সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম তাকে নিয়ে একটি স্ট্যাটাস শেয়ার করেছেন। সাদেকুর রহমান খান নামের ওই ব্যক্তির স্ট্যাটাসে সারজিসের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের বিভিন্ন ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে। রূপালী বাংলাদেশের পাঠকদের জন্য পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো।
সার্জিস আলম ছাত্রলীগ করতো না কি করতো, আমি জানি না।
ছাত্রলীগার সার্জিসকে তো ভাই আমি চিনি নাই।
আমি চিনেছি ঐ যে ক্যাম্পাসে বসে পড়া চোখ মুখ লাল করে, আমার ক্যাম্পাস আমি ছাড়বো না, দরকার হলে মইরা যাবো, তাও ক্যাম্পাস ছাড়বো না, সেই সার্জিসকে চিনি।
ছাত্রলীগ করে, মুজিবকে নেতা মানা যদি অপরাধ হয়, হাসিনাকে তাড়াইয়া সেই অপরাধের কাফফারা সার্জিস করেছে।
শুধু সার্জিস না, জুলাই এ ঝাঁকে ঝাঁকে ছাত্রলীগের পোলাপাইন পদত্যাগ করে মাঠে ছিলো। এগুলো আমার নিজের চোখে দেখা। আওয়ামীলীগ ছাত্রলীগ যতই ঘৃণা করি, এই পোলাপাইনের অবদান আমি অন্তত অস্বীকার করবো না।
শেখ মুজিবকে স্বীকার করে ছাত্রলীগ করে, ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করে সেই ছাত্রলীগকে ক্যাম্পাস ছাড়া করা সার্জিস আলমের লজ্জা না। বরং সার্জিস আলমের ক্রেডিট।
রাজনীতিবিদদের এই প্রজ্ঞা থাকতে হয়।
শেখ মুজিবও তো মুসলিম লীগার ছিলেন। শেখ মুজিব মুহাম্মদ আলী জিন্নাহকে কায়েদে আজম ডেকে পাকিস্তান আন্দোলন করে পাকিস্তান এনেছিলেন। সেই মুজিবই পরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সবচে প্রমিনেন্ট ফিগার হিসেবে দাঁড়াইয়া যান। ঘোষণা দেন, এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম।
তখন যদি কেউ আইসা বলতো, মুজিব তো পাকিস্তান জিন্দাবাদ স্লোগান দিয়েছে, জিন্নাহকে কায়েদে আজম ডেকেছে, মুজিব স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার কে?
কেউ বলেনি। কারণ, রাজনীতিতে এইটা ভ্যালিড। রাজনীতি মানে সময়কে ধারণ করা।নিজের ভুলকে ভুল জেনে সেই ভুলের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোই তো সবচে বড় বিপ্লব।
এই বিপ্লবটাই "ছাত্রলীগার" সার্জিসরা করেছিলেন।
সমস্যা হলো,ছাত্রলীগ করেও সার্জিস যেই সাহস, যেই রাগ আর যেই ক্ষোভ নিয়ে ক্যাম্পাসে বসে পড়েছিলেন, সেই সাহস রাজনৈতিক কোন নেতা গত ১৫ বছরে দেখাইতে পারছিলেন?
পারেন নাই তো ভাই। বড় বড় কথা বলে লাভ আছে? আমরা আপনাদের দেখছি না?
২০১৩ তে মার্চ ফর ডেমোক্রেসি দিলেন। ম্যাডাম বের হলেন। কই, একজন নেতাও তো বের হলেন না।রাস্তায় মিছিল না করতে পারতেন, বসে পড়তেন? পারেন নাই তো।
২০২৩ এ ১০ লাখ লোক নিয়ে যাইয়া ২০ মিনিটে চলে আসলেন। সার্জিসের মতো একজন নেতা দেখান তো, যিনি বসে পড়ে বলেছিলেন, যাবো না আমি?
পারেন নাই।
বাংলাদেশের বেশ কিছু রাজনৈতিক দল সেদিন সমাবেশ ডেকেছিলেন। একটা দলের কেউ দাঁড়াতে পারেন নাই।
যদি দাঁড়াতে পারতেন, বাংলাদেশের মানুষ আপনাদের পেছনে থাকতো।
অসহযোগ, এক দফা কোনকিছুই তো সফল করতে পারেন নাই। আপনাদের নেতারা ডাক দিতো। আপনারা সেই ডাক ফেসবুকে শুনতেন।
বাট সার্জিসরা যে কদিন শাট ডাউন বলেছে, শাট ডাউন করে দেখাইছে। আপনারা পারেন নাই।
এইটা রিয়েলিটি।
সার্জিসরা ছাত্রলীগ করতো কেন, এই প্রশ্ন করতে আপনাদের লজ্জা লাগে না? বরং প্রশ্নটা নিজেদের করেন। যে আপনারা কেন ১৭ বছরে হাসিনাকে ফেলতে পারলেন না? কেন ছাত্রলীগ করা সার্জিসদের নেতা মেনেই হাসিনাকে ফেলতে হলো?
৫ আগস্টের পর সার্জিস আলমকে তার নাম ধরেই সমালোচনা করেছি। বিভিন্ন কাজ ভালো লাগে নাই, সমালোচনা করছি। ভবিষ্যতে আরো করবো। সার্জিসদের বিভিন্ন কাজের সমালোচনা আপনিও করেন। ওদের ভুল ধরেন, ধুয়ে দেন। তরুণ মানুষ, বয়স কম, শুধরাক।
বাট ৫ আগস্টের আগের সার্জিস বা হাসনাতদের নিয়ে কোন বিতর্ক করতে আইসেন না। আমরা আপনাদের ডাকে আন্দোলন করি নাই। বাংলাদেশের ছাত্র জনতা আপনাদের ডাকে আন্দোলন করলে সরকার পড়ার কথা ছিলো ২০২৩ এর ২৮ অক্টোবর।
আমরা কোন রাজনৈতিক দলের ডাকে আন্দোলন করি নাই। আপনাদের ডাকে তো আপনাদের কর্মীরাই মাঠে নামে নাই, আমরা কেন নামবো?
আমরা অরাজনৈতিক নেতৃত্বের ডাকেই আন্দোলন করেছি। এখানে অংশগ্রহণ অনেকের ছিলো, বাট আমরা ঐ নাহিদ, সার্জিস, হাসনাতদেরকেই চিনতাম।
ছাত্রলীগ করতো নাকি ছাত্রদল করতো নাকি ছাত্রশিবির করতো, সেইটা জানতে চাইনি। জাস্ট জানতে চেয়েছিলাম, উনারা আমাদের সাথে আছে কি না। এবং উনারা ছিলেন। কোন চাপে পড়ে কোনদিন সমাবেশ স্থগিত করে নাই। পুরো শরীর মাইর নিয়েও পরদিন সমাবেশে এসেছে। ডিবি অফিস থেকে বের হয়ে এক দফার ঘোষণা দিয়ে সরকারের মাথা পাগল করে দিয়েছে।
হাসিনা ৩ তারিখে অসহায়ের মতো বলেছিলো, এক কথা বলে যায় আমার কাছে। যাইয়া উল্টোটা করে। এদের কথার কোন ঠিক নাই।
হাসিনাকে এতো বড় ধোঁকা দেওয়ার সাহস আপনাদের কোন নেতার গত ১৭ বছরে হয়েছিলো? হয় নাই।
এই ৪ টা ছেলের ঐ সাহসটা ছিলো।
এরা আগে কী করেছে জানি না। জানতে চাইও না।শুধু জানি ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত এরা আমাদের ফেলে পালায়নি। ডিবি, আর্মি, বিজিবি, র্যাব বা হাসিনা কারো ভয়েই এরা আন্দোলন স্থগিত করে নাই। আমাদের রেখে পালাইয়া যায় নাই।
আমরা তাদের উপর বিশ্বাস রেখেছিলাম। তারা ৫ আগস্ট পর্য্যন্ত আমাদের সেই বিশ্বাস ভাঙে নাই। এটুকুই তাদের চেনার জন্য আমাদের কাছে যথেষ্ট।
আপনার মতামত লিখুন :