ঢাকা রবিবার, ১৬ মার্চ, ২০২৫

অনেক কিছু বলা সহজ

সারজিস আলম
প্রকাশিত: মার্চ ১৬, ২০২৫, ১১:৪১ এএম
সারজিস আলমের ফেসবুক থেকে

সুযোগ পেলেই আমরা ড. ইউনূসকে শূলে চড়াই, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে প্রশ্নবানে জর্জরিত করি। যেটা না সেটাও বলি। কিন্তু বিগত ৭ মাসে দুই শতাধিক আন্দোলন আর হঠাৎ করে সব ক্ষেত্রে তীব্র বৈষম্য অনুভূত হওয়া জাতিকে নিয়ে তিনি যে কাজগুলো করছেন সেগুলোর জন্য তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোটাও জরুরি। 

১. এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সর্বশেষ ৬ মাসে দেশি-বিদেশি ঋণ পরিশোধ করেছে ৬২ হাজার কোটি টাকা। 

২. দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়ে ১৮.৪৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। যা গত বছরের এই সময়ের তুলনায় ৪ বিলিয়ন বেশি। 

৩. দেশের রিজার্ভ বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ১৪০ কোটি ডলার। 

৪. রমজানে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ার আশংকাকে আশ্চর্যজনকভাবে হ্যান্ডেল করেছে ইন্টেরিম। 

৫. হাসিনা ও তার পরিবারের অ্যাকাউন্ট থেকেই উদ্ধার করেছে ৬৩৫ কোটি টাকা। 

৬. দেশের খাদ্যপণ্যে ভর্তুকি বেড়েছে প্রায় ১২ শতাংশ। 

৭. গত ২২ মাসের তুলনায় সর্বনিম্ন মুদ্রাস্ফীতি হয়েছে এই ফেব্রুয়ারিতে। 

৮. ধর্ষণের তদন্ত ১৫ দিন এবং বিচার ৯০ দিনের মধ্যে করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। 

৯. আওয়ামী আমলে অর্থনৈতিক কেলেঙ্কারির কারণে বাফুফের ওপর ফিফা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। বাফুফের ওপর সে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে ফিফা।

১০. সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩০ থেকে ৩২ করা হয়েছে। 

১১. স্কুলের বইগুলোতে হাসিনার উল্টাপাল্টা সিলেবাস আর পারিবারিক তোষামোদির গল্প বাদ দিয়ে সাজানো গোছানো সিলেবাস দেওয়া হচ্ছে। 

১২. এখন থেকে প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকেরা পাবেন দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড কর্মকর্তার মর্যাদা। ১৩. সর্বশেষ জাতিসংঘের মহাসচিব ৪ দিনের জন্য বাংলাদেশ সফরে এসেছেন। গুতেরেসের সফর এই সরকারের ওয়ার্ল্ডওয়াইড রিকগনিশন বাড়াবে। তা ছাড়া জাতিসংঘ মহাসচিব বলেছেন, আগামী বছর মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিয়ে সেখানে তাদের সাথে ইফতার করতে চান! ভাবতে পারেন?

অনেক কিছু বলা সহজ। গাইলানো সহজ। নির্বাচন দ্রুত চাওয়াও সহজ। হাসিনার রেখে যাওয়া ধ্বজভঙ্গ অর্থনীতিকে যে কারো জন্য এসে ঠিক করতে ঘাম ছুটে যেত। পারত কি না সেটা নিয়েও ঢের সন্দেহ আছে। 

উপরন্তু, অর্থনীতি, দ্রব্যমূল্য, মুদ্রাস্ফীতি ঠিক রাখতে না পারলে ক্ষমতায় আসলেও যে টিকতে মুশকিল হবে, এটা রাজনৈতিক দলগুলো ভালো করেই জানে। ইউনূস সাহেব হয়তো হিমশিম খাচ্ছেন অনেক কিছু করতে। ধ্বজভঙ্গ একটা দেশ আর ব্যক্তি স্বার্থকেন্দ্রিক একটা জাতিকে ঠিক করতে। তারপরও অনেক কিছু করছে এবং করবে।

প্রফেসর ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে আপনি যদি সম্মত না হতেন তাহলে দ্বিতীয় অন্য কোনো ব্যক্তিকে আমরা সেই জায়গায় তখন চিন্তা করতে পারিনি।

আপনার সাথে তুলনা তো নয়ই। বাংলাদেশ অবশ্যই আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবে।

সারজিস আলম, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল), জাতীয় নাগরিক পার্টি। লেখাটি তার ফেসবুক থেকে নেওয়া।