতে ফেরেশতাগণ রহমত, বরকত ও কল্যাণ নিয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করে থাকে।
এ রজনি শান্তির রজনি। আল্লাহর বান্দারা এ রাতে জাহান্নামের শাস্তি থেকে মুক্তি পেয়ে শান্তি অর্জন করে থাকে।
সময়ের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া। এ আয়াতগুলোতে অল্প সময়ে বেশি কাজ করার জন্য উৎসাহ প্রদান করা হলো। যত সময় বেশি তত বেশি কাজ করতে হবে। সময় নষ্ট করা চলবে না।

গুনাহ ও পাপ থেকে ক্ষমা লাভ। এ রাতের এই ফজিলত সম্পর্কে বুখারি ও মুসলিম বর্ণিত হাদিসে এসেছে নবী করিম (সা.) বলেছেন: যে লাইলাতুল কদরে ঈমান ও ইহতিসাবের সঙ্গে সালাত আদায় ও ইবাদত-বন্দেগি করবে তার অতীতের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।


হাদিসে এসেছে: ‘যে লাইলাতুল কদর অন্বেষণ করতে চায় সে যেন শেষ সাত দিনে অন্বেষণ করে।’

অধিকতর সম্ভাবনার দিক দিয়ে প্রথম হলো রমজান মাসের সাতাশ তারিখ। দ্বিতীয় হলো পঁচিশ তারিখ। তৃতীয় হলো ঊনত্রিশ তারিখ। চতুর্থ হলো একুশ তারিখ। পঞ্চম হলো তেইশ তারিখ। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এ রাতকে গোপন রেখেছেন আমাদের ওপর রহম করে।

তিনি দেখতে চান এর বরকত ও ফজিলত লাভের জন্য কে কত প্রচেষ্টা চালাতে পারে। লাইলাতুল কদরে আমাদের করণীয় হলো বেশি করে দোয়া করা।
আয়েশা (রা.) নবী করিম (সা.) কে জিজ্ঞেস করলেন, লাইলাতুল কদরে আমি কি দোয়া করতে পারি? তিনি বললেন: ‘হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমাকে ভালোবাসেন, অতএব আমাকে ক্ষমা করুন।’


 

আরবি/এসআর

Link copied!