অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বার বার সংস্কারের কথা বলছে জানিয়ে গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদ সদস্য ও গণমাধ্যম সমন্বায়ক আবু হানিফ বলেছেন, ‘তারা গণহত্যার বিচার ও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করে কীসের সংস্কার করছে, এটা জনগণের প্রশ্ন।’
তিনি বলেন, ‘এ সরকারের প্রথম এবং প্রধান কাজ হলো—গণহত্যার বিচার ও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা। এটাই হবে বড় সংস্কার।’
সংস্কারের নামে টালবাহানা না করে দ্রুত সময়ের ভিতরে গণহত্যার বিচার ও আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি আবু হানিফ বলেন, ‘জুলাই মঞ্চ গত দুই মাস থেকে শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে গণহত্যার বিচারের দাবিতে। সবার প্রতি আহ্বান, আপনারা গণহত্যার বিচারের দাবিতে সোচ্চার হোন।’
শনিবার (১৯ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে চারটার দিকে যাত্রাবাড়ী থানার সামনে অনুষ্ঠিত জুলাই মঞ্চের ৫ম ও শেষ শহীদি মার্চে তিনি এসব কথা বলেন।
জুলাই মঞ্চের শহীদি মার্চে সংহতি আবু হানিফ বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে এই যাত্রাবাড়ী এলাকার মানুষের যে ভূমিকা ছিলো তা অনস্বীকার্য। এই এলাকার মানুষ বুলেটের সামনে জীবনের মায়া ত্যাগ করে তারা হাসিনার পতন নিশ্চিত করেছে। ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ নিতে পারলেও যাত্রাবাড়ী এলাকা নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে নাই। এই এলাকায় আওয়ামী প্রশাসন সবচেয়ে বেশি হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘যাত্রাবাড়ির হত্যায় জড়িতরা অনেকে আটক হয়নি। সরকারের নমনীয়তা এবং সরকারের ভিতর থেকে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা চলছে, কেননা এই সরকার যাদের জীবনের বিনিময়ে ক্ষমতায় বসেছে তারা সেই শহীদদের রক্তের সাথে বেঈমানি করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গণহত্যার বিচার ও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গণহত্যায় জড়িতরা রাস্তায় নামছে। প্রশাসনে থাকা আওয়ামী দুর্বৃত্তরা বর্তমানে আওয়ামী লীগকে রাস্তায় নামার সুযোগ করে দিচ্ছে।’
জুলাই মঞ্চের প্রতিনিধি সাকিব হোসেন বলেন, ‘বর্তমান প্রশাসনে গণহত্যায় জড়িত বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের চাকরি এখনো বহাল রয়েছে। অধিকাংশকেই এখনো গ্রেফতার করা হয়নি। গণহত্যার মামলাগুলোর কার্যক্রম এগোচ্ছে না।’
গণহত্যার শিকার শহিদ পরিবারেরা বিচার নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন অবস্থায় রয়েছে৷ তারা মনে করছে, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চলে গেলে তারা আর বিচার পাবেনা। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম এখনো আশাব্যঞ্জক অবস্থায় পৌঁছায়নি।’
জুলাই মঞ্চের অন্যতম প্রতনিধি আরিফুল ইসলাম তালুকদার বলেন, ‘৫৩ বছর থেকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গণে যে দুর্বৃত্তায়ন গড়ে উঠেছে, ২৪ এর বিপ্লব তারও বিরুদ্ধে বড় একটা বার্তা। অথচ রাষ্ট্রে সে সকল সমস্যা রেখে এখন কেবল অতীতের মতই একটা নির্বাচনের জন্য সকলে উঠে পড়ে লেগেছে।’
আরেক প্রতিনিধি অর্নব হোসাইন বলেন, ‘আমরা দেখতে পেয়েছি, ডিএমপি কমিশনার অফিস থেকে গত ৯ এপ্রিল একটা প্রজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে সকল থানায়। যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, জুলাই অভ্যুত্থানের হত্যা মামলার আসামিদের ধরার আগে কমিশনার অফিসে অবহিত করতে।’
‘আমরা ডিএমপি কমিশনার অফিস থেকে আসা এই ধরনের কাজকে ফ্যাসিবাদের পাহারাদার হিসেবে দেখছি। এই প্রজ্ঞাপনের পরে ১৭ এপ্রিল আওয়ামী লীগ যাত্রাবাড়ী এলাকায় ঝটিকা মিছিল করেছে। এর থেকে প্রমাণিত হয় আওয়ামী লীগ এখনো তাদের ‘কিলিং মিশন’ আবারও বাস্তবায়ন করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ’, তিনি বলেন।