২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনের গাজায় হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। তবে সম্প্রতি এই ভয়াবহতা আরও বৃদ্ধির খবর আসছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে কিছু সুস্পষ্ট দাবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়েছে যেগুলো আগেই মীমাংসিত হয়ে ফ্যাক্টচেক করা হয়েছে। বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে জড়িয়ে প্রচার হওয়া এসব ভুয়া দাবি চলমান সংঘাতের মধ্যে ব্যাপকভাবে নেটিজেনরা প্রচার করছেন বলে লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২৩ সালের অক্টোবরে যখন ফিলিস্তিনিদের মধ্যে হামলার ভয়াবহতা শুরু হয় সে সময়ই বাংলাদেশে প্রচার হতে শুরু করে, ইসরায়েলকে ১০০ কোটি টাকা সহায়তা দিয়েছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বিষয়টি নিয়ে সে সময়ই বিস্তারিত অনুসন্ধান করে রিউমর স্ক্যানার।
অনুসন্ধানে জানা যায়, অনলাইন সংবাদমাধ্যম বাংলা ইনসাইডারের (বর্তমানে বন্ধ) সে বছরের ১৩ অক্টোবরের একটি প্রতিবেদন থেকে আলোচিত দাবিটি ছড়িয়ে পড়ে। ওই প্রতিবেদনে দাবিটির পক্ষে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি বিবৃতির বিষয়ে বলা হলেও ওই মন্ত্রণালয় কর্তৃক সে সময়ে প্রকাশিত কোনো বিবৃতিতে এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। ওই দাবি সম্বলিত কোনো বিবৃতি প্রকাশিত হয়নি বলে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেও রিউমর স্ক্যানারকে নিশ্চিত করা হয়। তা ছাড়া, ইসরায়েলের সাংবাদিক এবং ফ্যাক্টচেকারও এমন কোনো সহায়তার বিষয়ে অবগত নন বলে রিউমর স্ক্যানারকে জানান।
.jpg)
একই সাথে, ইউনূস সেন্টারও বিষয়টি ভুয়া বলে নিশ্চিত করেছে।
সম্প্রতি ফিলিস্তিনিদের ওপর বর্বরতা বৃদ্ধির ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেও তাকে জড়িয়ে এই ভুয়া দাবি ফের ভাইরাল হতে দেখা যাচ্ছে।
ইসরায়েল ইস্যুতে রীতিমতো সংঘবদ্ধ গুজবের শিকার হচ্ছেন ড. ইউনূস।
সম্প্রতি, ‘ইসরায়েলকে মনো সমর্থন দেওয়ায় ড. ইউনূসকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন নেতানিয়াহু’ শীর্ষক শিরোনামে বেসরকারি ইলেকট্রনিক সংবাদমাধ্যম যমুনা টেলিভিশনের ডিজাইন সম্বলিত একটি ফটোকার্ড ইন্টারনেটে প্রচার হচ্ছে। যদিও ফটোকার্ডটিতে তারিখ লেখা রয়েছে ০৩ অক্টোবর, ২০২৪।
মূলত, সে সময়ই এই দাবিটি ছড়ায়। রিউমর স্ক্যানার সে সময়ই বিষয়টি নিয়ে ফ্যাক্টচেক করে জানায়, যমুনা টিভি এমন কোনো সংবাদ বা ফটোকার্ড প্রকাশ করেনি এবং ড. ইউনূসকে ধন্যবাদ জানিয়ে নেতানিয়াহুও কোনো মন্তব্য করেননি। ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় যমুনা টিভির ফেসবুক পেজে প্রচারিত একটি ফটোকার্ড নকল করে আলোচিত ফটোকার্ডটি তৈরি করা হয়েছে। এই দাবিটি সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপটে ফেসবুক এবং এক্সে ফের প্রচার হতে দেখা যাচ্ছে।
গণমাধ্যমের ফটোকার্ড সম্পাদনা করে এই ইস্যুতে পুরোনো আরেকটি ভুয়া দাবিও সম্প্রতি ফের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হচ্ছে। ২০২৩ সালের ৫ অক্টোবর দুদক কার্যালয়ে নিজের বিরুদ্ধে চলা মামলার বিষয়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেদিন ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারের ফেসবুক পেজে তার বক্তব্য নিয়ে একটি ফটোকার্ড প্রকাশিত হয়। ওই ফটোকার্ডে থাকা ড. ইউনূসের বক্তব্য সম্পাদনা করে তিনি “ইসরায়েল তার আত্মরক্ষার অধিকার রাখে।” শীর্ষক মন্তব্য করেছেন দাবিতে প্রচার করা হয়। তবে রিউমর স্ক্যানার সে সময়ই বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানের পর ফ্যাক্টচেক করে জানায়, ড. ইউনূস এমন কোনো মন্তব্য করেননি।
ফ্যাক্টচেক হওয়ার পর ভুয়া এসব দাবি প্রচারকারী সবার কাছে তা না পৌঁছানোর দরুণ এসব ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে থেকে যাচ্ছে। এভাবে পরবর্তীতে ভিন্ন কোনো প্রেক্ষাপটে আবার ছবিগুলো একই দাবিতে প্রচার হচ্ছে৷ তবে এসব ভুয়া ছবি প্রচারকারীদের বড় একটি অংশই বিষয়টি ভুয়া জেনেও অপতথ্য হিসেবে বছর বছর সেগুলো প্রচার করে আসছেন।