শনিবার, ২৯ মার্চ, ২০২৫

লাইলাতুল কদর : যে আলামত দেখে বুঝবেন

মোহাম্মদ সিজিল মিয়া

প্রকাশিত: মার্চ ২৬, ২০২৫, ০৩:২৮ পিএম

লাইলাতুল কদর : যে আলামত দেখে বুঝবেন

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

শেষ দশকে পবিত্র মাহে রমজান। এ সময় বিজোড় রাতে লাইলাতুল কদর তালাশ করতে নির্দেশ দিয়েছেন মহানবী (সা.)।

লাইলাতুল কদর, যা আমাদের মুসলমানদের জীবনে গোনাহ মাফের অন্যতম মাধ্যম। লাইতুল কদর সম্পর্কে কোরআন মাজিদে একটি সূরা নাজিল করা হয়েছে, যা সূরাতুল কদর নামে নামকরণ করা হয়েছে। আরবি لیلة القدر‎‎ । আরবি ভাষায় ‘লাইলাতুল’ অর্থ হলো রাত্রি বা রজনী এবং ‘কদর’ শব্দের অর্থ সম্মান, মর্যাদা, মহাসম্মান।

অর্থাৎ অতিশয় সম্মানিত ও মহিমান্বিত রাত বা পবিত্র রজনী। লাইলাতুল কদর তথা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ রাত কেনো বলা হয়? লাইলাতুল কদর এর মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে মুলত কোরআন নাজিলের জন্য। ৬১০ খ্রিষ্টাব্দে শবে কদরের রাতে মক্কার নূর পর্বতের হেরা গুহায় ধ্যানরত মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নিকট সর্বপ্রথম কোরআন নাজিল হয়।

অন্যভাবে বলা যায়, আমাদের পূর্ববর্তী নবীদের উম্মতেরা দুনিয়াতে আমাদের চেয়ে বেশি দিন হায়াত পেতেন। দুনিয়াতে দীর্ঘ সময় পাওয়ায় বেশি আমল করার সুযোগ পেতেন তারা। এদিকে হিসেব করলে আমরা তাদের তুলনা আমলে কম হয়ে যাব অথবা পিছনে পড়ার সম্ভাবনা আছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আলেমুল গায়েব, আহকামুল হাকিমিন, অন্যান্য নবীদের উম্মতের চেয়ে যাতে আমাদের আমলের পাল্লা যেনো ভারী হয় সেজন্য আমাদের লাইতুল কদরের মতো রাত্রি দান করেছেন। সুবহানাল্লাহ।

লাইতুল কদর সম্পর্কে আল্লাহ পাক কোরআনের সূরা আল-কদরে বলেন, নিশ্চয়ই আমি তা (কোরআন) অবতীর্ণ করেছি কদরের রাতে। আর কদরের রাত সম্বন্ধে তুমি কি জানো? কদরের রাত হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। সে রাতে ফেরেশতারা ও রুহ অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে। শান্তিই শান্তি, বিরাজ করে উষার আবির্ভাব পর্যন্ত। (সূরা আল-কদর, আয়াত ১-৫)

(২) হা-মীম! শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের, নিশ্চয়ই আমি তা (কোরআন) এক মুবারকময় রজনীতে অবতীর্ণ করেছি, নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী। এ রাতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়। (সূরা আদ-দুখান, আয়াত: ১-৪)

লাইলাতুল কদর সম্পর্কে হাদিসে যা বলা হয়েছে-

১. রাসূল (সা.) বলেছেন- যে ব্যক্তি ঈমান ও সাওয়াব লাভের আশায় কদরের রাতে নফল সালাত আদায় ও রাত জেগে ইবাদত করবে আল্লাহ তার ইতোপূর্বের সকল সগীরা (ছোট) গুনাহ ক্ষমা করেদেন। (সহিহ বুখারী)

২. শবে কদরে হযরত জিবরাঈল (আ.) ফেরেশতাদের বিরাট একদল নিয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করেন এবং যত নারী-পুরুষ নামাজরত অথবা জিকিরে মশগুল থাকে তাদের জন্য রহমতের দোয়া করেন। (মাযহারি)

৩. হযরত আয়েশা (রা.) শবে কদর সম্বন্ধে  মহানবীর (সা.) কাছে জানতে চান, হে রাসুলুল্লাহ! আমি যদি লাইলাতুল কদর পাই তখন কী করব? তখন নবী মত দেন, তুমি বলবে, হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আপনি ক্ষমাশীল, আপনি ক্ষমা করে দিতে ভালোবাসেন—অতএব, আমাকে ক্ষমা করুন। (তিরমিযি)

এখন প্রশ্ন হলো কোন রাতটি লাইলাতুল কদর হবে? এই ব্যাপারে আমাদের দেশে বাড়াবাড়ি হয়, কেউ কেউ সরাসরি বলে দেন রমজানের ২৭ তারিখ শবে কদর। যা সুন্নাহ পরিপন্থী। এ ব্যাপারে হাদিসে বলা হয়েছে, তোমরা রমজানের শেষ ১০ রাতে শবে কদর সন্ধান করো। (বুখারি ও মুসলিম)

আরেকটি হাদিসে মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, মাহে রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে তোমরা শবে কদর সন্ধান করো। (সহিহ বুখারী) অর্থাৎ ২১, ২৩, ২৫, ২৭, ২৯ রোজার রাতে হাদিসের ভাষায় শবে কদর তালাশ করার ব্যাপারে বলা হয়েছে।

আবার অনেক ওলামায়ে কেরামদের মতে ২৭ রমজানে শবে কদর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি রয়েছে। এই ব্যাপারে বলা হয়েছে-

১. হযরত উবাই ইবনে কাব নবী (সা.) হতে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, তিনি বলেন যে, আল্লাহর শপথ করে বলছি, আমি যতদূর জানি রাসূল (সা.) আমাদের যে রজনীকে কদরের রাত হিসেবে কিয়ামুল্লাইল করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন তা হলো রমাজানের ২৭তম রাত। (মুসলিম)

২. আব্দুল্লাহ বিন ‘উমার থেকে বর্ণিত রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কদরের রাত অর্জন করতে ইচ্ছুক, সে যেন তা রমাজানের ২৭ রজনীতে অনুসন্ধান করে। (আহমাদ)

লাইলাতুল কদরের রাতকে অস্পষ্ট করে গোপন রাখা হয়েছে। এটা স্পষ্ট করে নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি কেন? কারণ, এ রাতের পুরস্কার লাভের আশায় কে কত বেশি সক্রিয় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে এবং কত বেশি সচেষ্ট হয়, আর কে নাফরমান ও আলসে ঘুমিয়ে রাত কাটায় সম্ভবত এটা পরখ করার জন্যই আল্লাহ তা‘আলা এ রাতকে গোপন ও অস্পষ্ট করে রেখেছেন।

সর্বশেষ রাতটি লাইলাতুল কদর হবে যে সেটি বুঝার বিভিন্ন আলামত হাদিসের মধ্যে পাওয়া যায়। যেমন-

১. রাতটি গভীর অন্ধকারে ছেয়ে যাবে না।
২. নাতিশীতোষ্ণ হবে। অর্থাৎ গরম বা শীতের তীব্রতা থাকবে না।
৩. মৃদুমন্দ বাতাস প্রবাহিত হতে থাকবে।

৪. সে রাতে ইবাদত করে মানুষ অপেক্ষাকৃত অধিক তৃপ্তিবোধ করবে।
৫. কোন ঈমানদার ব্যক্তিকে আল্লাহ স্বপ্নে হয়তো তা জানিয়েও দিতে পারেন।
৬. ওই রাতে বৃষ্টি বর্ষণ হতে পারে।
৭. সকালে হালকা আলোকরশ্মিসহ সূর্যোদয় হবে। যা হবে পূর্ণিমার চাঁদের মতো।

আল্লাহ যেনো আমাদেরকে লাইলাতুল কদরে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারার সেই তাওফিক দান করেন। আমিন ইয়া রাব্বাল আলামিন।

লেখক: সাংবাদিক, শিক্ষক।

আরবি/এসএমএ

Link copied!