ঢাকা শুক্রবার, ০৩ জানুয়ারি, ২০২৫

থার্টিফার্স্ট নাইট সম্পর্কে ইসলাম কি বলে?

ধর্ম ডেস্ক

প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৩১, ২০২৪, ০৫:৫৯ পিএম

থার্টিফার্স্ট নাইট সম্পর্কে ইসলাম কি বলে?

ছবি, সংগৃহীত

ইসলামে থার্টিফার্স্ট নাইট বা নতুন বছরের উদযাপন করার বিষয়ে সরাসরি কোনো নির্দেশনা নেই, তবে ইসলামের সাধারণ নীতি অনুযায়ী, কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠান বা উৎসব পালন করা, যা ইসলামিক শাস্ত্র বা ঐতিহ্যের সঙ্গে মেলে না, তা সাধারণভাবে নিরুৎসাহিত করা হয়।

ইসলামের মূল ভিত্তি হলো আল্লাহর নির্দেশনা এবং রাসূল (সা.)-এর সুন্নাহ অনুসরণ করা। যদি কোনো উৎসব বা অনুষ্ঠান ইসলামের শুদ্ধ পথে চলে না, বা কোনো হারাম কার্যকলাপ যেমন মদপান, অনৈতিক কাজ ইত্যাদি থাকে, তবে সেগুলো ইসলাম মেনে নেয় না।

নতুন বছরের শুরুতে সাধারণভাবে ভালো কাজ করা, দোয়া করা, আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা এবং সমাজে ভালো কাজের জন্য চেষ্টা করা আরও বেশি উপকারী হতে পারে।

তবে, যদি থার্টিফার্স্ট নাইটে কোনো মুসলিম পবিত্র রীতি, সৎ কাজ বা আল্লাহর স্মরণে থাকতে পারেন, তবে তা ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে খারাপ হবে না।

ইসলামে নতুন বছরের রাত (থার্টিফার্স্ট নাইট) পালন করার ব্যাপারে আরও কিছু দিক রয়েছে:

নতুন বছরের রাতের ঐতিহ্য: থার্টিফার্স্ট নাইট মূলত পশ্চিমা সংস্কৃতির অংশ, যা নতুন বছরের শুরুকে উদযাপন করার জন্য বিশেষ অনুষ্ঠান ও পার্টির আয়োজন করা হয়। ইসলাম এই ধরনের সাংস্কৃতিক উদযাপনকে উৎসাহিত করে না, কারণ এটি ইসলামী ঐতিহ্য বা শাস্ত্রের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

বিশেষ দিনগুলোর গুরুত্ব: ইসলামিক ক্যালেন্ডারে যেমন ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহা, আরাফাত দিবস, লাইলাতুল কদর এবং হিজরি নতুন বছরের প্রথম দিন (১ মুহাররম) রয়েছে, যা ইসলামের নির্দিষ্ট উৎসব ও বিশেষ দিন। এসব দিন ইসলামে মর্যাদাপূর্ণ এবং সেগুলোর মধ্যে ইবাদত ও আল্লাহর সান্নিধ্য কামনা করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

নতুন বছরের পরিকল্পনা: ইসলাম মানুষকে নতুন বছর বা যেকোনো নতুন সময়ের সূচনা উপলক্ষে নিজের জীবনকে সংশোধন এবং উন্নতির পথে পরিচালিত করার জন্য উদ্বুদ্ধ করে। রাসূল (সা.) বলেছেন, "যে ব্যক্তি গত বছরের চেয়ে আজ ভালো কাজ করছে, সে সবচেয়ে উত্তম।" (বুখারি)

অন্যের মতো আচরণ থেকে বিরত থাকা: ইসলামে অন্য ধর্মাবলম্বীদের উৎসব বা ঐতিহ্য অনুসরণ করা সমর্থনযোগ্য নয় যদি তা ইসলামের মূল বিশ্বাস ও শাস্ত্রের সাথে অমিল থাকে। এজন্য থার্টিফার্স্ট নাইটের মতো অনুষ্ঠান পালন করা ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে উচিত নয়, কারণ এটি ইসলামের প্রথার বাইরে এবং ইসলামী সমাজের ঐতিহ্য থেকে বিচ্ছিন্ন।

ইবাদত ও দোয়ার গুরুত্ব: ইসলামে কোনও বিশেষ রাত বা দিনটি উদযাপন করার চেয়ে, নতুন বছর বা যেকোনো দিন আল্লাহর কাছে দোয়া করা, তাওবা করা এবং সৎ কাজ করার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া বেশি গুরুত্বপূর্ণ। নতুন বছরের শুরুতে সৎ উদ্দেশ্য, আল্লাহর সাহায্য কামনা এবং জীবনের ভুল-ত্রুটি সংশোধন করার মাধ্যমে আরও উন্নতি লাভ করা উচিত।

আল্লাহর নির্দেশনা ও রাসূল (সা.)-এর সুন্নাহঃ

ইসলাম প্রতিটি কাজের জন্য আল্লাহর নির্দেশনা এবং রাসূল (সা.)-এর সুন্নাহ অনুসরণ করতে উৎসাহিত করে। নতুন বছর উদযাপনের জন্য কোনো বিশেষ ইবাদত বা রীতি ইসলামে নির্ধারিত নেই। রাসূল (সা.) কখনো নতুন বছরের আগমন বা থার্টিফার্স্ট নাইট পালন করতেন না। অতএব, এটি কোনো ইসলামী অনুষ্ঠান বা আমল নয়, বরং পশ্চিমা সংস্কৃতির একটি অনুকরণ, যা মুসলিমদের জন্য অনুসরণীয় নয়।

ঈদ ও অন্যান্য ইসলামী উৎসবঃ

ইসলামে মূল উৎসবগুলো ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহা, আরাফাত দিবস, মেরাজ, লাইলাতুল কদর ইত্যাদি। এসব দিনের বিশেষ ইবাদত যেমন নামাজ, রোজা, দোয়া ও সৎ কাজের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা ও প্রার্থনা করা হয়। নতুন বছরের দিনেও, মুসলমানদের উচিত আল্লাহর সাহায্য কামনা এবং জীবনকে আরও সৎ, ন্যায়পরায়ণ ও আল্লাহর পথে পরিচালিত করার জন্য প্রার্থনা করা।

নতুন বছরকে মুমিনের জন্য একটি সুযোগ হিসেবে দেখাঃ

ইসলাম নতুন বছরের আগমনকে শুধুমাত্র উৎসবের মতো একটি সময় হিসেবে দেখতে নয়, বরং এটি একটি নতুন সুযোগ হিসেবে দেখা উচিত। এটি নিজের তওবা করার, পুরনো ভুলগুলো সংশোধন করার এবং নতুনভাবে আল্লাহর প্রতি আনুগত্যে জীবন পরিচালনা করার একটি সময় হতে পারে। রাসূল (সা.) বলেছেন: "যে ব্যক্তি তার গতকালের চেয়ে আজ ভালো কাজ করেছে, সে সফল।" (বুখারি)।

বিশ্বাসম্প্রদায় ও সাংস্কৃতিক অমিলঃ

থার্টিফার্স্ট নাইট পশ্চিমা সংস্কৃতির একটি অংশ এবং এই ধরনের উৎসবগুলোর সাথে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই। ইসলাম মুসলমানদের অন্য ধর্মের বা সংস্কৃতির অনুকরণ করার থেকে বিরত থাকার উপদেশ দেয়, বিশেষত যখন তা ইসলামী মূল্যবোধের বিপরীত হয়। এ ধরনের অনুষ্ঠানে সাধারণত হারাম কাজ যেমন মদ্যপান, অশ্লীলতা, অশোভন আচরণ এবং অস্বস্তিকর পরিবেশ তৈরি হয়, যা ইসলামি জীবনশৈলীর সঙ্গে বিরোধী।

খারাপ কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকাঃ

থার্টিফার্স্ট নাইটের অনেক অনুষ্ঠানে অশালীনতা, অশালীন পোশাক, মদ্যপান, নাচ-গান ইত্যাদি থাকে, যা ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। মুসলমানদের উচিত এই ধরনের কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকা এবং নিজেদের পরিবার ও সমাজের জন্য উদাহরণস্বরূপ জীবনযাপন করা। ইসলামে উত্তম চরিত্র, পরিস্কারতা, সহানুভূতি ও নিরামিষতা যেমন গুরুত্ব পায়, তেমনি অন্যের প্রতি শ্রদ্ধা ও ইসলামী নীতি অনুসরণের পরামর্শ দেওয়া হয়।

ভাল কাজের প্রচেষ্টাঃ

ইসলামে যে কোনো দিন বা রাতের গুণগত মূল্য তার মধ্যে যে কাজ করা হয় তার ওপর নির্ভর করে। নতুন বছরের শুরুতে সৎ, ধর্মীয়ভাবে সঠিক কাজগুলো করা যেমন বেশি দোয়া করা, কুরআন তিলাওয়াত করা, তওবা করা এবং আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করার জন্য চেষ্টা করা ইসলামি দৃষ্টিকোণ থেকে আরও গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য ইসলাম নতুন বছর উদযাপন না করে বরং মানুষকে ইসলামীভাবে জীবনযাপন করতে ও আরও বেশি আল্লাহর দিকে ফিরে আসতে উৎসাহিত করে।

সমাজের মঙ্গলঃ

একটি ভালো মুসলমান হতে, শুধু ব্যক্তিগত উন্নতি নয়, বরং সমাজের মঙ্গলেও মনোযোগী হওয়া উচিত। নতুন বছরের শুরুতে, মুসলমানদের উচিত সমাজের জন্য উপকারি কাজ করা, মানবতার কল্যাণে ভূমিকা রাখা এবং অন্যদের সাহায্য করা। নববর্ষ উদযাপন বা সামাজিক উৎসবের বদলে, সমাজে শান্তি ও ভালবাসা স্থাপন করা ইসলামের মূল উদ্দেশ্য।

অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়াঃ

নতুন বছরের আগমন একটি সুযোগ, যাতে আমরা আমাদের গত বছরের ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিতে পারি এবং জীবনে সৎ পথে চলার জন্য আরও বেশি সচেতন হতে পারি। এই উপলক্ষে তওবা করা, আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং জীবনে সঠিক লক্ষ্য স্থির করা ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে একটি উত্তম কাজ।

সর্বোপরি আমরা বলতে পারি ইসলামে থার্টিফার্স্ট নাইট বা নতুন বছর উদযাপন করতে নির্দিষ্ট কোন বিধান দেয় না। বরং, মুসলমানদের উচিত আল্লাহর সঙ্গীত এবং সৎ কর্মে আত্মনিবেদন করা। নতুন বছরের শুরুতে ধর্মীয় দায়িত্ব পালন ও সৎ কাজ করার মাধ্যমে একে একটি সঠিক পথে চলার সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করা উচিত।

ইমরান হাসান 
লেখক ও কলামিস্ট
শিক্ষার্থী 
ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়

আরবি/এস

Link copied!