মঙ্গলবার, ০১ এপ্রিল, ২০২৫
কথা বলতেন আরবিতে

খ্রিস্টান-মুসলিম-ইহুদি সংস্কৃতির মেলবন্ধনে বেড়ে উঠেন যে ইউরোপীয় সম্রাট

ধর্ম ডেস্ক

প্রকাশিত: নভেম্বর ২৫, ২০২৪, ০৩:২৬ পিএম

খ্রিস্টান-মুসলিম-ইহুদি সংস্কৃতির মেলবন্ধনে বেড়ে উঠেন যে ইউরোপীয় সম্রাট

ফাইল ছবি

হোহেনস্টাউফেন রাজবংশের জার্মান রাজা ফ্রেডরিক দ্বিতীয় পরবর্তীতে হলি রোমান সম্রাট, সিসিলির রাজা এবং জেরুজালেমের রাজা হয়েছিলেন। তিনি গোটা ইউরোপের অন্যতম অসাধারণ সম্রাট হিসেবে সুখ্যাতি অর্জন করেন।

১১৯৪ সালের ডিসেম্বরে ইতালির জেসি শহরে জন্ম নেয়া ফ্রেডরিক মধ্যযুগ থেকে রেনেসাঁ যুগে উত্তরণে অন্যতম পথিকৃত ছিলেন। তিনি আরবিসহ একাধারে ছয়টি ভাষা (লাতিন, সিসিলিয়ান, মধ্য জার্মান, ফরাসি, গ্রিক) এবং আরবি জানতেন। এসব ভাষায় তিনি কথা বলতেন। বৈচিত্রপূর্ণ সংস্কৃতি ও একাধিক ধর্মের প্রতি সহনশীলতা দেখাতেন তিনি। তবে সেই সময়কালে এটি ছিল ব্যতিক্রমী গুণ।

ফ্রেডরিক সিসিলির রাজধানী পালারমোতে বড় হয়ে উঠেন। সেখানে তিনি খ্রিস্টান, মুসলিম, এবং ইহুদি সংস্কৃতির এক অসাধারণ মেলবন্ধনে বেড়ে উঠেন। তার শাসনামলে তিনি শিল্প, সংস্কৃতি এবং জ্ঞানচর্চাকে উৎসাহিত করেন। তিনি আরবি ভাষার পাশাপাশি মুসলিম সংস্কৃতি সম্পর্কে গভীর জ্ঞান রাখতেন। আরবি উৎস থেকে শিখে মধ্যযুগের বিখ্যাত গ্রন্থ ‍‍`ডি আর্টি ভেনানডি কাম আভিবাস‍‍` রচনা করেন, যা শিকারি পাখি নিয়ে প্রথম বিজ্ঞানভিত্তিক গ্রন্থ।

পোপের সঙ্গে সংঘাত ও জেরুজালেমের শান্তিপূর্ণ দখল: ফ্রেডরিক পোপদের সঙ্গে বারবার সংঘাতে জড়াতে বাধ্য হয়েছিলেন। কারণ পোপরা তার সাম্রাজ্যকে খ্রিস্টানদের পাপাল স্টেটের জন্য হুমকি মনে করতেন। তবে ১২২৮ সালে, পোপের এক্স-কমিউনিকেশন তোয়াক্কা না করে, তিনি ষষ্ঠ ক্রুসেডে অংশ নেন। তখনকার কায়রোর সুলতান আল-কামিলের সঙ্গে তার আরবি জ্ঞান ও কূটনৈতিক দক্ষতার মাধ্যমে তিনি শান্তিপূর্ণভাবে জেরুজালেম, বেথলেহেম এবং অন্যান্য পবিত্র স্থানগুলোর দখল নেন, যা আগের পাঁচটি ক্রুসেড ব্যর্থ হয়েছিল।

সংস্কৃতি ও ধর্মের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি: ফ্রেডরিক আরব সংস্কৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধাশীল ছিলেন এবং পশ্চিমা সমাজের অসভ্যতামির প্রতি সরাসরি তাচ্ছিল্য প্রকাশ করতেন। তিনি আরব দার্শনিকদের সঙ্গে চিঠি-পত্র বিনিময় করতেন। সেইসঙ্গে দর্শন ও ধর্মতত্ত্ব নিয়ে জ্ঞানগর্ভ আলোচনা করতেন। তার এই বৈচিত্র্যময় ও আধুনিক চিন্তাধারার কারণে সমসাময়িক পোপরা তাকে ‍‍`অ্যান্টিক্রাইস্ট‍‍` আখ্যা দিতে অপচেষ্টা চালাতেন। এদিকে অনেকেই তাকে ‍‍`স্টুপোর মান্ডি‍‍` বা ‍‍`বিশ্বের বিস্ময়‍‍` হিসেবে দেখতেন।

ফ্রেডরিক দ্বিতীয় এমন এক উদারপন্থী শাসক ছিলেন যিনি তার সময়, সমাজ এবং ধর্মীয় গোড়ামিকে পাশ কাটিয়ে অগ্রগামী চিন্তাবিদ ছিলেন। তার সাংস্কৃতিক উদারতা এবং রাজনৈতিক দক্ষতা এবং বিচক্ষণতা বর্তমান বিশ্বে অনুকরণীয় হয়ে থাকবে। সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম সৌদি গেজেটে প্রকাশিত সহকারী অধ্যাপক ড. নাওয়াল এ. আল-জুবাইরের নিবন্ধে এমনসব তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।

আরবি/ এইচএম

Link copied!