অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা এবং জুলাই আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার লেখা ‘জুলাই: জন্মভূমি অথবা মৃত্যু’ বইটি প্রকাশের পর থেকেই চলছে নানান বিতর্ক।
বইয়ের একটি অংশে গত বছরের ৫ আগস্টে শেখ হাসিনার দেশ ছেড়ে পলায়নের পরে হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলম সেনাবাহিনীর গাড়িতে ক্যান্টনমেন্টে যাচ্ছিলেন বলে উল্লেখ করেন অন্তর্বর্তী আসিফ মাহমুদ। তবে বিষয়টি নাকচ করেছেন হাসনাত আব্দুল্লাহ।
সম্প্রতি বইটি নিয়ে ফের নতুন বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পরে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের একটি ভার্চ্যুয়াল বৈঠক হয়েছিলো। আর এই ভার্চ্যুয়াল বৈঠকে কারা কারা উপস্থিত ছিলেন, তা নিয়েই এই নতুন বির্তক।
ফেসবুকে সাংবাদিক এহসান মাহমুদ এক পোস্টে জানিয়েছেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে ভার্চ্যুয়াল ওই বৈঠকে তিনিও উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ তার ‘জুলাই: জন্মভূমি অথবা মৃত্যু’ বইতে সেই বৈঠকে তার উপস্থিতিসহ আরও অনেকেই এই তালিকা থেকে বাদ পড়েছেন বলে তার অভিযোগ।
তিনি পোস্টে লিখেন, ৫ই আগস্ট ২০২৪ শেখ হাসিনার পতনের পরে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের ভার্চ্যুয়াল বৈঠক হয়েছিলো। বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া তার বইতে লিখেছেন, সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন চারজন। তিনি তার বইতে লিখেছেন- ‘সে বৈঠকে আমি, নাহিদ ভাই, মাহফুজ ভাই ও নাসির ভাই ছিলাম।’ (পৃষ্ঠা ১১৪)
তিনি লেখেন, আসিফ মাহমুদের এই তথ্য অসত্য। আমি এবং আরিফুল ইসলাম আদিব ছাড়াও সেখানে উপস্থিত ছিলেন- নাহিদ ইসলাম, মাহফুজ আলম, নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী, আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, আবু বাকের মজুমদার। এ ছাড়া অনলাইনে যুক্ত ছিলেন- বিএনপি’র কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এ কে এম ওয়াহিদুজ্জামান, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির। এ ছাড়া ভার্চ্যুয়াল সভায় তারেক রহমানের সঙ্গে তার কন্যা জায়মা রহমানও উপস্থিত ছিলেন।
এ পোস্টে তিনি আরও লিখেন, শুরুতেই তারেক রহমান উপস্থিত সকলকে সালাম এবং অভিনন্দন জানান। এরপরেই তিনি তার পাশে বসা কন্যা জায়মা রহমানকে ইঙ্গিত করে উপস্থিত ছাত্র নেতৃবৃন্দকে লক্ষ্য করে বলেন, আজকের এই বিশেষ দিনে আমার মনে হল, আপনাদের কাছাকাছি বয়সের আমার কন্যাকে আপনাদের সামনে হাজির করি এবং পরিচয় করিয়ে দিই। দিনটি বাংলাদেশের মানুষের জন্য ঐতিহাসিক। আপনাদেরসহ দেশবাসীর সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বৈরাচারমুক্ত হয়েছে।
শুরুতে সামান্য স্বাগত বক্তব্যের পরে প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ মিনিটের মতো কথোপকথনের ভিত্তিতে আলোচনা পর্বটি সমাপ্ত হয়। সেখানে স্বৈরাচারমুক্ত হওয়ার পরবর্তী বিশৃংখল সময়ে বাংলাদেশের মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও পরবর্তী সরকার কেমন হতে পারে তা নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা হয়।
তিনি বলেন, চ্যানেল টুয়েন্টিফোরের অফিসের একটি ছোট্ট কক্ষ, যেটি কাঁচের দেয়াল দিয়ে সম্পূর্ণ ঘেরা ছিল, সেখানেই ভার্চ্যুয়াল সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। এ কে এম ওয়াহিদুজ্জামান জুম লিংকটি আমার মোবাইলে প্রেরণ করলে তারপরে একটি ল্যাপটপে সংযুক্ত করে আমরা সবাই ভার্চ্যুয়াল সভাটিতে যুক্ত হই। সভা আয়োজন নিয়ে কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করতে হয়েছিল আমাদের। তাই উপস্থিত অন্যান্য সমন্বয়ক যারা ইতিমধ্যে চ্যানেল ২৪ এর অফিসে এসে জড়ো হচ্ছিলেন, তাদের মধ্য থেকেও অনেকে বাদ পড়েন। মিটিং চলাকালীন আরো দু-একজন পেছনে এসে দাঁড়িয়েছিলেন। সেইসব সমন্বয়ক ও সমন্বয়কদের নাম এই মুহূর্তে আমার মনে পড়ছে না।
তারেক রহমানের সঙ্গে আরও একটি ভার্চ্যুয়াল বৈঠক হয়েছিলো। সেটি হয়েছিল ধানমন্ডির এক বাড়িতে। সরকার গঠনের আগে সেই বাড়িটিতে আমরা সবাই আত্মগোপনে ছিলাম।