একেবারে প্রথম থেকে বলা যায়, নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপি, তারা প্রথমেই হোঁচট খাচ্ছে। কোনো রাজনৈতিক দলের সমর্থন পাচ্ছে না, কোনো দাবিতেই তারা অটল থাকতে পারছে না অথবা কোনো দাবির পক্ষে রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা পাচ্ছে না। মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা, মানুষের ব্যাপক সমাগম ঘটানো- সেটাও সম্ভব হচ্ছে না। সব মিলিয়ে আস্তে আস্তে কঠিন একটা অবস্থার মধ্যে যাচ্ছে জাতীয় নাগরিক পার্টি।
এমনিতে বড় রাজনৈতিক দল মনে করে, ছাত্রদের এই দল করা, তাদের প্রশাসনে, সরকারে তাদের একটি অংশগ্রহণ- এটা কতখানি সঠিক। এটা ছাত্রসমাজকে ছাত্রত্ব থেকে বা পড়াশোনার দিক থেকে রাজনৈতিক দিকে ডাইভার্ট করা সেটা যুক্তিসংগত কি না।
একসময় ছাত্ররা তাদের অধিকার নিয়ে আন্দোলন করত, যখন জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হতো তখন তারা সেই ইস্যুতে অংশগ্রহণ করত, এখন তারা সেগুলোই নিয়ন্ত্রণ করছে। রাজনৈতিক দলগুলো সাইডে পড়ে যাচ্ছে। এই বিষয়টা একটা সময় পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য ছিল।
৫ আগস্টের পরবর্তী সময় ট্রাফিক কন্ট্রোল করা, ত্রাণ বিতরণ করা সেইগুলো পর্যন্ত সমর্থন ছিল, তারপর আর যায় না। বিভিন্ন তৃণমূল পর্যায়ে বিভিন্ন অফিসে অফিসে হানা দেওয়া শুরু করল, তখন দেখা গেল যে সেখানে বাণিজ্য ঢুকে গেল। এখন কিন্তু তাদের একটা নেগেটিভ অবস্থান তৈরি হয়েছে। এই অবস্থায় তারা আবার দল গঠন করেছে। নাহিদ ইসলাম সরকার থেকে বের হয়ে আসছেন।
একটা নতুন ধারা তৈরির চেষ্টা করছেন, সেই ধারাটা মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য কি না সেটা কিন্তু এখন টেস্ট কেসের মধ্যে আছে। ইতিমধ্যে দেখা যাচ্ছে, রাষ্ট্রপতির অপসারণ, নতুন সংবিধান প্রণয়ন, স্বতন্ত্র কাউন্সিলরদের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ, জুলাই ঘোষণাপত্র, গণপরিষদ নির্বাচন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবি করেছে তারা; কিন্তু কোনো দাবি জুতসই হয়নি, শুধু তারা ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করতে পেরেছে।
ছাত্রলীগ একটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে শেষের দিকে এবং জুলাই-আগস্ট বহু হত্যা ছাত্রলীগের মাধ্যমে সংঘটিত হয়েছে। ছাত্রলীগ যখন অ্যাক্টিভ ছিল; আওয়ামী লীগ আমলে তখনো ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের দাবি উঠেছিল, ছাত্রলীগ দিয়ে কোনো কাজ হচ্ছে না; বরং ওই সরকার বা আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে।
পরে আওয়ামী লীগ নিজেই নেমে গেল গণহত্যায়, দলের নিজের ভাবমূর্তি নেই। অন্য যেকোনো পরিস্থিতিতে এই দলটাই নিষিদ্ধ হয়ে যেত সন্ত্রাসের দায়ে, গণহত্যার দায়ে। এখন নাগরিক পার্টির কী হবে? তারা সর্বশেষ যেই কথাটি বলেছে, গণপরিষদ নির্বাচন ও জাতীয় নির্বাচনÑ অর্থাৎ সংসদ নির্বাচন একসঙ্গে হতে হবে। এ ব্যাপারে বিএনপি সাফ বলেছে, এ ব্যাপারে কোনো জাতীয় ঐক্য হবে না।
জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা ঠিক করবেন সংবিধান কতখানি তারা পাল্টাবেন, কতখানি সংশোধন করবেন নাকি উল্টে দেবেন। সব সিদ্ধান্ত হবে একটা ফ্রেশ ইলেকশনের পর। তার আগে অন্য কোনো নির্বাচন হবে না। তার পাশাপাশিও কোনো নির্বাচন হবে না।
এখন এসব কারণে তারা সেকেন্ড রিপাবলিক, জুলাই ঘোষণা- অনেক কিছু নিয়ে মতানৈক্য রাজনৈতিক দলগুলোর। জামায়াতের অবস্থান হলো ধরি মাছ না ছুঁই পানি, আর বড় রাজনৈতিক দল মনে করছে একেবারে নেগেটিভ- এই নতুন রাজনৈতিক দলের মদদ আছে, সমর্থন আছে; আবার এই রাজনৈতিক দলের একটা পরিণতি বা অবস্থায় যাওয়া পর্যন্ত নির্বাচন পেছানো হবে।
সব মিলিয়ে এমন একটা নেগেটিভ অবস্থা তৈরি হয়েছে, এই জাতীয় নাগরিক পার্টি কীভাবে এগোবে-এই বিষয়গুলো নিয়ে একটা অস্থিরতা বাড়ছে। এই অস্থিরতার কারণে কেউ কেউ এসে আবার ফিরে গেছে, যেমন ভিপি নুরের দল। মুখ থুবড়ে পড়েছে। এ রকম অবস্থায় যদি কোনো অর্জন না দেখাতে পারে, কতখানি এগোতে পারবে বা মুখ থুবড়ে পড়বে তা এখন দেখার বিষয়।
লেখক- সিনিয়র সাংবাদিক ও উপস্থাপক, ভয়েস বাংলা। ভয়েস বাংলার ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত ভিডিও থেকে অনুলিখন
আপনার মতামত লিখুন :