সম্প্রতি আলোচিত শিল্পকলার মহাপরিচালক জামিল আহমেদ সাহেব বাজেট বরাদ্দ নিয়ে যে কথা বলেছেন, সেই বিষয়ে একই সভায় থাকা নজরুল ইনস্টিটিউটের লতিফুল ইসলাম শিবলী তার ভেরিফায়েড ফেসবুকে লিখেছেন- অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব বিনয়ের সঙ্গে বলেছেন, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার বাস্তবতা বিবেচনায় এই বছর বরাদ্দ যা দেওয়া হচ্ছে, তার চেয়ে বেশি এবার সম্ভব নয়।
জামিল সাহেব বেশ কিছু গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী সম্পর্কে। যেহেতু ফারুকীর সঙ্গে আমার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান, আর আমার কাজ-কারবারের অনেকটা অংশ জুড়েই রয়েছে দুর্নীতিবিষয়ক অনুসন্ধান, সে কারণে আমার বন্ধু আসলে কতটা দুর্নীতিবাজে পরিণত হয়েছে, সেটা যাচাই করতে মহাপরিচালক জামিল সাহেবের দাবি অনুযায়ী একটু খোঁজখবর করলাম।
মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে, আর কেন ফারুকী কোনো চিঠি ছাড়াই পেমেন্টের কথা বলেছেন, এমন ঘটনার তলানিতে পৌঁছতে। আসলে জামিল সাহেবের প্রেসাইসলি উল্লেখ করা দরকার ছিল, তার ঠিক কোন কাজ করতে মিনিস্ট্রি বাধা দিয়েছে, তাহলে আর শনিবার ছুটির দিনে আমাকে এতসব ঘাঁটাঘাঁটি করতে হতো না!
যা-ই হোক, শুরুর দিকে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে জামিল সাহেবকে ফোন করা হয়েছিল, যখন বাউলদের ওপর আক্রমণ এসেছে। উপদেষ্টা ফারুকী জানিয়েছেন বাউলদের সাধুমেলার সংখ্যা দ্বিগুণ করতে।
যেটার জন্য মিনিস্ট্রি টাকাও পাঠিয়েছিল বাড়তি। মিনিস্ট্রি তাকে ফোন করে বলেছে তারুণ্যের উৎসব আয়োজন করতে। এই কাজগুলো মিনিস্ট্রি করবেই, কারণ সরকারের কালচারাল পলিসি এক্সিকিউট করার জন্য যে দপ্তর সংস্থাগুলো আছে, শিল্পকলা তার মধ্যে একটা।
মিনিস্ট্রি ওনাকে বলেছে, জুলাই ন্যারেটিভ নির্মাণের জন্য রিমেম্বারিং মুনসুন রেভল্যুশন প্রজেক্ট এক্সিকিউট করতে জামিল আহমেদ প্রথম দিন থেকে অসহযোগিতা করে আসছেন বলে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব জানিয়েছেন। এই প্রজেক্টের যেকোনো ফাইল গেলে বরং উনি সেটাতে অসহযোগিতা করেছেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
মিনিস্ট্রি হস্তক্ষেপ করেছে বিদেশে অপ্রয়োজনীয় এবং সেকেলে অনুষ্ঠান আয়োজনের বিরুদ্ধে! তারা বলেছে, বিদেশে যেকোনো অনুষ্ঠান করতে হলে ডিটেইল প্ল্যান জানাতে হবে। ওই অনুষ্ঠান থেকে বাংলাদেশ কি অ্যাচিভ করতে চায়, সেটার ব্রিফ থাকতে হবে।
জাপানে এ রকম একটা অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল। উপদেষ্টা নোট লিখেছেন, প্রোগ্রাম ডিজাইন আগে পাঠাতে এবং সেটা যেন একটা গোল ওরিয়েন্টেড হয়। এবং গতানুগতিক সরকারি অনুষ্ঠান যেন না হয়।
অগতানুগতিক অনুষ্ঠান বলতে মন্ত্রণালয় কী বোঝাতে চেয়েছে, এটার একটা উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে এই ফেব্রুয়ারিতে ইউনেসকো হেডকোয়ার্টারে করা বাংলাদেশের অনুষ্ঠানটা।
ইউনেসকোর এই অনুষ্ঠান বন্ধ করার জন্য জামিল আহমেদ নানা অসহযোগিতা করেছেন। ছোটখাটো প্রশাসনিক বিলম্বকে উপলক্ষ করে উনি এই অনুষ্ঠানের টাকা ছাড় করতে দেরি করেছেন।
এই অনুষ্ঠানের বরাদ্দ দেওয়ার এখতিয়ার মন্ত্রণালয়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বিভাগ। তারা এই কাজের বরাদ্দকৃত টাকাটা শিল্পকলাকে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়, কিন্তু প্রশাসনিক বিলম্বে সেটা পৌঁছতে দেরি হয়।
প্যারিসের ওই অনুষ্ঠানের পরিচালক তানিম নুরকে টাকাটা দেওয়ার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে তাগাদা দেওয়া হয়, যেটাকে জামিল আহমেদ প্রচার করেছেন- উপদেষ্টা নাকি তার কাছে টাকা চেয়েছেন।
তা উপদেষ্টা কেন টাকা চেয়েছেন, বাসায় বাজার করার জন্য নাকি বউ-বাচ্চা নিয়ে হলিডেতে যাওয়ার জন্য? নাকি তার আগামী সিনেমা বানানোর টাকা নাই, তাই সরকারে থাকতেই দু’হাতে টাকা বানিয়ে নিচ্ছেন, সেসব পরিষ্কার করলে ভালো হতো না জামিল সাহেব?
শিল্পকলার এই মহাপরিচালক সাহেবের টাকা ছাড়ের গরিমসির জন্য ওই অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়া কৌশলীদের নিজ পকেটের টাকাও সরকারি কাজে খরচ করতে হয়েছে।
জুলকারনাইন সায়ের, কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার অনুসন্ধানী সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী। লেখাটি তার ভেরিফায়েড ফেসবুক প্রফাইল থেকে নেওয়া
আপনার মতামত লিখুন :