সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘ক্রিম আপা’ নামে পরিচিত শারমীন শিলা। দেড় বছর বয়সি কন্যাশিশু এবং ১২ বছর বয়সি ছেলেকে ভিডিও কনটেন্টে ব্যবহার করে ভিউ বাড়ানোর অভিযোগে এবার প্রশাসনের নজরে এসেছেন তিনি ।
শিশুদের মানসিক অত্যাচারের মাধ্যমে এসব কনটেন্ট তৈরির কারণ হিসেবে লিখিত ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে শারমীন শিলার কাছে। সন্তোষজনক ব্যাখ্যা না পাওয়া গেলে প্রচলিত আইনের আওতায় পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও জানা গেছে।
শারমীন শিলা ‘ক্রিম আপা’ নামে পরিচিত। সাভারের বাইপাইল এলাকায় একটি বিউটি পার্লারের মালিক।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের পণ্যের প্রচারের পাশাপাশি তিনি নানা ভিডিও তৈরি করে থাকেন। ফেসবুক ও টিকটকে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি মেয়ের চুলে রাসায়নিক প্রয়োগ, কানে ভারী দুল পরানো, ধমকানো, খাবার কেড়ে নেওয়া এবং মাঝে মাঝে চড় মারার মতো আচরণ করছেন— যা শিশু নির্যাতনের পর্যায়ে পড়ে বলে অভিযোগ উঠেছে। ভিডিওতে তার মেয়েকে প্রায়ই অস্বাভাবিক আচরণের মুখোমুখি হতে দেখা যায়। শারমীন শিলার মেয়ের বয়স দেড় বছর।
মেয়েটির ভয়ভীতির চিহ্ন স্পষ্ট হলেও শিলা এসব আচরণকে নির্যাতন নয়, বরং ভালোবাসা বলে দাবি করেন। ক্যামেরার সামনে তিনি তার ১২ বছর বয়সি ছেলেকেও হাজির করেন।
এ বিষয়ে ‘একাই একশো’ নামের একটি সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কারপ্রাপ্ত সাদাত রহমানসহ আরও কয়েকজন ঢাকা জেলা প্রশাসকের কাছে শারমীন শিলার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ বা স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন। বিষয়টি আমলে নিয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাভারের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সাভারের ইউএনও মো. আবু বকর সরকার বলেন, উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার মাধ্যমে অভিযুক্ত নারীর কাছে লিখিত ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। সন্তোষজনক ব্যাখ্যা না পাওয়া গেলে প্রচলিত আইনের আওতায় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
শিশু সুরক্ষাবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘সেভ দ্য চিলড্রেন’-এর পরিচালক আবদুল্লা আল মামুন বলেন, এসব ভিডিওতে স্পষ্টতই শিশুর সঙ্গে আচরণে নির্যাতনের উপাদান রয়েছে। যদিও এটা সরাসরি নির্যাতন হিসেবে প্রমাণ কঠিন, তবে নৈতিকভাবে এটি অনুচিত। শিশুর বিকাশের ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
সাদাত রহমান বলেন, অনলাইন প্ল্যাটফর্মে শিশুদের ব্যবহারের বিষয়ে একটি নীতিমালা তৈরি করা জরুরি। শিশুদের শৈশব রক্ষায় এবং অনলাইনে ভিউ বা মুনাফার জন্য যেন তাদের ব্যবহার না করা হয়, সে বিষয়ে সরকারকে আইনগত পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে ভবিষ্যতে আরও অভিভাবক এ ধরনের কর্মকাণ্ডে উৎসাহিত হতে পারেন।
অভিযোগের বিষয়ে শারমীন শিলা বলেন, তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। তিনি সন্তানের কলিজার টুকরা বলে উল্লেখ করে দাবি করেন, কোনো নির্যাতন তিনি করেননি। যদিও অতীতেও তার বিরুদ্ধে এমন আচরণের অভিযোগ উঠেছে এবং একাধিকবার ভিডিও প্রকাশের পর তা মুছে ফেলেছেন।
আপনার মতামত লিখুন :