ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ০৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সিলেটের কানাইঘাটে একটি অবৈধ সীমান্ত ক্রসিং দিয়ে ভারতে পালানোর চেষ্টাকালে বিজিবির (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) হাতে আটক হন সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী। সম্প্রতি সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে ‘ব্রেকিং নিউজ: কারাগারে সাবেক বিচারপতি মানিকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন সূত্রে বেশকিছু পোস্ট প্রচার করা হয়েছে। তবে তথ্যটি ভুয়া বলে জানিয়েছে তথ্য যাচাইকারী প্রতিষ্ঠান রিউমর স্ক্যানার।
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, কারাগারে বিচারপতি মানিকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধারের খবরটির কোনো সত্যতা নেই বরং, কোনো প্রকার তথ্য প্রমাণ ছাড়াই ওই দাবিটি প্রতিবেদন ও ফেসবুক পোস্ট আকারে প্রচার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে দেখা যায়, ফেসবুকের ওই দাবির কতিপয় পোস্টে একটি ব্লগপোস্টের লিংক সূত্র হিসেবে দেওয়া হয়েছে। রিউমর স্ক্যানারের বিশ্লেষণে sadhinnews247নামের ব্লগস্পটের বিনা মূল্যের ডোমেইনের এই সাইটটি একটি ভূইফোড় সাইট বলে প্রতীয়মান হয়। সাইটে শাহবাগে গণধোলাইয়ের শিকার হয়েছেন হাসনাত আবদুল্লাহ শীর্ষক কথিত দাবির বিষয়ে একটি সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে গত ১৭ মার্চ।
কথিত এই সংবাদে দাবি করা হয়, ‘বাংলাদেশের সাবেক বিচারপতি এ.বি.এম. খায়রুল হক মানিক আর নেই। আজ সন্ধ্যায় কারাগারে তাঁর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। কারা কর্তৃপক্ষের বরাতে জানা গেছে, সন্ধ্যা ৭টা৩০ মিনিটে কারাগারের এক ওয়ার্ডেন রুটিন চেকিংয়ের সময় তাঁর দেহ ঝুলতে দেখেন। পরে কর্তৃপক্ষ দ্রুত তাকে উদ্ধার করে, তবে তখনই তাঁকে মৃত ঘোষণা করা হয়। প্রাথমিকভাবে এটি আত্মহত্যা বলে মনে করা হলেও, অনেকেই তাঁর মৃত্যুকে রহস্যজনক বলে মনে করছেন। তদন্তের জন্য উচ্চপর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।’
প্রতিবেদনটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এতে ব্যক্তির নাম হিসেবে এ.বি.এম. খায়রুল হক মানিক লিখা হয়েছে, কিন্তু সাবেক বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে।
গণমাধ্যম কিংবা সংশ্লিষ্ট কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে আলোচিত দাবির স্বপক্ষে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। সাধারণত, সাবেক বিচারপতি এ এইচ এন শামসুদ্দিন চৌধুরীর মতো আলোচিত ব্যক্তিত্ব মৃত্যুবরণ করলে তা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হতো।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে কারাগারে বিচারপতি মানিকের মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়লে কারা কতৃপক্ষ নিশ্চিত করে এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক সুস্থ আছেন। কারা কতৃপক্ষের বরাতে প্রতিবেদন দেখুন এখানে, এখানে এবং এখানে । পরবর্তীতে তার অসুস্থতা নিয়ে গণমাধ্যমে আর কোন সংবাদ প্রকাশিত হয়নি।
উল্লেখ্য, সে সময় তার মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়লে ফ্যাক্টচেক প্রতিবেদন প্রকাশ করে রিউমর স্ক্যানার। অর্থাৎ, তার বিষয়ে সর্বশেষ প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী তিনি এখন কারাগারে সুস্থ আছেন।
সুতরাং, কারাগার থেকে বিচারপতি মানিকের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে দাবিতে ইন্টারনেটে প্রচারিত তথ্যটি সম্পূর্ণ ভুয়া ও বানোয়াট।
আপনার মতামত লিখুন :