বরকতময় ভূমি ফিলিস্তিন। যেখানে অসংখ্য নবী-রাসূলের পদচিহ্ন পড়েছে। সেই ফিলিস্তিনকে নিশ্চিহ্ন করার চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছে ইহুদিরা। তারা সেখানে মসিহু দাজ্জালের আগমন সুগম করতে নির্বিচারে লাখ লাখ নারী-শিশুকে বোমার আঘাতে হত্যা করছে। অথচ আরব বিশ্ব নীরব। যেন তাদের কোনোই করার নেই। ফিলিস্তিনে একদিকে মুসলিমদের রক্ত দিয়ে হলি খেলছে ইসরায়েল, অন্যদিকে রঙের হলিতে মেতে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম রাষ্ট্রগুলো।
অথচ এই বরকতময় ভূমি ও এর মজলুম অধিবাসীদের সুরক্ষার দায়িত্ব শুধু ফিলিস্তিনিদের নয়, বরং প্রত্যেক মুসলিমের। এ অধিকার মুসলমানদের আল্লাহ তাআলাই দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,‘যাদের সঙ্গে যুদ্ধ করা হচ্ছে, তাদেরকে অনুমতি দেওয়া যাচ্ছে (তারা নিজেদের প্রতিরক্ষার্থে যুদ্ধ করতে পারে)। যেহেতু তাদের প্রতি জুলুম করা হয়েছে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদেরকে জয়যুক্ত করতে পরিপূর্ণ সক্ষম। যাদেরকে তাদের ঘর-বাড়ি হতে অন্যায়ভাবে কেবল এ কারণে বের করা হয়েছে যে, তারা বলেছিল, আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ।’ (সুরা হজ: ৩৯-৪০)
আল্লাহ তাআলা আরও কঠিনভাবে নির্দেশ দিচ্ছেন- ‘(হে মুসলিমগণ!) তোমাদের জন্য এর কী বৈধতা আছে যে, তোমরা আল্লাহর পথে সেসকল অসহায় নর-নারী ও শিশুদের জন্য লড়াই করবে না, যারা দোয়া করছে, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে এই জনপদ থেকে-যার অধিবাসীরা জালিম-অন্যত্র সরিয়ে নাও এবং আমাদের জন্য তোমার পক্ষ হতে একজন অভিভাবক বানিয়ে দাও এবং আমাদের জন্য তোমার পক্ষ হতে একজন সাহায্যকারী দাঁড় করিয়ে দাও।’ (সুরা নিসা: ৭৫)
মনে রাখা জরুরি- ‘এক মুসলিম আরেক মুসলিমের ভাই’। এক মুসলিম জুলুমের শিকার হলে অন্য ভাইদের দায়িত্ব হয়ে যায়, তার পক্ষে দাঁড়ানো। অতএব, ফিলিস্তিনবাসীর পাশে দাঁড়ানো এখন বিশ্ব মুসলিমের কর্তব্য।
রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘পারস্পরিক ভালোবাসা-সম্প্রীতি, দয়া-রহম, সহমর্মিতা ও সমব্যথী হওয়ার ক্ষেত্রে মুমিনদের দৃষ্টান্ত এক দেহের মতো, যার কোনো একটি অঙ্গ আক্রান্ত হলে বা অসুস্থ হলে পুরো দেহ নিদ্রাহীনতা ও জ্বরে কাতর হয়।’ (সহিহ মুসলিম: ২৫৮৬)
নবীজি আরও বলেছেন, ‘মুসলিমগণ একে অপরের ভাই, কোনো মুসলিম অপর ভাইয়ের ওপর জুলুম করতে পারে না, তাকে শত্রুর মোকাবেলায় সহায়তা না করে সঙ্গহীন একা ছেড়ে দিতে পারে না।’ (সহিহ বুখারি: ২৪৪২) ভাইকে মাজলুম অবস্থায় শত্রুর হাতে ছেড়ে দেওয়া ভাইয়ের পরিচয় হতে পারে না। বরং মজলুম ভাইয়ের পাশে দাঁড়াতে হবে এবং জালেমের বিরুদ্ধে জান-মাল দিয়ে নামতে হবে। তাহলেই আল্লাহ খুশি হবেন এবং বিজয় দেবেন।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর (দ্বীনের) সাহায্যকারী হয়ে যাও, যেমন ঈসা ইবনে মরিয়ম (আ.) হাওয়ারিদেরকে বলেছিলেন, আল্লাহর পথে কে আমার সাহায্যকারী হবে? হাওয়ারীগণ বললো, আমরা আল্লাহর (দ্বীনের) সাহায্যকারী। তারপর বনী ইসরাইলের একদল ঈমান আনল এবং একদল কুফর অবলম্বন করল। সুতরাং যারা ঈমান এনেছিল, আমি তাদেরকে তাদের শত্রুর বিরুদ্ধে সাহায্য করলাম, ফলে তারা বিজয়ী হলো।’ (সুরা সফ: ১৪)
আল্লাহ তআলা আরও ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনগণ! আমি কি তোমাদেরকে এমন এক ব্যবসার সন্ধান দেব, যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাময় শাস্তি থেকে রক্ষা করবে? (তা এই যে,) তোমরা আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি ঈমান আনবে এবং তোমাদের ধন-সম্পদ ও জীবন দ্বারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে। এটা তোমাদের পক্ষে শ্রেয়- যদি তোমরা উপলব্ধি কর।’
‘ফলে আল্লাহ তোমাদের পাপরাশি ক্ষমা করবেন এবং তোমাদেরকে প্রবেশ করাবেন এমন উদ্যানে, যার তলদেশে নহর প্রবাহিত থাকবে এবং এমন উৎকৃষ্ট বাসগৃহে, যা স্থায়ী জান্নাতে অবস্থিত। এটাই মহা সাফল্য। আর তোমাদেরকে দান করবেন তোমাদের পছন্দনীয় আরও একটি জিনিস, (তা হলো) আল্লাহর পক্ষ হতে সাহায্য এবং আসন্ন বিজয়!’ (সুরা সফ: ১০-১৩)
তাই জালেমের প্রতিরোধ করতে হবে সকল মুসলিম মিলে। এটাই কোরআন ও হাদিসের স্পষ্ট নির্দেশনা। এ দায়িত্বে উদ্বুদ্ধ করে মহানবী (সা.) বলেন, ‘মুমিনগণ পরস্পরে দেয়ালের মতো, যার এক অংশ অপর অংশকে শক্তি জোগায়।’ (সহিহ মুসলিম: ২৫৮৫)
আল্লাহ তাআলা মুমিনদের উদ্দেশে বিভিন্ন আয়াতে বলেছেন যে, তোমরা সাহস হারিও না। তোমরা শুধু চেষ্টা করে যাবে। মূল কাজটি আল্লাহই করবেন। যেমনটি ইরশাদ হয়েছে, ‘(হে নবী!) তুমি যখন নিক্ষেপ করেছিলে, তখন তা তুমি নিক্ষেপ করনি; বরং আল্লাহই নিক্ষেপ করেছিলেন।’ (সুরা আনফাল: ১৭)
অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, ‘(হে মুসলিমগণ!) তোমরা হীনবল হয়ো না এবং চিন্তিত হয়ো না। তোমরা প্রকৃত মুমিন হলে তোমরাই বিজয়ী হবে।’ (সুরা আল ইমরান: ১৩৯)
আরেক আয়াতে জালেম ও ইসলাম বিরোধীদের বিরুদ্ধে মুমিনদের সাহস দিয়ে আল্লাহ তাআলা বলছেন, ‘তাদের সাথে যুদ্ধ কর, যাতে আল্লাহ তোমাদের হাতে তাদেরকে শাস্তি দান করেন, তাদেরকে লাঞ্ছিত করেন, তাদের বিরুদ্ধে তোমাদেরকে সাহায্য করেন এবং মুমিনদের অন্তর জুড়িয়ে দেন।’ (সুরা তাওবা: ১৪)
এমনকি সংখ্যায় কম হলেও সমস্যা নেই। শুধু প্রয়োজন আল্লাহ তাআলার ওপর ভরসা রেখে জালেমের বিরুদ্ধে কঠিন প্রতিরোধ গড়ে তোলা। ইরশাদ হয়েছে, ‘এমন কত ছোট দলই না রয়েছে, যারা আল্লাহর হুকুমে বড় দলের ওপর জয়যুক্ত হয়েছে! আর আল্লাহ তাদের সাথে রয়েছেন, যারা সবরের পরিচয় দেয়।’ (সুরা বাকারা: ২৪৯)
সুতরাং আল্লাহ তাআলার সাহায্যের প্রতিশ্রুতি যাদের প্রতি রয়েছে, তারা কখনও ভীত হতে পারে না, পরাজিতও হতে পারে না। কেননা আল্লাহ তাআলার সাহায্য যখন শুরু হয়, তখন কাফেরদের সর্বোচ্চ সুরক্ষা দেওয়া দুর্গও ধসে পড়ে। এরকমই এক ঘটনা বর্ণনায় আল্লাহ তাআলা বলছেন, ‘(হে মুসলিমগণ!) তোমরা কল্পনাও করনি, তারা বের হয়ে যাবে। তারাও মনে করেছিল, তাদের দুর্গগুলো তাদেরকে আল্লাহ হতে রক্ষা করবে। অতঃপর আল্লাহ তাদের কাছে এমন দিক থেকে এলেন, যা তারা ধারণাও করতে পারেনি। আল্লাহ তাদের অন্তরে ভীতি সঞ্চার করলেন।.’ (সুরা হাশর: ২)
আপনার মতামত লিখুন :