ঢাকা রবিবার, ১৬ মার্চ, ২০২৫

‘আমার সেইদিন সাদিক ভাইকে চেয়ারটা ছেড়ে দেওয়া উচিত হয়নি’

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: মার্চ ১৬, ২০২৫, ০৭:২৭ পিএম
ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের প্রথম সংবাদ সম্মেলনের একটি ছবি ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বইছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। সেই ছবির পেছনের ঘটনা প্রকাশ্যে আনলেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক রিফাত রশীদ। পোস্টে চেয়ার ছেড়ে দেওয়ায় সাদিক কায়েম সেখানে বসতে পেরেছিলেন বলে উল্লেখ করেন। আর সেই চেয়ার ছাড়াটাই উচিত হয়নি বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

রোববার (১৬ মার্চ) সন্ধ্যায় করা ওই পোস্টে রিফাত রশীদ লেখেন, ‘৫ আগস্ট চ্যানেল২৪ অফিসে প্রেস কনফারেন্স শুরুর সময় আমি শুরুতে আসিফ ভাইয়ের পাশে বসেছিলাম। তারপর যখন হাসনাত ভাই আসেন তখন হাসনাত ভাই আমাকে বলেন সরে গিয়ে একটু জায়গা করে দিতে তার জন্য। আমি হাসনাত ভাইয়ের জন্য চেয়ার ছেড়ে দেই এবং বর্তমানে সাদিক কায়েম ভাই যেই চেয়ারে বসা আমি সেখানে ছিলাম।’

তিনি লেখেন, ‘সাংবাদিকেরা তখন চলে এসেছিল সবাই, প্রেস কনফারেন্স শুরুর জন্য তাগাদা দিচ্ছিলো। সাদিক কায়েম ভাই আসিফ ভাইয়ের পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন তখন। উনি হাসনাত ভাইয়ের জায়গায় বসতে চাইছিলেন। এদিকে বিভিন্ন দিক থেকে নানা রকমের নিউজ আসতেছিল যার ফলে আমাদেরকে ইমিডিয়েটলি প্রেস কনফারেন্স শুরু করতে হচ্ছিলো।’

‘তখন নাহিদ ভাই আর আসিফ ভাই আমাকে বলেন, তোর কাছে আমার একটা রিকোয়েস্ট আছে ওইটা একটু রাখতে হবে। তুমি সরে গিয়ে ওনারে একটু বসতে দে নইলে প্রেস কনফারেন্স শুরু করা যাচ্ছে না। উনি দাঁড়িয়ে থাকায় ব্যপারটা দৃষ্টিকটু দেখাচ্ছে। একটু কনসিডার করো। তখন চেয়ারগুলোকে একত্রিত করে আমি সরে গিয়ে সাদিক ভাইকে বসতে দেই (ছবিটা দেখলেই আপনারা বুঝবেন যথেষ্ট চেয়ার ছিলো না)।’

ঐতিহাসিক ছবির ফ্রেম থেকে বাদ পড়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি লেখেন, ‘সাদিক ভাই বসতে চাইছিলেন এবং আমি নিজে কালেক্টিভ স্বার্থে নিজের চেয়ার থেকে সরে গিয়ে তাকে জায়গা করে দেই। পরবর্তীতে শিবিরের একজন নেতা আমাকে বাদ দিয়ে সাদিক কায়েম ভাইকে ফ্রেমে রেখে নিজের ফোনে এই ছবিটা তোলেন। পরবর্তীতে এই তোলা ছবিটাকে সারা বাংলাদেশে তার নিজেদের নেটওয়ার্ক দিয়ে ছড়িয়ে দেয় এবং এটাকে মেইনস্ট্রিম বানান। ফলে এই ঐতিহাসিক ছবির ফ্রেম থেকে আমি এবং আব্দুল হান্নান মাসুদ ভাই-সহ অনেকেই বাদ পরে যাই।’

এরপর এই ঘটনার আগের ঘটনা নিয়ে রিফাত রশীদ লেখেন, ‘আমি সাদিক কায়েম ভাইকে ৫ আগস্টের আগে ব্যক্তিগতভাবে চিনতাম না। অভ্যুত্থান চলাকালে আমরা সবগুলো ছাত্র সংগঠন ও স্টেকহোল্ডারদের সাথে কথা বলেই সিদ্ধান্ত নিতাম। শিবিরের পক্ষ থেকে মিটিং এটেন্ড করতো সালমান এবং সাইমুম নামের দুইজন। আমি এইটুকু জানতাম এটা তাদের ছদ্মনাম এবং শিবিরের প্রতিনিধি। তাদের মূল পরিচয় সম্পর্কে অবগত ছিলাম না আমি।’

‘৫ আগস্টে চ্যানেল২৪ এর অফিসে ওনার সাথে দেখা হওয়ার পর উনি আমাকে জড়িয়ে ধরেন এবং জিজ্ঞেস করেন চিনেছি কি-না। আমি ওনাকে এর আগেও পলিটিক্যাল স্ফেয়ারে দেখেছি, চেহারা পরিচিত ছিল। আমি বলেছিলাম চিনেছি ভাই কিন্তু নামটা মনে আসছে না। তখন পাশ থেকে একজন বললেন সাদিক কায়েম ভাই, ঢাবি শিবিরের সভাপতি। তখন সাদিক ভাই নিজেই বললেন আমি সালমান। তখন আমি আরেকবার ওনাকে জড়িয়ে ধরি।’

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সভাপতির খোঁজ করার কথা উল্লেখ করে তিনি লেখেন, ‘এরপরেই আমি সাব-কনশাসলি ওখানে ছাত্রদলের রাকিব ভাই আর নাসির ভাইকে খুঁজতে থাকি। বিশেষত রাকিব ভাইকে আমি খুঁজছিলাম। পুরো আন্দোলন চলাকালীন সময়ে আমি যেই তিন-চারজন মানুষের সাথে আন্দোলনের পলিসির বাইরে মনখুলে আলাপ করতে পেরেছিলাম তাদের মাঝে রাকিব ভাই একজন (বাকিরা সবাই আমাদের ছাত্রশক্তির সার্কেলের)।’

চেয়ার ছেড়ে দিয়ে অনুশোচনাবোধের কথা উল্লেখ করে রিফাত রশীদ তার পোস্টে লেখেন, ‘সাদিক কায়েম ভাইকে চেয়ার ছাড়ার জন্য আমার আজকের আগে কোনোদিন আফসোস হয়নাই, ওইদিন যদি আমি রাকিব ভাইকে পাইতাম তাহলে আমি নিজে চেয়ার ছেড়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে হলেও রাকিব ভাইকে সম্মান দিতাম।’ 

‘পুরো অভ্যুত্থানে রাকিব-সাদিক ভাইয়ের মতো অন্তত ১০ জন মানুষ আছে যাদের জন্য আমার চেয়ার ছাড়লে আফসোস হতো না। কিন্তু আজকে আমার কেনো যেনো মনে হচ্ছে, আমার সাদিক ভাইয়ের জন্য চেয়ারটা ছেড়ে দেয়া উচিত হয়নি। একটা ছবির একটা ফ্রেমে একজন মানুষের চেহারা থাকলেই সে অভ্যুত্থানের মহানায়ক হবে আর ছবিতে চেহারা না দেখা গেলে তাকে মাইনাস করা হবে এমন রাজনৈতিক ন্যারেটিভ আমি বুঝতাম না, এখনো বুঝিনা আরকি।’