ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৬ মার্চ, ২০২৫

নতুন রাজনৈতিক দল, বিতর্ক আর বিতর্ক

মোস্তফা ফিরোজ
প্রকাশিত: মার্চ ৬, ২০২৫, ১১:০৬ এএম
মোস্তফা ফিরোজ, সিনিয়র সাংবাদিক ও উপস্থাপক

বিতর্ক আর বিতর্ক। পাঠক, নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতাদের সঙ্গে প্রায়ই অন্যদের বিতর্ক হচ্ছে। যেমন একটা বিতর্ক হান্নান মাসুদকে নিয়ে। তিনি বলেছেন, নুরুল হক নূর তাদের দলে আসতে চেয়েছেন। নুরুল হক নূর আবার পাল্টা জবাব দিয়েছেন। এর মধ্যে তৃতীয় মাত্রার সঞ্চালক জিল্লুর রহমান গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন। 

তিনি বলেছেন, হাসনাত আবদুল্লাহ একটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ধমক দিয়েছেন এবং সেই হাসপাতাল গুঁড়িয়ে দেওয়ার কথা বলেছেন। এবং এ-ও বলেছেন, ৫ আগস্টের পরে তার সঙ্গে সবাই হিসাব করে কথা বলে। এটা একধরনের হুমকি। সে বিষয়ে হাসনাত আব্দুল্লাহ আবার জবাব দিয়েছেন। সংবাদটি গণমাধ্যমেও এসেছে।

সম্প্রতি তৃতীয় মাত্রার সঞ্চালক ও সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডির নির্বাহী পরিচালক সাংবাদিক জিল্লুর রহমানের করা একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত হচ্ছে। ভিডিওতে তিনি বলেন, রাজধানীর একটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ‘ধমকের’ সুরে কথা বলেছেন হাসনাত আব্দুল্লাহ। এমনকি তাদের নানাভাবে হাসপাতাল গুঁড়িয়ে দেওয়ার ‘হুমকি’ পর্যন্ত দিয়েছেন। 

গত সোমবার এ নিয়ে কথা বলেছেন হাসনাত। নিজের ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে হাসনাত বলেন, ‘বাস্তবে এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। তার এই অভিযোগ পুরোপুরি অসত্য এবং জঘন্য মিথ্যাচারের নামান্তর।’  

হাসনাত বলেন, ‘ঘটনার সূত্রপাত হয় গতকাল সকালে। যখন ঢাকাস্থ বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন একটি বাচ্চা মারা যায়। মৃত্যুর আগে চিকিৎসা বাবদ ২ লাখ ২০ হাজার টাকা বিল এসেছে বলে জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সেখান থেকে ১ লাখ টাকা পরিশোধ করে নিহতের পরিবার। বকেয়া থাকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। 

এই টাকা বকেয়া রেখে মৃত বাচ্চার লাশ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করতে অস্বীকৃতি জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তারা জানায়, সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করা ছাড়া লাশ হস্তান্তরের কোনো সুযোগ তাদের নেই। ‘পরবর্তী সময়ে শিশুটির পরিবার ফোনে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করলে আমি মৃতের পরিবারের মোবাইল ফোন থেকেই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করি। 

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে এতটুকুই বলতে চেষ্টা করি যে, টাকা কমানো বা মওকুফ করার এখতিয়ার সম্পূর্ণ আপনাদের। আমি শুধু অনুরোধ করতে পারি। উল্লেখ্য, দিশেহারা নিহতের পরিবার কর্তৃপক্ষের কাছে বিল মওকুফের ব্যাপারে অনুরোধ করার সময় সেখানে হাসপাতালের একজন ডেপুটি ডিরেক্টর উপস্থিত থাকলেও তিনি কোনো রকম সহায়তা করতে অস্বীকৃতি জানান। 

তার সঙ্গে বারবার কথা বলতে চাইলেও তিনি কথা বলতে রাজি হননি।’ তিনি বলেন, ‘কুমিল্লায় অবস্থান করায় সেখানে সশরীরে গিয়ে সহযোগিতা করার সুযোগ আমার ছিল না। তাই আমার পরিচিত দুই ভাইকে আমি হাসপাতালে যাওয়ার জন্য বলি, যাতে তারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে লাশ হস্তান্তরের ব্যাপারে নিহতের পরিবারকে সহযোগিতা করতে পারেন।’ 

তিনি আরও বলেন, “এ বিষয়টিকেই উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ‘আমার কথা না শুনলে লোক পাঠিয়ে হাসপাতাল ভাঙচুর করা হবে’ বলে উপস্থাপন করা হয়, যা স্পষ্টত অন্যায় এবং চরম মিথ্যাচার।”

হাসনাত বলেন, ‘ঘটনার বিস্তারিত জানার জন্য আমি আমার পরিচিত একাধিক সংবাদকর্মীকে ওই হাসপাতালে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করি। দৈনিক মানবজমিন ও যমুনা টেলিভিশনের দুজন প্রতিনিধিকে আমি নিজে ফোন করে এ বিষয়ে অবহিত করি। তৎক্ষণাৎ তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে কর্তৃপক্ষ তাদের বাইরে অপেক্ষা করতে বলে। অপেক্ষার কথা বলে পরে আর কেউই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি, কথাও বলেননি!

এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী সময়ে একজন ব্রিগেডিয়ার আমাকে ফোন করলে আমি তাকে এভাবেই বলি যে, টাকা কমানোর ব্যাপারে আমি মানবিক জায়গা থেকে আপনাদের কাছে অনুরোধ করতে পারি কেবল। সেই অনুরোধ আপনারা বিবেচনা করবেন কি করবেন না, তা একান্তই আপনাদের প্রাতিষ্ঠানিক পলিসিগত সিদ্ধান্ত। 

কিন্তু আপনারা তো আমাদের অনুরোধটাই শুনছেন না। দায়িত্বরত কেউ কথা বলতে রাজি হচ্ছেন না। এরকম অসহযোগিতামূলক আচরণ কি একটা নিহতের পরিবার ডিজার্ভ করে? স্রেফ টাকার জন্য একটা শিশুর লাশ আপনারা আটকে রাখছেন, তার পরিবারের অনুরোধটুকু পর্যন্ত শুনছেন না, এটা কোন ধরনের পেশাদার আচরণের উদাহরণ? ফ্যাসিবাদ-পরবর্তী বাংলাদেশে একজন নিহতের অসহায় পরিবারের সঙ্গে এ ধরনের অমানবিক আচরণ আদৌ গ্রহণযোগ্য কি না? এসব শুনে, তিনি নিজে ব্যাপারটি মীমাংসা করবেন বলে আমাকে আশ্বস্ত করেন।

মূল ঘটনা এ পর্যন্তই। কিন্তু এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে সাংবাদিক জিল্লুর রহমান তার ভিডিওতে যা বলেছেন, তা সম্পূর্ণ বানোয়াট ও ভিত্তিহীন মিথ্যাচার। নিজের পূর্বপরিচিত চিকিৎসকের মনগড়া গল্প শুনে এবং আমার পক্ষ থেকে কোনো ধরনের স্টেটমেন্ট না নিয়েই তিনি যে একপাক্ষিক বয়ান তৈরি করেছেন, তা কোনোভাবেই নিরপেক্ষ সাংবাদিকতার সংজ্ঞায় পড়ে না।’

হাসনাত বলেন, ‘অন্তত জিল্লুর রহমানের মতো একজন নির্ভরযোগ্য সাংবাদিক, যিনি কিনা দীর্ঘ সময় ধরে ফ্যাসিবাদের বিপক্ষে সরব ও শক্ত অবস্থানে ছিলেন, যার মুখ থেকে সত্যকে সত্য ও মিথ্যাকে মিথ্যা হিসেবে উপস্থাপিত হতে দেখে আমরা ফ্যাসিবাদী, খুনি হাসিনাকে উৎখাতের শক্তি ও সাহস পেয়েছি বছরের পর বছর; তার থেকে এমন একপাক্ষিক, ভিত্তিহীন আর বায়াসড বক্তব্য কখনোই প্রত্যাশা করি না আমরা। তার এমন বক্তব্য ও ফলাও প্রচার আমাদের ভীষণভাবে আশাহত করে।

 পূর্বপরিচয়ের সূত্র ধরে কোনো রকম সত্য-মিথ্যা যাচাই না করেই এ ধরনের পক্ষপাতদুষ্ট বক্তব্য সাংবাদিক জিল্লুর রহমানের বস্তুনিষ্ঠতাকে অত্যন্ত বাজেভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করে। ভবিষ্যতে তার যেকোনো বক্তব্যকে নৈর্ব্যক্তিকভাবে গ্রহণ করা যাবে কি না, সেটাও এখন প্রশ্নসাপেক্ষ বিষয়।’
যথেষ্ঠ ক্ষোভ নিয়েই কথাগুলো বলেছেন হাসনাত আব্দুল্লাহ। আমি আসলে জানি না জিল্লুর রহমান উভয় পক্ষের কথা শুনে আলোচনাটা করেছিলেন কি না। করলে অবশ্যই ভালো হতো। তবে হাসনাত আব্দুল্লাহর বক্তব্য, তিনি এক পক্ষের কথা শুনে বয়ান দিয়েছেন। হয়তো হাসনাত আবদুল্লাহর এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে জিল্লুর রহমানও বক্তব্য দেবেন। তখন বিষয়টা পরিষ্কার হবে।
তবে আপাতত আমার কাছে যেটা মনে হচ্ছে তা হলো, এটা বাড়াবাড়ির পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। আর নতুন যেই রাজনৈতিক দল, তারা এত বিতর্কে! এতজনের সঙ্গে নানামুখী বিতর্কে জড়াচ্ছে। এটা ভবিষ্যতের জন্য মোটেও ভালো হচ্ছে না।

মোস্তফা ফিরোজ, সিনিয়র সাংবাদিক ও উপস্থাপক, ভয়েস বাংলা। তার ভিডিও থেকে অনুলিখন