ঢাকা শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৫

‘ঢকঢক করে পানি খাচ্ছি, আর প্যালেস্টাইনে শিশুরা পানির অভাবে মরছে’

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: এপ্রিল ১০, ২০২৫, ০৬:১৪ পিএম

কর্মদক্ষতা, উপস্থাপনা শৈলী ও যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে যিনি ইতোমধ্যে মানুষের মন জয় করেছেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন। গতকাল বুধবার বিনিয়োগ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি একটি প্রেজেন্টেশন দিয়েছেন।

তথ্যবহুল ও সাবলীল ভাষায় দেশের সম্ভাবনাময়ী খাতগুলো তুলে ধরার সেই ভিডিও ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। প্রেজেন্টেশনের সেই ভিডিও শেয়ার করে অনেকেই তার ভূয়সী প্রশংসা করছেন।

এর পরই তার বেশ কিছু ফেসবুক স্ট্যাটাস ভাইরাল হয়েছে। তার মধ্যে একটি ২০২৪ সালে তার হজের সময় করা। ওই পোস্টে হজে ফিলিস্তিনের জন্য দোয়া করা ও ফিলিস্তিনি শিশুদের বিশুদ্ধ পানির অভাবে নির্মম মৃত্যু নিয়ে অনুশোচনা প্রকাশ করেন। সেবার হজে তার স্ত্রী নন্দিনীও ছিল।

ফিলিস্তিন নিয়ে তিনি লিখেন, ‘প্যালেস্টাইনের জন্য আলাদা করে অনেক দোয়া করলাম। আমি ঢকঢক করে আনলিমিটেড জমজমের পানি খাচ্ছি, আর প্যালেস্টাইনে ছোট্ট বাচ্চারা জাস্ট বিশুদ্ধ পানির অভাবে মারা যাচ্ছে। আমি জানি আমি নিজেই এই ব্যাপারে যথেষ্ট করছি না। আমাকে এর জবাব হয়তো একদিন দিতে হবে। আল্লাহ আমাদের হজ্ব কবুল করুন।’

যারা হজ করেনি তাদের উদ্দেশ্যে বিশেষ বার্তা দেন বিডা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, হজের জন্য আমি রেডি ছিলাম না। আল্লাহর ঘরে যাবার জন্য যেই মিনিমাম স্ট্যান্ডার্ডের মুসলিম হওয়া লাগে ঐটা ডেফিনেটলি আমি না। হজ শেষ করে আমার এপিফ্যানি হচ্ছে রেডি হবার দরকার নাই। হজ একটা জার্নির মতো। আমরা একেকজন একেক স্টার্টিং পয়েন্ট থেকে সেই জার্নিটা শুরু করছি। যার যার রানওয়ে আর ডেস্টিনেশন আলাদা। যেমন আমি আগে কখনও কাবা দেখিনি। যারা এখনো দেখেননি তাদের আমার রীতিমত হিংসা হচ্ছে। প্রথমবার সামনাসামনি কাবা দেখার ফিলিংসটা লিখে বুঝানো সম্ভব না।’

এছাড়া বিভিন্ন সময় বন্ধু আসিফ সিবগাত ভূইয়ার সঙ্গে তার বিতর্কের বিষয়টিও তুলে ধরেছেন আশিক চৌধুরী। তিনি লেখেন, আমাদের স্পিরিচুয়াল লিডার ছিল আমার বন্ধু আসিফ। ট্র্যাডিশনাল সেন্সে হুজুর বলতে আমরা যা বুঝি আসিফ ঠিক সেটা না। আইবিএ, সেন্ট জোসেফ থেকে গ্র্যাজুয়েট করা পরিষ্কার মাথার একজন মানুষ। ফেসবুকে আসিফের লেখা পড়লেই বুঝতে পারবেন।

“ও আমাদের একদম শুরু থেকে একটা ইসলামিক রিফ্রেশার দিয়েছে: ফ্রম ঈমান, টু নামাজ টু অল দা ওয়ে হজ। আমার ইসলাম ছোটবেলায় স্কুলের ধর্ম শিক্ষা বই আর বাসার হুজুর এর কাছ থেকে শিখা। কিন্তু এবারের শিখাটা একদম অন্যরকম। অনেক ইন্টারেষ্টিং প্রশ্ন নিয়ে ডিবেট হলো। যেমন, ‘কেনো ইসলামে (যেখানে আল্লাহর কাছে গরীব ধনী সবাই সমান) এমন একটা পিলার (হজ) করা হলো যেটা শুধু ধনীরাই এফোর্ড করতে পারে?’”

২০২৪ সালের ১২ সেপ্টেম্বর আশিক চৌধুরীকে অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের সঙ্গে কর্মসম্পর্ক পরিত্যাগের শর্তে সিনিয়র সচিব পদমর্যাদায় বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। গত ৭ এপ্রিল তাকে প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।

এদিকে নিয়োগের বিষয়ে গত বছরের ৬ নভেম্বর আশিক চৌধুরী নিজের ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, সরকারি চাকরির আজকে এক মাস হলো। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি এক দুপুরে প্রফেসর ইউনূস হঠাৎ ফোন করে বললেন, ‘আশিক, দেশের মানুষের সেবা করার সুযোগ পাওয়া গেছে। আসবা নাকি?’ আমি নন্দিনীকে জিজ্ঞেস না করেই রাজি হয়ে গেলাম। জানতাম ও কোনো দিন মানা করবে না। সো ৫৯ সেকেন্ডের এক হোয়াটসঅ্যাপ কলে আমরা সিঙ্গাপুরের বিলাসী জীবন ছেড়ে-ছুড়ে দেশের পথে রওনা দিলাম বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে, বন্ধুদের ভাষায় বাংলাদেশের চিফ মার্কেটিং অফিসার হিসেবে।

জানা গেছে, চাঁদপুরে বাড়ি হলেও বাবার চাকরির সুবাদে আশিকের বেড়ে ওঠা যশোরে। স্কুল-কলেজের পাট চুকিয়েছেন সিলেট ক্যাডেট কলেজে। এইচএসসি পাস করে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটে (আইবিএ)। ২০০৭ সালে স্নাতক শেষেই যোগ দেন দেশের বেসরকারি একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে। ছুটিছাটায় ছুটে যেতেন রোমাঞ্চের টানে।

২০১১ সাল পর্যন্ত এই প্রতিষ্ঠানেই চাকরি করেছেন। তারপর পড়তে যান যুক্তরাজ্যে। তখন থেকে সেখানেই তিনি নিজেকে নতুনভাবে গড়েছেন। এই আশিক চৌধুরী একজন স্কাইডাইভার। যিনি ৪১ হাজার ফুট উঁচু থেকে দেশের লাল-সবুজের পতাকা নিয়ে লাফ দেন। যার কারণে তিনি ইতোমধ্যে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস বুকে নাম লিখিয়েছেন।