ঢাকা শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪
পোশাক কারখানায় অসন্তোষ

চাঁদাবাজির কারণে ঝুঁকির মুখে না.গঞ্জের পোশাকশিল্প

সুলতান মেহেদী

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৫, ২০২৪, ০১:৩০ পিএম

চাঁদাবাজির কারণে ঝুঁকির মুখে না.গঞ্জের পোশাকশিল্প

ফাইল ছবি

ঢাকা: আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মানুষ আশা করেছিল দেশে স্বস্তি ফিরবে। কিন্তু সেই স্বস্তি অনেকটাই ফিকে হতে শুর” করেছে। বিশেষ করে দেশে তৈরি পোশাক কারখানাগুলোতে একের পর এক অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। এসব অসন্তোষের পেছনে শ্রমিকদের বেতন বৈষম্য, ক্ষোভ আগে থেকে থাকলেও এখন বিশৃঙ্খলার মাত্রাটা বেশি দেখা দিয়েছে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সাভার-আশুলিয়া এবং নারায়ণগঞ্জের শিল্পাঞ্চলে নৈরাজ্য হয়েছে। রাজনৈতিক দলের আড়ালে বিশেষ স্বার্থান্বেষী মহলের ব্যক্তিগত লাভের কাছে হারতে বসে তৈরি পোশাকের মতো দেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানিমুখী খাত। এতে ঝুঁকির মুখে পড়েছে লাখো মানুষের কর্মসংস্থান।

দেশের তৈরি পোশাক খাতে অস্থিরতার পেছনে অনুসন্ধানে একাধিক কারণ চিহ্নিত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- ঝুট ব্যবসা দখল নিয়ে দ্বন্দ্ব, মালিকানার সমস্যা, শ্রমিকদের বকেয়া পাওনা, কোনো কোনো জায়গায় বহিরাগতদের উস্কানি এবং শ্রমিকদের নতুন কিছু দাবি-দাওয়া।

বাংলাদেশ ন্যাশনাল লেবার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মরিয়ম আক্তারের মতে, শ্রমিক অসন্তোষ সৃষ্টির নেপথ্যে বহিরাগত একটা প্রভাব কাজ করেছে। তিনি গণমাধ্যমকে জানান, ঝুট ব্যবসা নিয়ে একটা সমস্যা; আগে যারা ছিল তাদের জায়গায় নতুন লোকজন এই ব্যবসা নিতে চায়। এছাড়া কিছু বহিরাগত সমস্যা ছিল। আর আন্তর্জাতিক কিছুটা চাপ থাকেই। তারা চায় আমাদের দেশ থেকে এই শিল্পটা আরেক দেশে যেন চলে যায়।

সাভার-আশুলিয়া-গাজীপুর এলাকায় প্রায় ৪১৭টি পোশাক কারখানা দীর্ঘদিন অস্থিরতার কারণে বন্ধ থেকেছে। একইভাবে অস্বাভাবিক পরিস্থতি বিরাজ করেছে নারায়ণগঞ্জ শিল্পাঞ্চলে। তৈরি পোশাক খাতে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী মহলটি তাদের রাজনৈতিক প্রভাবও কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে। এ বিষয়ে একটি জাতীয় দৈনিক বিস্তারিত প্রতিবেদনও প্রকাশ করে। সেখানে দেখা যায়, ৫ আগস্ট পটপরিবর্তনের পর বিএনপির কেন্দ্রীয় ও মাঠপর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ অনেক নেতার বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ ওঠে। এর মধ্যে অনেকের বিরুদ্ধে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তবে নারায়ণগঞ্জ শিল্পাঞ্চলে অভিযুক্তদের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত নাম বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদ। তার বির”দ্ধে নারায়ণগঞ্জে রপ্তানিমুখী পোশাক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ফকির গ্রুপের কাছ থেকে সুবিধা দাবি করার অভিযোগ উঠেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে নারায়ণগঞ্জে কমপক্ষে ১৫টি কারখানা ও টেক্সটাইল মিলে তালা দিয়ে জোরপূর্বক চাঁদা আদায় করা হয়। এসব কারখানার মধ্যে রয়েছে তৈরি পোশাক কারখানা, টেক্সটাইল মিল; এমনকি বাদ যায়নি সুতা কারখানাও। ওই নেতা দলের প্রভাব খাটিয়ে নারায়ণগঞ্জে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে চেষ্টা করছেন। নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার দুপ্তারা ইউনিয়নে অবস্থিত ওই কারখানার মালিক জানান, চাঁদার টাকা দিয়ে আপাতত নিজের কারখানা রক্ষা করেছেন তিনি।

শুধু নারায়ণগঞ্জ নয়, ওই বিএনপি নেতাকে নিয়ে তার নিজের দল বিএনপির নারায়ণগঞ্জের নেতাকর্মীরাও দ্বিধাগ্রস্ত। বিএনপির মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের কাছ থেকে জানা যায়, দলের ভেতরেও নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানাভাবে প্রভাব বিস্তার তৈরির চেষ্টা করেছেন আজাদ। তিনি নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদকের পদ পাইয়ে দেওয়ার টোপ ফেলে আজহারুল ইসলাম মান্নানের কাছ থেকে চেকে ১০ লাখ টাকা আদায় করেন। পরে সেই চেকের ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়ে পড়ে। 

কথিত চাঁদা এবং সুযোগ-সুবিধা না দেওয়ার অসম্মতিতে ওই বিএনপি নেতা আজাদের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হন ফকির নিটওয়্যারস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ফকির আখতারুজ্জামান, ফকির ফ্যাশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ফকির কামরুজ্জামান নাহিদ এবং উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফকির মাশরিকুজ্জামান নিয়াজ এবং পরিচালক ফকির মাশরিকুজ্জামান নিয়াজ। 

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সুযোগে জুন মাসে সংঘটিত একটি নিহতের ঘটনা আগস্ট মাসে দেখিয়ে স্বনামধন্য ব্যবসায়ী ফকির  আখতারুজ্জামানের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। এ বিষয়ে ফকির গ্রুপের জেনারেল ম্যানেজার সুমন কান্তি সিংহ বলেন, ফকির নিটওয়্যার ৩ দশকেরও বেশি সময় ধরে সুনামের সাথে পোশাক রপ্তানি করে আসছে। নারায়ণগঞ্জ শিল্পাঞ্চলে গেলো অর্থবছরের সর্বোচ্চ করদাতাদের মধ্যে এই শিল্পগোষ্ঠী অন্যতম। 

ব্যবসা ও অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন এমন একজন সিআইপিকে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সুযোগে হত্যামামলার আসামি করা এবং অন্যান্য পরিচালকবৃন্দের সুনাম নষ্ট করা দেশের ব্যবসায়ীদের জন্য অনেক বড় অশনি সংকেত। সরকারের উচিত তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য শিল্পকে সুরক্ষা দিতে বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করা; দেশের ব্যবসা ও অর্থনীতি রক্ষা করা। এসব সুযোগ সন্ধানীরা রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙিয়ে দেশ ও দেশের মানুষের ক্ষতি করার চেষ্টা করছে। এসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সচেতন থাকা উচিত।

যদিও গণমাধ্যমকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখর”ল ইসলাম স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন, অভিযোগ এলেই তারা ব্যবস্থা নিচ্ছেন। কোনোপ্রকার দুর্বৃত্তায়ন চলবে না। অপরাধ করলে মেনে নেয়া হবে না। অথচ আজাদের মতো আরও অনেকের বির”দ্ধে অভিযোগের স্তূপ থাকার পরও দলীয় পদের জোরে প্রভাব খাটিয়ে যাচ্ছেন।

এসব বিষয়ে স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, জেলা প্রশাসক, এমনকি প্রধান উপদেষ্টা বরাবর লিখিত অভিযোগ জানানো হয়েছে। এসব অভিযোগের বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি নেতা ও দলটির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। 
 

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!