ঢাকা সোমবার, ১০ মার্চ, ২০২৫

জুলাই আন্দোলন

হেলিকপ্টার থেকে গুলি করার প্রমাণ হাজির করলেন দুই সাংবাদিক

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: মার্চ ৮, ২০২৫, ১০:০২ পিএম
প্রতিবেদক জাহিদুল ইসলামের ফেসবুক পোস্ট থেকে নেয়া

জুলাই আন্দোলন দমাতে আন্দোলনকারীদের ওপর হেলিকপ্টার থেকে যে গুলি করা হয়েছে তার প্রমাণ দিয়েছেন দুজন সাংবাদিক।

শনিবার (৮ মার্চ) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পৃথক পোস্টে গুলি করার প্রমাণ তুলে ধরেন তারা।

তাদের একজন একটি ভিডিও চিত্র দিয়ে গুলির প্রমাণ দেন। অন্যজন একটি স্থির চিত্রের মাধ্যমে প্রমাণ হাজির করেন।

তাদের একজন দৈনিক কালবেলা পত্রিকার অনলাইন এডিটর পলাশ মাহমুদ। তিনি একটি ৪৪ সেকেন্ডের ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করেন।

ওই ভিডিওতে দেখা যায়, র‍্যাপিড একশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) এর একটি হেলিকপ্টার আকাশ উড়ছে। আর সেই হেলিকপ্টার থেকে করা হচ্ছে গুলিবর্ষণ।

 

শনিবার (৮ মার্চ) বিকেল ৪টা ৩৭ মিনিটে পলাশ মাহমুদ তার পোস্টে লিখেন, ‘যুদ্ধক্ষেত্র ছাড়া কোথাও এভাবে হেলিকপ্টার থেকে গুলি/বারুদ নিক্ষেপ করতে দেখেছেন?’

‘গত ১৯ জুলাই ঢাকায় ছাত্রদের ওপর এভাবে গুলি/বোমা/গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়েছিল।’

তিনি পোস্টে উল্লেখ করেন, ভিডিওটি ১৯ জুলাইয়ের। ওইদিন বিকাল ৪টা ৩ মিনিটে করা ভিডিও এটি।

পলাশ মাহমুদের পোস্টটি প্রথম চার ঘন্টায় প্রায় দুই হাজার রিয়েক্ট পড়েছে। শেয়ার হয়েছে আড়াইশ’র মতো।

অন্যদিকে একইদিন বিকেল ৪টা ১৫ মিনিটে একটি স্থির চিত্র প্রকাশ করেন ইংরেজি দৈনিক দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড এর প্রতিবেদক জাহিদুল ইসলাম।

তার প্রকাশিত এই ছবিতেও উঠে এসেছে যে, আকাশে উড়ন্ত হেলিকপ্টার থেকে গুলি করা হচ্ছে।

তার ছবিটিও গত ১৯ জুলাইয়ের, ওইদিন সন্ধ্যা ৫ টা ৪০ মিনিট ৩৪ সেকেন্ডে ছবিটি ধারণ করা হয়েছিল।

এটি মিরপুর-১০ এলাকায় হেলিকপ্টার থেকে পুলিশের আক্রমণ বলে জাহিদুল তার পোস্টে লিখেন, ‘জুলাই আন্দোলন দমাতে হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া গুলির একটি প্রমাণ দিলাম...’

ওইদিনের ঘটনার সম্পর্কে তিনি পোস্টে লিখেন, ‘বিকাল ৪:২০ এর পর থেকেই আকাশে হেলিকপ্টারে আনাগোনা বেড়ে যায়। শুরু হয় হেলিকপ্টার থেকে গুলি, সাউন্ড গ্রেনেড এবং টিয়ারগ্যাস ছোড়া। আমরা যে ছাদে অবস্থান করছিলাম ঠিক তার সামনের ছাদেই ফেলা হয় একটি সাউন্ড গ্রেনেড। একদিকে নিচে পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের আক্রমণ অপরদিকে আকাশ থেকে হেলিকপ্টারের আক্রমণে মিরপুর-১০ এলাকা পরিনত হয় রণক্ষেত্রে। ছাদে দাড়িয়ে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম পুলিশ, সেনাবাহিনী (গায়ে UN এর লোগোসহ) ও র‌্যাবের হেলিকপ্টার থেকে আক্রমণ করা হচ্ছে। পুলিশ এবং র‌্যাবের হেলিকপ্টারের দুই পাশের দরজা খোলা ছিলো এবং দরজায় অবস্থান নিয়ে কখনও দাড়িয়ে আবার কখনও বসে অস্র হাতে গুলি ছুড়তে দেখা যায়।’

তিনি আরও লিখেন, ‘রাস্তায় পুলিশ যখন ছাত্রদের কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিল না তখন হেলিকপ্টার থেকে আক্রমণ বাড়িয়ে দেয়। সন্ধার দিকে আমাদের চারিদিকে এতোটাই গোলাগুলি হচ্ছিল যে আমরা ভবনের ছাদে কোনোভাবেই দাড়াতে পারছিলাম না। এরপরেও অনেকটা রিস্ক নিয়ে হেলিকপ্টারের কিছু ছবি এবং ভিডিও ধারণ করেছিলাম। সেদিন পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছিলো কোনো যুদ্ধক্ষেত্রে আছি হয়তো। কিছু সময় ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদেছি এমনটা ভেবে যে, একটি দেশের জনগনের উপর কিভাবে তার রাষ্ট্রীয় বাহিনী গুলি করতে পারে? সেটা আবার হেলিকপ্টার থেকে!’

প্রসঙ্গত, গত ৫ আগস্ট আগস্ট ছাত্রজনতার তুমুল আন্দোলনে ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে ভারত চলে যান ততকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরসঙ্গে টানা ১৬ বছর ক্ষমতা থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। তবে ওই আন্দোলন দমাতে নানাভাবে চেষ্টা চালায় ওই সরকার।

শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার পর একে একে বেরিয়ে আসছে তার আন্দোলন দমানোর নানা অপতৎপরতার চাঞ্চল্যকর তথ্য। তিনি শেষ পর্যন্ত আন্দোলনকারীদের ওপর বলপ্রয়োগের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এমনকি গুলি করার নিদের্শনাও দেন তিনি। কিন্তু থামানো যায়নি সেই আন্দোলন। শত শত মানুষের মৃত্যুর উপর দাঁড়িয়ে গণঅভ্যুত্থানে দেশ ছেড়েছিলেন শেখ হাসিনা।

আন্দোলনে হত্যা ও নির্বিচার গুলির একাধিক বড় অভিযান শেখ হাসিনার নির্দেশ ও তদারকিতে হয়েছে বলে উঠে এসেছে খোদ জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনের প্রতিবেদনেও।

তাছাড়া কদিন পর পরই ফাঁস হচ্ছে শেখ হাসিনার অডিও কল রেকর্ড। যেগুলোতে দলীয় নেতাকর্মীদের আন্দোলন দমাতে নির্দেশ দেওয়ার তথ্য উঠে আসে। এরই ধারাবাহিকতায় নতুন একটি অডিও রেকর্ড ফাঁস হয়েছে। যেখানে উঠে এসেছে আন্দোলন দমাতে শেখ হাসিনার ‘প্রাণ-ঘাতি অস্ত্র ব্যবহার ও হেলিকপ্টার থেকে গুলির নির্দেশনা’।