স্বেচ্ছাচারিতার জবাব একটা সময় ঠিকই দিতে হবে

জুলকারনাইন সায়ের

প্রকাশিত: মার্চ ৯, ২০২৫, ০১:০০ এএম

স্বেচ্ছাচারিতার জবাব একটা সময় ঠিকই দিতে হবে

জুলকারনাইন সায়ের,অনুসন্ধানী সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যেকোনো সরকারের ক্ষেত্রেই মন্ত্রী বা উপদেষ্টা পদ অনেকটা উপঢৌকনের মতো, খুব কম ক্ষেত্রেই যোগ্য ব্যক্তিকে এসব পদে বসানো হয়, সবাই আবু সালেহ মো. মোস্তাফিজুর রহমান, শাহ এএমএস কিবরিয়া বা সাইফুর রহমান হতে পারেন না। 

সব মন্ত্রণালয়ের মূল চালিকাশক্তি আমলা ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। মন্ত্রী/উপদেষ্টা কেবল আনুষ্ঠানিকভাবে পদটি অলংকৃত করেন। মন্ত্রণালয় পরিচালনা করতে আপনার তেমন কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতারও প্রয়োজন নেই, কারণ সব কাজই ওই আমলা-কর্মকর্তাদের সহায়তায় সম্পন্ন হয়।

১৬ বছর স্বৈরশাসনের পর দেশে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হয়েছে। গণতন্ত্রের পথ সুগম করতে গঠিত হয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। প্রফেসর মো. ইউনূস নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তি। 

তাঁর নেতৃত্বে এমন একটি সরকার আমার মতো অনেকেই দেখতে চেয়েছিলেন যে, সরকারে বিগত ১৬ বছরের চরম ভুক্তভোগীদের প্রতিনিধিত্ব থাকবে। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, আমরা এমন কাউকেই দেখতে পাইনি, বরং নেপোটিজমে গ্রাস হয়ে যাওয়া একটা ক‍্যাবিনেট দেখছি। 

এই ক্যাবিনেটে কেন দীর্ঘদিন গুমের শিকার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আযমী, লে. কর্নেল হাসিনুর রহমান, মাইকেল চাকমা অথবা ব্যারিস্টার আরমানের স্থান হলো না? কেন বিগত সরকারের সময় ক্রসফায়ারে নিহত ছাত্র নেতা নুরুল আলম নুরু অথবা নুরুজ্জামান জনির নিকটজনদের বিবেচনা করা হলো না?

 র‍্যাবের গুলিতে পা হারানো লিমনকে মনে আছে? তার কথা কেন আপনারা কেউ একটাবারও ভাবলেন না? ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে গ্রেপ্তার ৯৭ জন ও নির্যাতনে আহত সাংবাদিকদের কেন বেমালুম ভুলে গেলেন? 

বিডিআর হত‍্যাকাণ্ড নিয়ে একটা ফ্যাসিস্ট সরকারের মুখের ওপর কথা বলার কারণে যেসব সামরিক কর্মকর্তারা চাকরিচ‍্যুত হয়েছেন তাদের কাউকে তো রাখতে পারতেন? শাপলা চত্বরে নিহত হেফাজত কর্মীদের কারো পরিবারের একজনকে কি রাখা যেত না? 

এসবের কোনো উত্তর আপনারা দিতে পারবেন না, কারণ ক্ষমতায় বসে আপনারা বেশ কনভেনিয়েনটলি তাঁদের সবার সমষ্টিগত অবদানকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে কেবল নিজের পরিচিতদের সরকারে টেনেছেন। একটু নিজেদের দিকে তাকান। যে চেয়ারে আজ বসে আছেন সেটা সম্ভবত ডিসেম্বরের পর আর আপনার থাকবে না। এই স্বেচ্ছাচারিতার জবাব একটা সময় ঠিকই দিতে হবে।
লেখক: আলজাজিরার অনুসন্ধানী সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী। লেখাটি তার ফেসবুক থেকে নেওয়া।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!