একটি ভিডিও দেখে অবাক হলাম। বিএনপির লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়া, মহড়া দিয়া বাজারের খাজনা আদায় করতাছে। বাজারে মাইক নিয়া ঘোষণা দিতাছে বাজারের খাজনা তাদেরই দিতে হবে। আওয়ামী লীগ বদমাইশ আছিলো কিন্তু চালাক বদমাইশ আছিলো। কিন্তু বিএনপি তো দেখতাছি বেকুপ টু দি পাওয়ার ইনফিনিটি।
এই যে দেখেন, আবার বলছিলাম না ওয়াজের স্টেজে উইঠ্যা আওয়ামী লীগের মতো বেয়াদবি করত বিএনপি। সেই ধারা এখনো চলমান।
সেদিন দেখলাম, ঠাকুরগাঁওয়ের এক বিএনপি নেতা বলতাছে মির্জা ফখরুলের সমালোচনা যদি অযৌক্তিক হয় তাহলে বাড়িঘর থাকবে না। এ কথা বলছে, মতিউর রহমান নামের ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার এক বিএনপি নেতা। এখন প্রশ্ন হচ্ছে যৌক্তিক আর অযৌক্তিক কে ঠিক করবে? বিএনপিই তো ঠিক করবে নাকি? আর অযৌক্তিক হলেই বাড়িঘরে হামলা করবে? রাজনীতি কি সমালোচনা মুক্ত? রাজনীতিতে যৌক্তিক-অযৌক্তিক সব ধরনের সমালোচনাই থাকবে। এরা উপজেলা নেতা। এরা তো শিখে বড় নেতাদের দেখে। ‘আগা হাল যেদিকে যায়, পিছা হাল সেদিকেই যায়’ তাই না?
কিছুদিন আগে বিএনপি নেতা হারুন বলেছিল, ‘ক্ষমতায় থেকে দল গঠন করলে মানুষের পিঠের চামড়া তুলে নেবে।’
কিন্তু ও জানে না, ক্ষমতায় থেকে রাজনৈতিক দল তো খোদ জিয়াউর রহমানই করছে। হারুন যেই দল করে, সেই দলের জন্ম ক্ষমতায় থেকে।
ছাত্ররা কিন্তু স্পষ্টভাবেই বলছে, যে তারা দল গঠন করলে ক্ষমতা ছাইড়া দেবে। তাও এদের ভয় যায় নাই। সমস্যাডা কী? ওরা কি বোঝে না। মানে ছোটবেলায় কি আয়োডিন কম খাইছিল হারুন? নাকি বেশি খাইছিল? বিএনপির নেতাকর্মীরা এত বেপরোয়া হয়ে উঠছে কেন, সেটাই বুঝতে পারছি না। টাকা কামানোর জন্য, অন্যকে হুমকি দেওয়ার জন্য?
এ দখলের উৎসবে মানুষ কিন্তু বিএনপিকে টেম্পোস্ট্যান্ড দল বইল্যা খোটা দেয়।
বিএনপি কেন টাকা কামানোর জন্য মরিয়া:
এর কারণ হইতাছে বিএনপি দল চানালোর জন্য কোনো একটা আর্থিক ব্যবস্থা নাই। এই যে, চাঁদাবাজি আর টেন্ডারবাজির অভিযোগ তার আসল কারণটা কিন্তু এখানেই। এই অভিযোগগুলো যে বিএনপির শত্রুরা বাড়াইয়া বাড়াইয়া বলতাছে, তা কিন্তু না। জামায়াতের ব্যাপারেও কিন্তু চাঁন্দাবাজির অভিযোগ আসে, কিন্তু সেটা বিএনপির মতো ব্যাপক না। কারণ জামায়াতের একটা ইকোনমি আছে। তার কর্মীদের পালার মতো। বিএনপির নেতারা টাকা কামায় কিন্তু টাকার আয়টা তার নিজের। পাচার হয়তো করে না কিন্তু টাকা টা তার নিজের। একটা একটা অংশ হয়তো পার্টিতে চাঁদা দেয়। বড় জোর নির্বাচনের সময় কর্মীদের হাতে কিছু টাকা-পয়সা দেয়। কিন্তু বছরের বাকি সময় কর্মীরা কীভাবে চলবে, সেই ব্যপারে বিএনপির কোনো নজর নাই।
বিএনপির কর্মীরা নিন্মবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়ে। তাদের ভবিষ্যৎ নিয়া বিএনপির নেতাদের ন্যূনতম কোনো ভাবনা আছে বলে মনে হয় না। বিএনপির এই তৃণমূলের কর্মীরা বেশির ভাগই ঘরের খেয়ে বনের মহিষ তাড়ায়। কিন্তু সেটারও তো একটা লিমিট আছে তাই না।
দলের নেতাদের অর্থ বৃদ্ধি, সঙ্গে কর্মীদের উন্নতি এবং দেশের উন্নতি হওয়ার কথা তাই না? কিন্তু বিএনপির নেতাদের মধ্যে সেটা দেখি না। তবে সেটা কিন্তু জামায়াতের মধ্যে দেখা যায়। জামায়াতের বিশাল বিশাল আর্থিক ইনস্টিটিউট আছে। কিন্তু বিএনপির বেলায় সেটা নাই কিন্তু।
বিএনপির ইকোনমিক, কালচারাল, ইন্টিলেকচ্যুয়াল কোনো অ্যাসেট নাই। কর্মী থেকে বুদ্ধিজীবী পর্যন্ত কোথাও প্রফেশনালি এনগেজ হওয়ার ব্যবস্থা নাই। বিএনপির কয়টা প্রতিষ্ঠান আছে যেখানে তাদের কর্মীরা চাকরি পায়? বিএনপির শক্তিশালী শ্রমিক সংগঠন কোথায়?
জামায়াত বিএনপি থেকে ছোট দল। জামায়াতের যে পরিমাণ হাসপাতাল আছে তার তো ১০ গুণ থাকার কথা বিএনপির।
বিএনপির কর্মীরা কেন স্বাভাবিকভাবে জানে না, অমুক প্রতিষ্ঠানে গেলে আমার চাকরি হবে? বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতারা, আপনারা কিছু মনে করবেন না। আপনাদের অসম্মান করার জন্য আমি এটা বলতেছি না। এটা বাস্তবতা। আপনার পেশা কি? আপনার আয়ের উৎস কি? আমি তো কারো বৈধ, প্রকাশ্য কোনো আয়ের উৎস দেখতে পাই না। এটা রাজনীতিতে সবসময় একটা কোশ্চেন মার্ক। বিনা পরিশ্রমে টাকা আয়ের পথ থাকলে দলের কর্মীরা অসৎ কাজে জড়াইয়া পড়ার সুযোগ পাবে। মানে ক্ষমতা আছে কিন্তু কাজ নাই। এ রকম মানুষজন তো বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াবে। তাদের মাথায় শয়তান বাসা বাঁধবে সহজেই। এ জন্য বাংলাদেশের রাজনীতি দাঁড়াইতে পারে না। এই সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে।
যারা শুধু রাজনীতি করে, তাদের এ বাস্তবতা বুঝতে হবে। না হলে কর্মীরা বিএনপির প্রতিপক্ষদের কোলে গিয়া উঠবে। অথবা চাঁদাবাজি মারামারির সংস্কৃতি আরও বাড়বে।
এই যে বিএনপির লোকেরা, কিছু মনে কইরেন না। ওরা যে আওয়ামী লীগের লোকজনের রক্ষা করল, কি জন্য? তারা ওই লোভটা ছাড়তে পারে নাই। টাকা পাইছে, রক্ষা করছে। বিভিন্ন জেলায় আপনারা দেখছেন না, বিএনপির কাঁধে করে আওয়ামী লীগ পুর্নবাসিত হচ্ছে। আওয়ামী লীগকে রক্ষা করছে বিএনপি। কেন রক্ষা করছে? একটা ফিন্যান্সিয়াল ইন্টারেস্ট ছিল। এবং এটা হইছে, নির্দিষ্ট কোনো পেশা না থাকার কারণে।
এর কারণে দেশের ও রাজনীতির ভবিষ্যৎ সংকটে পড়ে। যে কারণে মানুষ রাজনীতি করে, সেটা অর্জনের জন্য বিকল্প পথ দিতে হবে। শক্তিশালী পার্টির ফান্ড তৈরি করতে হবে। বিএনপি চাইলে এইটা করতে পারে। শুধু বিএনপি না, নতুন যারা দল গঠন করতাছে, তারাও চাইলে করতে পারে। উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলো তাদের কর্মীদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করেছে। ইতিহাস ঘাঁটলে তা পাওয়া যাবে।
তবে এ পদ্ধতির একটা বড় অসুবিধা আছে। তা হলো, দলের সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠান যদি আমার আয় রোজগারের উৎস হয়, তাহলে আমি নিজের একক সত্তা নিয়া রাজনৈতিক দলে কোনো ভ‚মিকা রাখার সম্ভাবনা থাকে না, কমে যায়। আমার দলের নেতা যদি আমার বস হয়ে যায়, তাহলে আমি রাজনীতিটাকেও একটা চাকরি মনে করব।
তবে ওই সব প্রতিষ্ঠানে যদি কর্মীদের সাময়িক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যায়। তাহলে এ সমস্যাগুলো সামনে আসবে না। এখানে সে একটা ট্রেনিং প্রিয়ড পার করল আরকি। বিএনপিতে এখন মধুর মাছির আনাগোনা। দলের দুর্দিনে কর্মী পাওয়া যায় হাতে গোনা আর এখন সিনিয়র প্রবীণ নেতারা ধাক্কা খাইয়া মাটিতে পড়ে যায়। এখনই যদি এই অবস্থা হয় তাইলে ক্ষমতায় গেলে কী হবে চিন্তা করেন।
পিনাকী ভট্টাচার্য, অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট
লেখক ও চিকিৎসক।
তার ভিডিও থেকে অনুলিখন
ভিডিওটি তিনি তার অফিসিয়াল ভেরিফায়েড ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করেন।